ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, ভূমি মন্ত্রণালয় এক সময় ইমেজ সংকটে ছিল। আমাকে যখন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তখন আমিও খুব অস্বস্তিতে ছিলাম। অনেক পরিশ্রমের পর ভূমি মন্ত্রণালয়কে ইমেজ সংকটের জায়গা থেকে বের করে এনেছি। ভূমি উন্নয়ন কর, জমির নামজরিসহ সব ধরনের ভূমিসেবা এখন অনলাইনে পাওয়া সম্ভব। এক কথায় ভূমি সেবা এখন হাতের মুঠোয়।

শনিবার (২৬ মে) ভূমিসেবা সপ্তাহ উপলক্ষ্যে চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়াম হলে আয়োজিত জনসচেতনতামূলক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় ও জেলা প্রশাসন যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করেন। ভূমিসেবা সপ্তাহের এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘স্মার্ট ভূমি সেবায় ভূমি মন্ত্রণালয়’।

খাজনা আদায়ের একটি পরিসংখ্যান দিয়ে ভূমিমন্ত্রী বলেন, গত ১৪ এপ্রিল থেকে ম্যানুয়ালি জমির খাজনা আদায় বন্ধ করে দিয়েছি। ২০২০-২১ অর্থবছরে খাজনা আদায় হয়েছিল প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা এবং ২০২১-২২ অর্থ বছরে হয়েছে প্রায় ৬৪৯ কোটি টাকা। খাজনা আদায় সম্পূর্ণ অনলাইন হওয়ার পর এক মাসে আদায় হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা। আমরা যেভাবে কাজ করে যাচ্ছি আশা করছি বছরে ২ হাজার কোটি টাকা খাজনা আদায় হবে।

সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সফলতা ও ব্যর্থতা দুটোই আছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পশ্চিম পাকিস্তানের অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ন্যায্য দাবি আদায়ের স্বপ্ন দেখেই স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। দুঃখজনক হলেও সত্য ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালো রাত্রিতে শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। ঘাতকরা এই হত্যার মধ্য দিয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ও গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল। আজকে আবার তাদের মুখেই গণতন্ত্রের কথা শুনছি।

‘যে দলের জন্ম পেছনের দরজা দিয়ে, যাদের জন্ম ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে, যারা স্বাধীনতাবিরোধী চক্রকে নিয়ে দেশ শাসন করেছিল আজ তারাই বলছে গণতন্ত্রের কথা। জানি না তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা কতটুকু মানায়। আজ স্বাধীনতার প্রায় ৫২ বছর হতে চলছে। স্বাধীনতা পরবর্তী এবং আজ পর্যন্ত ব্যর্থতার পাশাপাশি আমাদের সফলতাও রয়েছে। তবে জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বাংলাদেশের এই রূপ অনেক আগেই দেখার কথা ছিল।’

বিএনপির ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের সর্বশেষ শাসন আমলে দেশকে বিশ্বের কাছে লুটের দেশ হিসেবে পরিচিত করেছিল। তাদের নেতৃত্বেই বাংলাদেশ পরপর দুইবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ান হয়েছিল। তারা হাওয়া ভবন সৃষ্টি করেছিল। আমি জানি না, এ বাংলার জনগণ কীভাবে উপকৃত হয়েছিল। তবে তারা বুঝতে পেরেছে, এখন তাদের ক্ষমতায় আসা কঠিন হয়ে গেছে। কারণ দেশে আর একটা পদ্মা সেতু, টানেল কিংবা মেট্রোরেল তো হবে না। তারা জনগণকে কী বলবে?

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে ও ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মাসুমা জান্নাতের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিনুর রহমান, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ ও জেলা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার একেএম সরোয়ার কামাল দুলু। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাসুদ কামাল।

অনুষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ডিজিটালাইজেশন পদ্ধতিতে বোয়ালখালীর বিভিন্ন শ্রেণির জমির লোকেশন ও মালিকানা বিষয়ক চিত্র তুলে ধরেন সহকারী কমিশনার (ভূমি-বোয়ালখালী) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলাউদ্দিন। সভায় বিভিন্ন প্রকল্পে অধিগ্রহণকৃত ভূমির ক্ষতিপূরণের চেক ও নামজারি খতিয়ান বিতরণ করেন মন্ত্রী। সভা শেষে ভূমিসেবার বিভিন্ন স্টলও পরিদর্শন করেন ভূমিমন্ত্রী।

এমআর/এসএম