চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হচ্ছে বলে জানিয়েছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। সোমবার (১৫ মে) সকাল থেকে লাইনে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয় এবং সময়ের ব্যবধানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকে।

সবশেষ বিকেল সাড়ে ৪টার পর্যন্ত মহানগরের সব বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে বলে দাবি করেন কেজিডিসিএল কর্মকর্তারা।

কেজিডিসিএল কর্মকর্তারা জানান, শুধু বাসাবাড়িতে নয় ইতিমধ্যে বিভিন্ন সিএনজি স্টেশনেও গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে এবং সন্ধ্যা নাগাদ সরবরাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে।

এ বিষয়ে কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (বিতরণ-দক্ষিণ) আমিনুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে মহেশখালীর দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালে শুক্রবার (১২ মে) রাত ১১টা থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছিল। দুটি এলএনজি টার্মিনাল পরিচালনা করে মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি এবং সামিট গ্রুপ। এর মধ্যে সামিট গ্রুপের টার্মিনালটি চালু করা হয়েছে। এতে সোমবার সকাল ৮টা থেকে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়। ইতিমধ্যে সকল বাসাবাড়িতে সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। সন্ধ্যা নাগাদ সিএনজি স্টেশনসহ পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

জানা গেছে, এলএনজি টার্মিনাল দুটি থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকার কারণে শনিবার থেকে নগরের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকে। রোববার পুরো মহানগর এলাকা গ্যাস শূন্য হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে রান্না বন্ধ হয়ে যায়। হাহাকার তৈরি হয় হোটেল-রেস্তোরাঁয়ও। এই সুযোগে কারসাজি করে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) সিলিন্ডারের দাম বাড়িয়ে দেয় একটি সিন্ডিকেট।

নগরে অন্যান্য সময়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) সিলিন্ডার ১ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। তবে লাইনের গ্যাস সংকটের কারণে বর্তমানে এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার টাকায়। এ অবস্থায় রোববার দিবাগত রাতে অভিযান পরিচালনা করে ছয়টি দোকানকে ৪৮ হাজার টাকা জরিমানা করে জেলা প্রশাসন।

গ্যাস সংকটের কারণে রাইস কুকার, স্টোভ ও কেরোসিনের তেলের দাম হঠাৎ বাড়িয়ে দেন বিভিন্ন দোকানিরা। সবমিলিয়ে দুই দিনে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নেয় অসাধু ব্যবসায়ীরা। এছাড়া গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় গণপরিবহন, সিএনজিচালিত অটোরিকশাগুলোও বাড়তি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এদিকে, গ্যাস সংকটে শুধুমাত্র এলএনজি সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর নির্ভর না করে বিকল্প চিন্তার জন্য কেজিডিসিএল কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানিয়েছেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও নগর কমিটির নেতারা। সোমবার দুপুরে তারা কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের সঙ্গে জরুরি সাক্ষাৎ করেন।

এ সময় ক্যাব নেতারা জানান, এলএনজি নির্ভর সরবরাহ ব্যবস্থার কারণে যেকোনোভাবে আমদানিতে সমস্যা হলেই চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট প্রকট হয়ে যায়। এ অবস্থায় বিকল্প ব্যবস্থায় গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ন্যাশনাল গ্রিড, বাখরাবাদ বা দেশীয় মজুত থেকে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে যেকোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা সংকট মোকাবিলায় বিকল্প ব্যবস্থায় বাসায় ও সিএনজি স্টেশনে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা এবং দেশীয় গ্যাসে চট্টগ্রামের হিস্যা নিশ্চিত করার দাবি জানান ক্যাব নেতারা।

ক্ষোভ প্রকাশ করে ক্যাব নেতারা বলেন, কেজিডিসিলের বসতবাড়িতে ৫ লাখ ৯৭ হাজার সংযোগ আছে। যেখানে গ্যাসের চাহিদা প্রায় দৈনিক ৫০ মিলিয়ন ঘনমিটার। ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকায় প্রতি পরিবারে ২ দিনে প্রায় ৪ হাজার টাকার মতো অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হয়েছে। এছাড়াও মন্ত্রী ও কেজিডিসিএলের মধ্যে কার্যকর সমন্বয় না থাকায় গ্যাস সংকট নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দেওয়া হয়। এ কারণে গ্রাহক পর্যায়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। তাই এ বিষয়ে সমন্বয় নিশ্চিত করার দাবি জানান ক্যাব নেতারা।

কেজিডিসিএলে অনুষ্ঠিত জরুরি বৈঠকে অংশ নেন ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী ও মহানগরের যুগ্ম সম্পাদক মো. সেলিম জাহাঙ্গীর।

এমআর/এসকেডি