চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন দিপ্তী (৩৭)। তিনি উপজেলার বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে চট্টগ্রাম শহর থেকে মালামাল নিয়ে যেতেন। এটাই তার পেশা ছিল। একদিন বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নেওয়া ১৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করতে সাজান অপহরণের নাটক। তবে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে একপর্যায়ে নিজের অপকর্মের কথা স্বীকার করেন দেলোয়ার। এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ দায়ের না করায় এবং অভিযুক্ত ব্যক্তি অনুতপ্ত হওয়ায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। 

ডিবি সূত্রে জানা যায়, গত ১ মে সন্দ্বীপের উড়িরচর থেকে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মালামাল কেনার জন্য ১৫ লাখ টাকা নিয়ে নগরের পতেঙ্গা থানার ১৫ নম্বর ঘাটে নামেন দেলোয়ার। এরপর তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। এ ঘটনায় দেলোয়ারের ভাই আলতাফ হোসেন পতেঙ্গা থানায় নিখোঁজের জিডি  করেন। একই সঙ্গে ডিবির বন্দর জোনের উপ-কমিশনারের কাছে একটি অভিযোগ জমা দেন।

অভিযোগ পেয়ে ঘটনা তদন্তে নামে ডিবির একটি বিশেষ টিম। তারা প্রথমে ১৫ নম্বর ঘাট এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেন। ওই ফুটেজে ঘটনার দিন সেখানে দেলোয়ারের উপস্থিতি দেখা যায়। এরপর তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় জানা যায় ইপিজেড থানা এলাকায় এসে দেলোয়ারের মোবাইলটি বন্ধ হয়ে যায়। তবে হাল না ছেড়ে তদন্ত অব্যাহত রাখে ডিবি। তাকে উদ্ধারে প্রয়োগ করে সকল কৌশল। কিন্তু তার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছিল না। 

এদিকে, গত ৪ মে হঠাৎ খবর আসে দেলোয়ার বাসায় ফিরেছে। এলাকার লোকজনকে তিনি জানান, তাকে পতেঙ্গা ঘাট এলাকা থেকে অপহরণ করে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে গেছে অপহরণকারীরা। একপর্যায়ে তাকে ফেনীর মহিপাল এলাকায় চোখ বেঁধে ফেলা দেওয়া হয়। এমন ঘটনা শুনে রহস্য উন্মোচনের জন্য শনিবার (৬ মে) সকালে দেলোয়ারকে ডাকা হয় ডিবি কার্যালয়ে। 

ডিবির বন্দর জোনের উপ-কমিশনার আলী হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বন্দর জোনের কার্যালয়ে এসেই অপহরণের বিষয়ে নানা অসংলগ্ন কথা বলেন দেলোয়ার। বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হলে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়। একপর্যায়ে স্বীকার করেন টাকা আত্মসাৎ করতে তিনি নিজেই অপহরণের নাটক সাজিয়েছেন। মূলত অপহরণ নাটকের পরিকল্পনা তিনি সন্দ্বীপে থাকতে করেছেন। বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নেওয়া টাকার বেশিরভাগই নিজ বাড়ি ও আত্মীয়-স্বজনের কাছে রেখে আসেন এবং মাত্র আড়াই লাখ টাকা সঙ্গে নিয়ে আসেন।

এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, অপহরণ নাটক কার্যকর করার জন্য ইপিজেড এলাকায় দেলোয়ার তার ব্যবহৃত মোবাইলটি ফেলে দেন। বিভিন্ন গাড়ি পাল্টিয়ে নিজে চলে যান ফেনীতে। সেখানে তিনি দুদিন একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান করেন। এরপর তিনি নিজ এলাকায় গিয়ে সবাইকে তাকে অপহরণের কথা জানান। তবে ডিবির নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সব ঘটনা স্বীকার করেন। 

আলী হোসেন বলেন, সবশেষে এ ঘটনায় তিনি অনুতপ্ত হয়েছেন এবং আত্মসাতের টাকা ফেরত দেবেন বলে জানিয়েছেন। সব মিলিয়ে কারও অভিযোগ না থাকায় তাকে স্থানীয়দের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। 

এমআর/আরএআর