মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরাতে মাঠে নামলেন চট্টগ্রামের ডিসি
ঘূর্ণিঝড় মোখার সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে চট্টগ্রাম নগরের উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে গভীর রাতে ঘরে ঘরে প্রচারণা চালিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামান। শুক্রবার (১২ মে) দিবাগত রাত ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত তিনি পতেঙ্গা, হালিশহর ও কাট্টলী এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ জেলেপল্লী এলাকা পরিদর্শন করেন।
এ বিষয়ে ডিসি আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামান বলেন, শুক্রবার দুপুর থেকেই আকমল আলী ঘাট, রাণি রাসমনিঘাট ও পতেঙ্গা এলাকার উপকূলবর্তী ঝুঁকিপূর্ণ প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার জেলে পরিবারকে নিরাপদে অপসারণের কার্যক্রম চলছে। ইতোমধ্যে অধিকাংশ উপকূলবর্তী জেলে পরিবারের লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। জেলার ছয়টি উপকূলবর্তী উপজেলা সন্দ্বীপ, বাঁশখালী, আনোয়ারা, কর্ণফুলী, সীতাকুণ্ড ও মিরসরাইয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের তত্ত্বাবধানে জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রামে ১ হাজার ৩০ টি আশ্রয়কেন্দ্রসহ ২ হাজার ১০০ প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং প্রয়োজন অনুসারে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাইক্লোন শেল্টার সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হবে। জেলায় পর্যাপ্ত শুকনো খাদ্য, পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট ও ওরাল স্যালাইন মজুদ রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাকিব হাসান, নেজারত ডেপুটি কালেক্টর মো. তৌহিদুল ইসলাম, পতেঙ্গার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মিজানুর রহমান, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা হুসাইন মুহাম্মদ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত ও হালিশহর ৩৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, আবহাওয়া অধিদফতরের ১২ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আজ (শুক্রবার) সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে ১৪ মে (রোববার) সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ১৩ মে (শনিবার) সন্ধ্যা থেকে কক্সবাজার ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হতে পারে।
বিজ্ঞাপন
এছাড়া অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৮ (আট) নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এমআর/ওএফ