অভিনব জালিয়াতির মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর ডিগ্রি মহাবিদ্যালয়ের (বর্তমানে বাঞ্ছারামপুর সরকারি কলেজ) অধ্যক্ষ ও প্রভাষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে প্রকৃত রহস্য উন্মোচনের পর কলেজটির অধ্যক্ষ ও তার স্ত্রীসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সোমবার (৮ মে) দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মাসুম আলী বাদী হয়ে কুমিল্লায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলার তদারক কর্মকর্তা রাফী মো. মোহাম্মদ নাজমুস সা'দাৎ। 

মামলার আসামিরা হলেন, কলেজটির অধ্যক্ষ মো. আব্দুর রহিম ও তার স্ত্রী বাংলা বিভাগের প্রভাষক রত্না খানম ওরফে রত্না বেগম, সাবেক সহকারী অধ্যাপক ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুল কাদের এবং বাংলা একই বিভাগের প্রাক্তন সহযোগী অধ্যাপক ও নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজের অধ্যাপক সায়েরা বেগম।

মামলার এজাহারে বলা হয়, নিয়োগবিধি অনুযায়ী অধ্যক্ষ পদের জন্য ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হলেও আসামি আব্দুর রহিমের অভিজ্ঞতা ১ বছর ৪ মাস ২৯ দিন কম ছিল। কিন্তু ২০১০ সালে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থাকাকালীন সময়ে আসামি আবদুল কাদের নিয়োগবিধি লঙ্ঘন করে পূর্ববর্তী কলেজের ছাড়পত্র জমা না নিয়েই মো. আব্দুর রহিমকে  অধ্যক্ষ পদে অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়া দেন। শুধু তাই নয় আসামি আব্দুর রহিম পূর্বের কলেজে থেকে ২০০৫ সালে সাময়িক বরখাস্তও ছিলেন, যা তিনি নিয়োগ নেওয়ার সময় গোপন করেন।

অন্যদিকে আসামি আব্দুর রহিম অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব নেওয়ার পর তার স্ত্রী রত্না খানম ওরফে রত্না বেগমকে প্রভাষক (বাংলা) পদে অবৈধভাবে নিয়োগ ও যোগদানের ব্যবস্থা করেন। বাঞ্ছারামপুর ডিগ্রি মহাবিদ্যালয়ে তখন বাংলা বিভাগ ছিল না। কিন্তু অধ্যক্ষ মো. আব্দুর রহিম তার স্ত্রী রত্না খানম ওরফে রত্না বেগমকে ওই কলেজে নিয়োগ দেওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে সমাজকল্যাণ বিভাগের পরিবর্তে পরিকল্পিতভাবে কর্তৃপক্ষকে ভুল বুঝিয়ে বাংলা বিভাগ চালু করেন।

এজাহার সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৩ সালে ১৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নিয়োগ পরীক্ষার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এর ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে ওই পদে প্রথমে সহকারী অধ্যাপক (বাংলা) নূর মোহাম্মদকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও বাঞ্ছারামপুর ডিগ্রি মহাবিদ্যালয়ের রেকর্ডে তা ফ্লুয়িড দিয়ে টেম্পারিং করে নূর মোহাম্মদের পরিবর্তে হাত দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক আসামি সায়েরা বেগমের নাম যোগ করা হয়। পরবর্তীতে একই স্মারকে আসামি সায়েরা বেগমের নাম উল্লেখ করে সংশোধিত স্মারক প্রতিস্থাপন করা হয়।

ওই কলেজে প্রভাষক (বাংলা) ৬টি পদে নিয়োগের জন্য কমপক্ষে ১২ জন প্রার্থীর প্রয়োজনীয়তা থাকা সত্ত্বেও সেখানে মাত্র ৫ জন প্রার্থী ছিলেন। আসামি সায়েরা বেগম পরীক্ষা কমিটির বাংলা বিভাগের প্রধান হিসেবে বা অধ্যক্ষ আবদুর রহিম নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব হিসেবে কোনো আপত্তি উত্থাপন করেননি বা পুনঃনিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ব্যবস্থা করেননি। আসামি রত্না খানম ওরফে রত্না বেগম নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফলে ৫ জন প্রার্থীর মধ্যে ৪র্থ হন। পরিকল্পনা অনুযায়ী সায়েরা বেগম ও রত্না খানমসহ ৪ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করেন। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪০৯/১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

আরএম/এসকেডি