ঢাকা পোস্টে গত ২৪ মে প্রকাশিত ‘শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াই পদোন্নতি চেয়েছিলেন ডা. শারফুদ্দিন’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ।

গতকাল শনিবার (২৮ মে) বিএসএমএমইউ-এর জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার মজুমদার স্বাক্ষরিত এক প্রতিবাদলিপিতে প্রকাশিত সংবাদটি পক্ষপাতদুষ্ট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করা হয়েছে।

প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদকে নিয়ে ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদনটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সংবাদটি সঠিক নয়। এটি পক্ষপাতদুষ্ট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দেশের জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি সরকারকে অস্থিতিশীল করার বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে স্বার্থান্বেষী মহল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মাননীয় উপাচার্য মহোদয়ের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে।

এতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে সফল কাডাভারিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট, লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টের মতো সর্বাধুনিক চিকিৎসা সেবা, মানসম্মত মেডিকেল উচ্চ শিক্ষার প্রসার, উন্নত ও ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য সেবা জনগণের দোর গোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন নিরলসভাবে কাজ করে চলছে। প্রকাশিত সংবাদটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা এবং গতিশীল, সর্বাধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা ব্যাহত করার উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। প্রকাশিত সংবাদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রাবিরোধী, হীন চক্রান্তের বহিঃপ্রকাশ।

প্রকাশিত সংবাদের ব্যাখ্যা

প্রতিবাদলিপিতে উল্লেখ করা হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ ১৯৮২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হতে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ১৯৮২ সালে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী সার্জন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আইপিজিএমআর থেকে ডিপ্লোমা ইন অপথালমোলজি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএস (চক্ষু) ডিগ্রি অর্জন করেন।

তিনি ১৯৮২ সালে বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে সরকারি চাকুরিতে যোগদানের পর সহকারী সার্জন, মেডিকেল অফিসার, রেজিস্ট্রার, রেসিডেন্ট সার্জন, ১৯৯১ সাল থেকে সহকারী অধ্যাপক (চক্ষু) হিসেবে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। ১৯৯৮ সালের ২৪ মার্চ তিনি সহকারী অধ্যাপক (চক্ষু) হিসেবে তৎকালীন আইপিজিএমআর-এ যোগদান করেন। পরবর্তীতে ৩০ এপ্রিল ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর সহকারী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি ২০০৭ সালে সহযোগী অধ্যাপক ও ২০০৯ সালে অধ্যাপক পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান (২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত) এবং বর্তমানে কমিউনিটি অপথালমোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। ২০১৯ সালের ৪ জুলাই তিনি প্রথম গ্রেড প্রাপ্ত হন।

ডা. শারফুদ্দিন আহমেদের প্রায় ১০০টির মতো বিএমডিসি স্বীকৃত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রকাশনা রয়েছে (২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত)। বাংলায় চক্ষুবিষয়ক তিনটি এবং ইংরেজিতে দুটি বই রয়েছে। তিনি গ্রামেগঞ্জে কমিউনিটি চক্ষু শিবিরে প্রায় এক লাখ চোখের অপারেশন করেছেন। তিনি ২৭তম এপিএও (APAO) কংগ্রেস, বুসান, কোরিয়া ডিস্টিংগুইসড সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড ২০১২’ অর্জন করেন।

তিনি বিভিন্ন জাতীয় পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন। বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকার একজন স্বনামধন্য কলামিস্ট। পাশাপাশি তিনি চক্ষুবিষয়ক বিভিন্ন টিভি ও রেডিও টকশোর আলোচনায় অংশগ্রহণ করে থাকেন। পেশাগত বিভিন্ন সংস্থার সাংগঠনিক ও একাডেমিক কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।

উপাচার্যের আন্তর্জাতিক সম্মাননার মধ্যে রয়েছে- বিশিষ্ট পরিষেবা পুরস্কার (২৭তম এপিএও কংগ্রেসে উপস্থাপিত, বুশান ২০১২), অন্ধত্ব প্রতিরোধ সম্মাননা (এপিএও এশিয়া প্যাসিফিক একাডেমি অব অপথালমোলজি ২০১৬), পোখারেল ভেস্কটস্বামী পাড়া রাজাসাগরাম (পিভিপি), নেপালর কমিউনিটি চক্ষুবিদ্যায় অসাধারণ কাজের জন্য পুরস্কার (এসএও) ২০১৮, স্বর্ণ পুরস্কার সিসিসি কলকাতা ২০১৯, এআইওসি অ্যাওয়ার্ড গুরুগ্রাম ২০২০।

তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রো-ভিসি (প্রশাসন), সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ বরিশাল (১৯৭৮-১৯৭৯), সদস্য কার্যকরী পরিষদ বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল এবং সাবেক মহাসচিব বিএমএ ২০০৯-২০১২। তিনি এ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন।

তিনি প্রথম ভিসি অধ্যাপক এম এ কাদেরীর সময় প্রথমে ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি পরিচালক হাসপাতাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পাবলিক হেলথ ফ্যাকাল্টির ডিনের দায়িত্বও পালন করেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি সিন্ডিকেট সদস্য ও একাডেমিক কাউন্সিলের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। তিনি অপথালমোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের পরপর তিনবার নির্বাচিত সভাপতি। বড় দুই ভাইয়ের সঙ্গে তিনিও মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত দপ্তর সম্পাদক, কেন্দ্রীয় বিএমএ; ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত সাংগঠনিক সম্পাদক, বিএমএ; ১৯৯৬ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত কোষাধ্যক্ষ এবং ১৯৯৬ সালে ভোট ও ভাতের অধিকার আন্দোলনে কর্মকর্তা সমন্বয় পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তিনি সক্রিয় নেতা, ১৯৯৩ সালে সেন্ট্রাল স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন।

ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ ১৯৮৫ সালে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট সম্পন্ন করে ১৯৯১ সালে সহকারী অধ্যাপক হন। ২০০৭ সালে সহযোগী অধ্যাপক হন। তাই তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পদোন্নতি নিয়ে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তা ভিত্তিহীন।

প্রতিবেদকের বক্তব্য

আলোচ্য প্রতিবেদনটিতে উঠে আসা তথ্য ও বক্তব্য কোনোভাবেই প্রতিবেদকের মনগড়া নয়। বরং বিএসএমএমইউ উপাচার্যের বিরুদ্ধে ঢাকা পোস্ট প্রতিবেদকের হাতে আসা বিভিন্ন অভিযোগসংবলিত দলিল-প্রমাণসহ সুস্পষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বরাবরও এসব অভিযোগ প্রেরণ করা হয়েছে, যা দুদক গ্রহণ করেছে এবং আমলে নিয়েছে।
 
প্রতিবেদনের কোথাও বলা হয়নি উপস্থাপিত ‘অভিযোগ’ সত্য। কেবল অভিযোগ এসেছে- এটাই বলা হয়েছে। সুতরাং আলোচ্য সংবাদটির কোনো বক্তব্য ‘রিপোর্টারের মনগড়া’ নয়।
 
টিআই/এমএআর/