ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ব্যক্তি মালিকানাধীন বা বেসরকারি বাজারগুলোকে শৃঙ্খলায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এসব বাজারের মূল্য পর্যবেক্ষণ, দৈনন্দিন পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ, ও উন্নয়নসহ নানা বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে সিটি কর্পোরেশন। এজন্য ব্যক্তি উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায় চালু থাকা সব বাজারকে লাইসেন্সের আওতায় আনা হবে।

বেসরকারি বাজার প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার জন্য একটি বিধিমালা তৈরি করেছে ডিএসসিসি। সেখানে প্রতিটি বাজারের জন্য লাইসেন্স নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

বাজারের জন্য লাইসেন্সের আবেদন

বেসরকারি বাজার প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার জন্য ৫০০ টাকা ফি দিয়ে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। প্রস্তাবিত বাজারের হোল্ডিংয়ের মালিক একাধিক হলে যৌথভাবে আবেদন করতে হবে। আবেদনের ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগ যাচাই-বাছাই করে বাজার প্রতিষ্ঠা বা পরিচালনার অনুমতি দেবে। পাশাপাশি বাজার পরিচালনার জন্য লাইসেন্স দেওয়া হবে। এর মেয়াদ হবে এক বছর। বাজার প্রধান সড়কের পাশে হলে প্রতি বর্গমিটারের জন্য ২১৫ টাকা ও অন্যান্য সড়কের পাশে হলে প্রতি বর্গমিটারের জন্য ১০৮ টাকা বার্ষিক সার্ভিস ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাজার পরিচালনায় কমিটি

প্রতিটি বাজার পরিচালনার জন্য ৭ সদস্যের একটি কমিটি থাকবে। তারা বাজারের মূল্য পর্যবেক্ষণ, দৈনন্দিন পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ, সমন্বয় ও উন্নয়নসহ সকল কার্যক্রম দেখাশোনা করবেন। এছাড়া বাজারের দৈনন্দিন পণ্যের মূল্য তালিকা স্পষ্টভাবে বোর্ডে প্রদর্শন, বাজারে অবৈধ, ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য ক্রয়-বিক্রয় বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

থাকবে ডিএসসিসির নিজস্ব কমিটি

বেসরকারি বাজার ব্যবস্থাপনার জন্য সিটি কর্পোরেশনের ৯ সদস্যের নিজস্ব কমিটি থাকবে। এই কমিটি বাজারের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও বাতিলসহ বাজার উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণে কাজ করবে। কমিটিতে থাকবেন ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট এলাকার আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রধান প্রকৌশলী, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, বাজার মনিটরিং বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা।

এই কমিটি ডিএসসিসি এলাকার সব বেসরকারি বাজারের সুষ্ঠু পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ তদারকি করবে। কয়টি বাজার হবে, এর সংখ্যা নির্ধারণের পাশাপাশি লাইসেন্স আবেদনের বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করবে কমিটি।

লাইসেন্স নিতে যা লাগবে

বেসরকারি বাজার প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার জন্য লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করেছে ডিএসসিসি। বাজার যে ব্যক্তি বা যারা নেবেন তাদের নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র, টিআইএন নম্বর ও হোল্ডিং ঠিকানাসহ আবেদন করতে হবে। লাইসেন্স গ্রহণ করতে হলে নির্ধারিত ফরমে হোল্ডিং করের তথ্য, বাজারে দোকানের সংখ্যা, আয়তনসহ সার্বিক বিষয়গুলো পূরণ করে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে।

বাজার পরিচালনার এই লাইসেন্সের মেয়াদ হবে এক বছর। কেউ শর্ত ভঙ্গ করলে কর্তৃপক্ষ যেকোনো সময় তার লাইসেন্স বাতিল করতে পারবে। মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩০ কার্যদিবসের পূর্বে লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করতে হবে।

মানতে হবে যেসব শর্ত

বাজার পরিচালনা করার জন্য বেশ কিছু শর্ত দিয়েছে ডিএসসিসি। এর মধ্যে রয়েছে- 

  • বাজারের পাশে ৬.১০ মিটার প্রশস্ত রাস্তা থাকতে হবে। বাজারের অভ্যন্তরে চলাচলের পথ বা গলির প্রস্থ ন্যূনতম ১.৫২ মিটার থাকতে হবে।
  • পুরুষ ও নারীদের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক পৃথক শৌচাগার ও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
  • ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে বাজার প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করা যাবে। কোনোভাবেই সড়ক, রেললাইন বা মানুষের চলাচলের পথে বাজার প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।
  • অবৈধভাবে নির্মিত বাজার ডিএসসিসি উচ্ছেদ করবে।
  • বাজারের নির্ধারিত পরিসীমার বাইরে রাস্তায় পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না। রাস্তায় পথচারী ও যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করা যাবে না।
  • বাজারে বর্জ্য ও পয়োনিষ্কাশন, পানি সরবরাহ ও অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা থাকতে হবে।
  • বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে আবর্জনা সংগ্রহ ও অপসারণ নিশ্চিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
  • জনস্বার্থ, জননিরাপত্তা ও জনচলাচল বিঘ্নিত হয় এমন কোনো স্থানে বাজার প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।

উদ্যোগটি নিয়ে কী বলছে কর্তৃপক্ষ

ডিএসসিসি এলাকায় প্রায় চার শতাধিক কাঁচাবাজার রয়েছে। এসব বাজারে কোনো শৃঙ্খলা নেই, কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, জবাবদিহিতাও নেই। লাইসেন্স দেওয়ার মাধ্যমে এসব বেসরকারি বাজার পরিচালিত হলে সব বাজার শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতার মধ্যে আসবে। সেই সঙ্গে নিয়ম মেনে আরও নতুন নতুন বাজার প্রতিষ্ঠিত হবে বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ।

ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইতোমধ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। যেসব বাজার রয়েছে সেগুলোকে সিটি করপোরেশন থেকে লাইসেন্স নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। নতুন যেসব বাজার হবে সেগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নীতিমালা অনুযায়ী রাস্তাসহ অন্যান্য দিকগুলো ঠিক আছে কি-না, তা খতিয়ে দেখা হবে। বর্তমান বাজারগুলোতে যারা আইন মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে সিটি কর্পোরেশন।

দোকানি ও ব্যবসায়ীরা যা বলছেন

রাজধানীর বাসাবো এলাকার কাঁচাবাজারের দোকানি সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের বাজার সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদিত নয়, তাই ভয়ে থাকি কখন এসে উচ্ছেদ করে দেয়। লাইসেন্সের মাধ্যমে বাজার পরিচালনা করা যাবে বলে শুনেছি। আমরা যারা দোকানি ও জায়গার মালিক আছি তারা সবাই মিলে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করব। এটা সবার জন্য ভালো হবে।

যাত্রাবাড়ী এলাকায় ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আজাহার আলী। সিটি করপোরেশনের উদ্যোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা ঘুরে ঘুরে পণ্য বিক্রি করি, কোথাও দাঁড়ালে অনেক সময় তাড়িয়ে দেয়। আবার লাইনম্যান বা রাস্তা খরচ বাবদ ২০০/৩০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। দোকান মালিকদের কাছ থেকে বাজারের লাইসেন্সের বিষয়ে শুনেছি। এটা হলে আমাদের জন্যও ভালো হবে। আমরা বৈধ দোকান বা স্থানে ভ্যান নিয়ে বিক্রি করতে পারব।

এএসএস/এমজে/ওএফ