অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলা ও জান-মালের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি কমাতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপকূলীয় ও পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত লোকজনকে নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং করেছে জেলা প্রশাসন। 

শুক্রবার (১২ মে) বিকেলে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা পতেঙ্গা ৪১ নম্বর ওয়ার্ড, হালিশহর ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড, কাট্টলী ওয়ার্ড,  রাণী রাসমনিঘাট, আকমল আলী ঘাট এলাকায় জনসচেতনতা তৈরিতে জোর প্রচারণা চালায়। একইসঙ্গে সন্দ্বীপ, আনোয়ারা, বাঁশখালী, সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই উপজেলায় প্রশাসনের উদ্যোগে প্রচারণা চালানো হয়েছে।

জেলা ক্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা হুছাইম মুহাম্মদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে নিরাপদে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে। তাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র। এছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে অতিবৃষ্টিতে পাহাড়ধসের সম্ভাবনা রয়েছে। সেজন্য পাহাড়ি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত লোকজনকেও নিরাপদে আশ্রয় নিতে মাইকিং করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসন জানায়, ঘূর্ণিঝড়ে লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে চট্টগ্রাম শহর ও বিভিন্ন উপজেলা মিলিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে ১ হাজার ৩০টি আশ্রয়কেন্দ্র। এসব আশ্রয়কেন্দ্রের ধারণক্ষমতা ৫ লাখ এক হাজার ১১০ জন। জেলায়  ৮ হাজার ৮৮০ জন সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তারা আবহাওয়ার বার্তা প্রচার করছেন। প্রস্তুত রাখা হয়েছে নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের রেসকিউ বোট ও মেডিকেল টিম। পর্যাপ্ত সরঞ্জামসহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। 

চট্টগ্রামের প্রধান আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ সুমন সাহা বলেন, চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় কোথাও কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের আকাশ আংশিক মেঘলা থেকে মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। সেইসঙ্গে কোথাও কোথাও অস্থায়ীভাবে দমকা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। 

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ ১১ নম্বর বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়, মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আজ (১২ মে) দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে।

অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার ফলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। একইসঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব ধরনের মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিদ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।

এমআর/কেএ