অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে থমকে গেছে কক্সবাজারের জনজীবন। মোখার প্রভাবে গতকাল (শনিবার) থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি শুরু হলেও আজ (রোববার) ভোর থেকে একটানা মাঝারি ধরনের গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। যার ফলে কক্সবাজার শহরে দোকানপাট থেকে শুরু করে যানবাহন চলাচল অনেকটা বন্ধ হয়ে গেছে। 

অন্যদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরে ১৮ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, কক্সবাজার সমুদ্র থেকে ৩০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে বর্তমানে অবস্থান করছে ঘূর্ণিঝড় মোখা। যার ফলে, কক্সবাজার শহর শান্ত থাকলেও সমুদ্র বিক্ষুব্ধ অবস্থায় আছে। এর মধ্যেও বেশ কিছু পর্যটক সমুদ্র সৈকতে এসেছেন মোখার প্রভাবে থাকা অশান্ত সমুদ্র দেখতে।

রোববার (১৪ মে) সকাল ৭টা থেকে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এমনই চিত্র দেখা গেছে কক্সবাজারে।

সরেজমিনে দেখা যায়, কক্সবাজারের ডলফিন মোড় থেকে তাকালে প্রতিটি রাস্তাই ফাঁকা দেখা গেছে। ডলফিন মোড়ে থাকা দোকানগুলোর মধ্যে হাতেগোনা দুই থেকে তিনটি খাবার হোটেল ছাড়া আর কোনো দোকান খোলা নেই। হোটেলগুলোতে চার থেকে পাঁচজনের বেশি মানুষ নেই। আবাসিক হোটেলগুলোতেও পর্যটকের সংখ্যা কম বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে বিভিন্ন গন্তব্য থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলো ভোর দিকে ডলফিন মোড়ে পৌঁছালেও শহরের বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াতের জন্য তেমন কোনো যানবাহন চোখে পড়েনি। বৃষ্টির মধ্যে যাত্রীদের বিভিন্ন ভবনের নিচে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। তবে ২/১টি ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা দেখা গেলেও তা ছিল যাত্রীদের তুলনায় অপর্যাপ্ত।

ওশেন রেস্তোরাঁর ম্যানেজার রমিজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতকাল সকালেও অনেক লোক ছিল। আজ তো দেখতেই পাচ্ছেন, আপনারা কয়েকজন ছাড়া কেউ নেই। বলা যায় ৯৫ শতাংশ মানুষ শহরে ছেড়েছেন। ভোর থেকে টানা বৃষ্টি হওয়াতে অনেকে বের হননি, দোকান খুলেননি।

ব্যাটারি চালিত এক অটোরিকশা চালক বলেন, বৃষ্টির কারণে অনেকে বের হয়নি। সকালে বাস আসবে। তাই এসেছি। এখানে ভোর থেকেই প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে।

এর বাইরেও মোখার প্রভাবে সমুদ্রের ভয়ঙ্কর রূপ দেখতে অনেক পর্যটকই কক্সবাজারে এসেছেন। বিপদ সংকেত ভুলে আনন্দটাই যেন তাদের কাছে মুখ্য।

এক পর্যটক বলেন, ঢাকার মিরপুর থেকে ঘূর্ণিঝড় দেখতে আসলাম। খবরে বলল, ১০ নম্বর বিপদ সংকেত চলছে। এর মধ্যেও ইউটিউব ফেসবুকে দেখেছি অনেক পর্যটক। সাগর উত্তাল, তবে যতটা ভেবেছিলাম, সেরকম কিছু না। আজ সকালেই আসছি ঢাকা থেকে।

কলাতলিতে দায়িত্ব পালন করা টুরিস্ট পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর সোবহান মোল্লা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিচে সার্বিক নিরাপত্তার আমরা সকাল থেকে কাজ করছি। প্রতিটি বিচেই আমাদের সদস্যরা কাজ করছে। অন্তত বিপদ সংকেত ওভারকাম না করা পর্যন্ত আমরা সর্বক্ষণ সজাগ আছি। এরমধ্যেও কিছু পর্যটক আসছেন। আমরা তাদের সমুদ্রে যাওয়া থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছি।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৯৫ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ২১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

এমএইচএন/ওএফ