সিগারেটসহ সব তামাক পণ্যের খুচরা মূল্য উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়িয়ে সেগুলোর ওপর বেশি হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করলে এক দিকে তামাক ব্যবহার কমবে, অন্যদিকে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। তাই বিদ্যমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে তামাক পণ্যে কার্যকর করারোপের লক্ষ্যে বড় ধাক্কা দেওয়ার এখনই আদর্শ সময় বলে মনে করেন সংসদ সদস্য, অর্থনীতিবিদ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং নাগরিক সমাজের নেতারা।

বুধবার (২৪ মে) গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন সমন্বয়ের প্রাক-বাজেট আলোচনায় তারা এমনটি বলেছেন। ঢাকায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে ‘তামাক পণ্যে কার্যকর করারোপ বিষয়ে প্রাক-বাজেট আলোচনা’ শিরোনামে এ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন উন্নয়ন সমন্বয়ের সভাপতি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান।

তিনি বলেন, প্রতি বছরই তামাক পণ্যের দাম অল্প অল্প করে বাড়ানো হয় এবং এগুলোর ওপর শুল্ক অপরিবর্তিত থাকে। কিন্তু মাথাপিছু আয়বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির বিবেচনায় এক ধাক্কায় অনেকখানি দাম বাড়ানো এবং সেই বর্ধিত দামের ওপর সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের মাধ্যমেই তামাক পণ্যে কার্যকর করারোপ সম্ভব।

আসছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটকে সামনে রেখে তামাক পণ্যে কার্যকর করারোপের যে প্রস্তাবনা তামাকবিরোধী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষক এবং সামাজিক সংগঠনগুলো ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রণালয়, এনবিআরসহ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে উত্থাপন করেছে তা অনুষ্ঠানে একটি ভিডিওচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়।

অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য লুৎফুন নেসা খান এমপি, মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি মৃনাল কান্তি দাস এবং গাইবান্ধা-৪ আসনের মো. মনোয়ার হোসেন চৌধুরী। তারা ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য তামাক পণ্যে কার্যকর করারোপের আন্দোলনের সঙ্গে পূর্ণ সংহতি জানিয়েছেন।

অনুষ্ঠাটি সঞ্চালনা করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের হেড অব প্রোগ্রামস শাহীন উল আলম। এসময় বিশেষজ্ঞ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হেলাল আহম্মেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ, সিপিডির রিসার্চ ফেলো সৈয়দ ইউসুফ সাদাত এবং উন্নয়ন সমন্বয়ের লিড ইকোনমিস্ট রবার্ট শুভ্র গুদা।

তামাকপণ্যে কার্যকর করারোপ জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য যেমন দরকারি তেমনি দেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সুরক্ষার জন্যও তামাক ব্যবহার কমিয়ে আনা দরকার বলে তারা মত দেন। 

নিম্ন স্তরের সিগারেটের সিগারেটে অন্যান্য স্তরের সিগারেটের তুলনায় কম সম্পূরক শুল্ক থাকার কারণে সিগারেট কোম্পানিগুলো বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে বলে সব স্তরের সিগারেটে সমান করভার আরোপের দাবি জানান রবার্ট শুভ্র গুদা।

নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক জাতীয় ফুটবলার আবদুল গাফফার এবং স্থপতি ইকবাল হাবিব। 

সভাপতির বক্তব্যে বিআইডিএস-এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. এস এম জুলফিকার আলী বলেন, তামাক পণ্যেরে দাম বাড়ালেই কর হারানোর যে আশঙ্কা করা হয় তার ভিত্তি নেই। বরং মধ্যমেয়াদে অর্থাৎ আগামী ২-৩ বছর তামাক পণ্যের দাম বাড়িয়ে সেখান থেকে সরকারের পক্ষে বাড়তি কর আয় সম্ভব।

টিআই/এসএম