ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলা এবং জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে মিটিং করে জেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম শহর ও বিভিন্ন উপজেলা মিলিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে ১ হাজার ৩০টি আশ্রয়কেন্দ্র। এসব আশ্রয়কেন্দ্রের ধারণক্ষমতা ৫ লাখ এক হাজার ১১০ জন।

জেলা প্রশাসন জানায়, উপজেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে সন্দ্বীপ, বাঁশখালী, আনোয়ারা, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই ও কর্ণফুলী। এরমধ্যে বাঁশখালীতে সবচেয়ে বেশি ১২২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। এগুলোতে আশ্রয় নিতে পারবে ৯৭ হাজার ৬০০ জন। সন্দ্বীপ উপজেলায় ১১৬টি আশ্রয়কেন্দ্রের ধারণক্ষমতা ৯২ হাজার ৮০০ জন।

জেলায়  ৮ হাজার ৮৮০ জন সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তারা আবহাওয়ার বার্তা প্রচার করছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের রেসকিউ বোট ও মেডিকেল টিম। পর্যাপ্ত সরঞ্জামসহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, সম্ভাব্য দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উপকূলীয় ও পাহাড়ি এলাকায় মানুষকে সচেতন করতে মাইকিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রাথমিক চাহিদা মিটানোর লক্ষ্যে ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের ১৫টি উপজেলায় ত্রাণ হিসেবে চাল ও নগদ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার সঙ্গে এবং জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুমের নম্বরে যোগাযোগ করার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় কন্ট্রোল রুম খুলেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এখান থেকে জরুরি হটলাইন নম্বরে ( ০২৩-৩৩৩-৬৩০-৭৩৯) ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য ও সেবা পাবেন চট্টগ্রামবাসী। পাশাপাশি শহরে জান-মালের ক্ষতি কমাতে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ৯৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। 

চসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আজিজ আহমদ বলেন, ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রস্তুতি সভা ও নাগরিকদের মাঝে সচেতনতা তৈরিতে প্রতিটি এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। পাশাপাশি আরবান মেডিকেল টিম, আরবান ভলান্টিয়ার ও উদ্ধারকর্মীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার, প্রয়োজনীয় যানবাহন, বিদ্যুৎ সরবরাহ ও সড়কবাতি নির্বিঘ্ন রাখার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। 

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় মোখার গতিবিধি পর্যবেক্ষণে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় ৯২ শতাংশ নিয়ন্ত্রক চট্টগ্রাম বন্দর। তবে আপাতত বন্দরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। যদি আবহাওয়া অধিদপ্তর ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেয়, তাহলে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে মূল কার্যক্রম শুরু করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক ঢাকা পোস্টকে বলেন, সংকেত ওপরে উঠলে আমরা নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করব। ৪ নম্বর সংকেত দেখাতে বললে বন্দরে স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিং হবে এবং অন্যান্য বিভিন্ন কমিটিকে অ্যালার্ট করা হবে। সংকেত ৫-এ গেলে জেটিতে থাকা জাহাজ বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তবে আপাতত আবহাওয়া অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করছি।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ ১০ নম্বর বিশেষ বুলেটিনে জানানো হয়- দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। এটি আজ (শুক্রবার) ভোর ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ- দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১০২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১০৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১০২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে।

অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়।

এমআর/ওএফ