ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, গত ৩ বছরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন শতাধিক উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে ৩৪ একরের বেশি জমি উদ্ধার করেছে। যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

মঙ্গলবার (১৬ মে) ডিএসসিসি নগর ভবনের মেয়র হানিফ মিলনায়তনে উন্নত ঢাকার উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় ৩ বছর শীর্ষক  সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ডিএসসিসির মেয়র হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের ৩ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, দখল বাণিজ্য ঢাকাবাসীর প্রাত্যহিক জীবনযাত্রাকে প্রতিনিয়ত বাধাগ্রস্ত করে চলছিল। রাস্তা-মার্কেটের দোকান, অলি-গলি, কাঁচাবাজার, নর্দমা এমনকি নদী-নালাও ভূমিদস্যুদের কবল হতে রক্ষা পায়নি।  কিন্তু দখল সাম্রাজ্যকে গুঁড়িয়ে দিতে আমরা অনমনীয়তা প্রদর্শন করেছি এবং আগামী দিনেও তা আমরা অব্যাহত রাখব। আমরা যেমন দীর্ঘদিন ধরে অনিয়মের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হওয়া ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট, সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেটসহ অনেকগুলো মার্কেটের অবৈধ দখল উচ্ছেদ করেছি তেমনি দখলমুক্ত করা হয়েছে বুড়িগঙ্গা আদি চ্যানেল ঘিরে গড়ে ওঠা কয়েক ডজন অবৈধ বহুতল ভবন ও স্থাপনা।

তিনি বলেন, দখলমুক্তির ধারাবাহিকতায় আমরা দীর্ঘ ৮০ বছর পর সূত্রাপুরের মাইশা খাল, ৩ দশক পর রায় সাহেব বাজার মোড়, ২ যুগ পর লক্ষ্মীবাজারে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পার্কিংয়ের জায়গা, ৪ দশক পর ধলপুর ক্লিনার কলোনি থেকে অবৈধ দখলদারিত্বের অবসান ঘটিয়েছি। সামষ্টিকভাবে বলতে পারি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অটল, অদম্য ও অনমনীয় কর্মোদ্যোগের ফলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে সুশাসন নিশ্চিত হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকাবাসীর আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির মাধ্যমে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন আজ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ সংস্থা হিসেবে যেমন নিজ পায়ে দাঁড়িয়েছে তেমনি তাসের ঘরের মতেই ভেঙে পড়তে শুরু করেছে দীর্ঘদিনের দখলদারিত্বের পোক্ত সাম্রাজ্য।

গত ৩ বছরে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে মেয়র তাপস বলেন, দীর্ঘ ৩৪ বছর পর আমরা রিকশাসহ মোট ৫ ধরনের অযান্ত্রিক যানবাহন নিবন্ধনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এ কার্যক্রমে ১ লাখ ৯০ হাজার ২১৭টি অযান্ত্রিক যানবাহনকে ইতিমধ্যে নিবন্ধন এবং সেগুলোর ডিজিটাল নম্বর প্লেট প্রদান করা হয়েছে। এ বছর থেকে নিবন্ধিত এসব অযান্ত্রিক যানবাহনকে নবায়ন করা হচ্ছে। আগামী দিনে নিবন্ধনবিহীন কোনো অযান্ত্রিক যানবাহন আমরা ঢাকা শহরে আর চলতে দেব না।

ডিএসসিসি মেয়র বলেন, সরু গলি ঢাকার সচলতার অন্যতম প্রতিবন্ধকতা। সে প্রতিকূলতা অতিক্রম করার লক্ষ্যে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের গলি ১৪ ফুট থেকে বাড়িয়ে ২০ ফুট প্রশস্ত করা হয়েছে। পান্থপথ মোড় থেকে সোনারগাঁও রোড, বাসাবো বৌদ্ধ মন্দির থেকে কালীমন্দির পর্যন্ত বিদ্যমান সড়ক ৩০ ফুট প্রশস্ত করা হয়েছে। এছাড়াও প্রতিনিয়তই দখলমুক্ত করে পথচারীদের জন্য ন্যূনতম ৫ ফুট করে হাঁটার পথ সৃষ্টির উদ্যোগ চলমান রয়েছে। ৫টি নতুন পথচারী পারাপার সেতু নির্মাণ ও ২টি পথচারী পারাপার সেতু সংস্কার করা হয়েছে।

মেয়র বলেন,  আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে ন্যূনতম একটি করে খেলার মাঠ, পার্ক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিগত ৩ বছরে আমরা ৭টি খেলার মাঠ ও ৪টি পার্কের উন্নয়ন কাজ শেষ করেছি। আমরা ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডে লক্ষ্মীবাজার খেলার মাঠ, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে টিকাটুলি খেলার মাঠ, ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে আলমগঞ্জ খেলার মাঠ, ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে বাংলাদেশ মাঠ, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে বকশীবাজার খেলার মাঠ, ৪০ নম্বর ওয়ার্ডে সাদেক হোসেন খেলার মাঠ, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে কলাবাগান খেলার মাঠ ও মাঠ সংলগ্ন শহীদ শেখ রাসেল শিশু পার্ক, ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডে শহীদ শেখ রাসেল শিশু পার্ক, ৯ নম্বর ওয়ার্ডে মতিঝিল পার্ক এবং ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে মালিটোলা পার্কের উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছি।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সকল বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।

এএসএস/এসকেডি