জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দুরন্ত বিপ্লবের মৃত্যু অবহেলাজনিত দুর্ঘটনায় হয়েছে বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে। তবে পরিবারের দাবি, দুরন্ত বিপ্লব দুর্ঘটনায় মারা যাননি, তাকে হত্যা করা হয়েছে।

তারা বলছেন, তদন্ত সংশ্লিষ্ট সংস্থা পিবিআই ও ছায়া তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ধারণা থেকে কথাগুলো বলছে। পুলিশের এই ধারণাকে ঘিরে অসংখ্য প্রশ্ন সামনে এসেছে। যেগুলোর উত্তর মেলেনি। 

দুরন্ত বিপ্লবের মৃত্যু নিয়ে তদন্তের অসঙ্গতি এবং অমীমাংসিত প্রশ্নগুলো সামনে রেখে একটি বই সংকলন করেছেন তার বোন শাশ্বতী বিপ্লব। 

শনিবার (২৭ মে) বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘জাস্টিস ফর দুরন্ত বিপ্লব’ নামে সংকলনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়।

বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দুরন্ত বিপ্লবের মা রোকেয়া আক্তার খাতুন। তিনি বলেন, ‘দুরন্তের বন্ধু-বান্ধব, বড়ভাই, ছোটভাই সবাই তাকে চেনেন। আমি মা হিসেবে তাকে যতটা চিনেছি, তা বর্ণনাতীত। এটা সত্য সে পানিতে ডুবে মরেনি।’

‘দুরন্তকে তার সার্কেলের লোকজন, যাদের সঙ্গে চলাফেরা করত, এদের মধ্যেই কারো স্বার্থে আঘাত লেগেছে, তে কারণে তাকে হত্যা করেছে,’ দাবি করেন তিনি।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কৃষি খামারি দুরন্ত বিপ্লব ৭ নভেম্বর নিখোঁজ হন। এর পাঁচদিন পর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বুড়িগঙ্গা নদীতে ভাসমান অবস্থায় একটি মরদেহ পায় পুলিশ। সেই রাতে মরদেহটি বিপ্লবের বলে নিশ্চিত করেন তার স্বজনরা। 

নিখোঁজ হওয়ার পর ৭ নভেম্বর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ হয়। মরদেহ উদ্ধারের পর ১৪ নভেম্বর হত্যা মামলা করা হয়। বাদীপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই তদন্ত করতে থাকা ঢাকা জেলা পুলিশ থেকে মামলাটি পিবিআইতে স্থানান্তর করা হয়।  ঢাকা জেলার পিবিআই এর পাশাপাশি ছায়া তদন্ত করে ডিবি লালবাগ বিভাগ। 

ঘটনার পর দুই সংস্থার তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, দুরন্ত বিপ্লবকে হত্যা করা হয়নি, তিনি অবহেলাজনিত দুর্ঘটনায় মৃত্যুর শিকার। গত ৭ নভেম্বর বুড়িগঙ্গা পার হওয়ার সময় মর্নিংসান-৫ লঞ্চের ধাক্কায় দুরন্ত বিপ্লবকে বহনকারী নৌকাটি উল্টে যায়। দুরন্ত বিপ্লব সাঁতারে দক্ষ না হওয়ায় বা সাঁতার না জানায় পানিতে তলিয়ে যান।

তবে তদন্তকারীদের এই বক্তব্য মানতে নারাজ দুরন্ত বিপ্লবের বোন ও পরিবারের সদস্যরা। 

বোন শাশ্বতী বিপ্লব বলেন, পিবিআই ও ডিবি পুলিশ কথাগুলো বলছে ধারণা থেকে। বলছে, হতে পারে, হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এতে অকাট্যভাবে প্রমাণ হয় না দুরন্ত বিপ্লব দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। পুলিশের তদন্ত ও বক্তব্য নিয়ে আমাদের মনে অসংখ্য প্রশ্নের জন্ম হয়েছে। আমাদের কাছে থাকা তথ্যগুলো বলছে, দুরন্ত বিপ্লব দুর্ঘটনার শিকার নয়, হত্যার শিকার হয়েছেন। আমার ভাই হত্যার বিচার চাই।

শাশ্বতী বিপ্লব বলেন, আমরা আবেদন করে মামলাটি পিবিআইকে দেওয়ার জন্য আদালতে অনুরোধ করেছিলাম। পিবিআই এর তদন্তে আমাদের আস্থা আছে। কিন্তু তারপরও আমাদের কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। যেগুলো তাদের তদন্তের সঙ্গে মিলছে না। আমরা এসব প্রশ্নের জবাব চাই।
 
বইটি প্রকাশের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘জাস্টিস ফর দুরন্ত বিপ্লব’ বইটিতে তার নিখোঁজ হওয়ার দিন গত বছরের ৭ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ৬২ দিনের ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরা হয়েছে। 

বইটির সম্পাদক এবং দুরন্তের বোন শাশ্বতী বিপ্লব বলেন, এই সংকলনটি আমাদের দিক থেকে একটি প্রোপজিশন বা প্রস্তাবনা। যেটা এই মামলার তদন্তে সহায়ক হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের এই প্রশ্নগুলো ধরে যদি তদন্ত আগানো যায়, তাহলে মৃত্যু রহস্যের সুরাহা করা সম্ভব।‘ 

তিনি বলেন, এই বইয়ে যা তথ্য-উপাত্ত আছে, এর বাইরেও আরো কিছু তথ্য-উপাথ্য ও সূত্র আমরা পিবিআইকে দিয়েছি। সঙ্গত কারণেই আমরা এই বিষয়গুলো এই বইয়ে আনতে পারিনি। কারণ, মামলাটি তদন্তানাধীন আছে, যেকারণে সব কিছু প্রকাশ করা যায় না।

জেইউ/জেডএস