বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ সফর করেছেন প্রতিবেশী দেশের চার রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান। বাকি রয়েছেন একজন। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনেই ঢাকায় আসছেন মোদি। নানা চাওয়া-পাওয়া আর আপত্তি ছাপিয়ে বাংলাদেশের চোখ এখন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরেই।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকছে দুই শীর্ষ নেতা শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠক। দেশটির সহযোগিতায় কানেক্টিভিটি তথা আঞ্চলিক যোগাযোগে জোর দেবে ঢাকা। তাছাড়া দুই দেশের মধ্যে সমাধান না হওয়া বড়  ইস্যুগুলোও থাকবে আলোচনার টেবিলে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মোদির এ সফরে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে অন্তঃবাণিজ্য বাড়াতে সড়ক, রেল ও নৌপথ ছাড়াও সমুদ্র যোগাযোগে গুরত্ব দেবে ঢাকা। তাছাড়া পানিবণ্টন, সীমান্ত হত্যা, বাণিজ্যে অসমতা, আঞ্চলিক সহযোগিতাসহ কোভিড পরবর্তী সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হবে। সই হতে পারে পাঁচ থেকে ছয়টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ)।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে আগামীকাল শুক্রবার সকালে দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এটি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার দ্বিতীয় সফর হবে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, মোদির এই সফরে ব্যবসা-বাণিজ্য, সমুদ্রে মৎস্য আহরণ, পরিবেশগত সুরক্ষা তথা দুর্যোগ প্রশমনে সহযোগিতা, দুই দেশের ন্যাশনাল স্টাফ কলেজের মধ্যে সহযোগিতা, জ্বালানি, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি সহযোগিতাসহ সীমান্ত সুরক্ষা সংক্রান্ত ইস্যুগুলোয় সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।

মোদির সফর নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের অনেক ইস্যু আছে। আমরা মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি সেটায় যোগ দেবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী; এ বিষয়টিতেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছি আমরা। ভারতের সঙ্গে আমাদের যেসব বড় বড় সমস্যা সমাধান হয়নি সেগুলোও আমরা আলোচনায় তুলব।

নরেন্দ্র মোদির এ সফরে ঢাকা-নয়া দিল্লির মধ্যে কয়টি সমঝোতা স্মারক সই হচ্ছে? জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সঠিক সংখ্যা আমি বলতে পারব না। অনেকগুলো সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত হয়েছে। যেগুলো আমাদের প্রধান ইস্যু সেগুলোর ওপরেই স্মারকগুলো হচ্ছে। তবে পাঁচটার মতো হতে পারে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে তিস্তা নিয়ে কোনো অগ্রগতির খবর আসবে না। তবে ছয়টি অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন নিয়ে যে কাজ চলছে সেটিকে আরও দ্রুত সম্পন্ন করতে তাগিদ দিতে পারেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। 

এদিকে নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর নিয়ে গতকাল বুধবার নয়া দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা সাংবাদিকদের জানান, দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সমুদ্রবিষয়ক সমঝোতা স্মারকসহ শিক্ষা, রেলপথ, স্বাস্থ্য এবং সীমান্ত উন্নয়ন বিষয়গুলো আলোচনায় থাকবে। তিস্তা চুক্তি নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি রোহিঙ্গা ইস্যুতে ঢাকাকে সমর্থনের কথা তুলে ধরেন ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব।

এদিকে গত কয়েকদিন থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া নিয়ে অপত্তি তুলেছে কিছু ইসলামিক ও বাম সংগঠন।  আজও মোদির আগমন ঘিরে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে ঢাকায় মোদিবিরোধী মিছিলে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এজন্য বাংলাদেশ সফরকালে মোদি যেসব স্থানে যাবেন সেখানে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করছে সরকার।

রাষ্ট্রীয় অতিথিদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার কথা জানিয়ে আজ সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সাংবাদিকদের জানান, মোদির আগমন ঘিরে যে আন্দোলন হচ্ছে এতে দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে কোনো প্রভাব পড়বে না।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আগামীকাল সকাল ১১টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন নরেন্দ্র মোদি। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর ছাড়াও বিভিন্ন দফতরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা তার সফরসঙ্গী হিসেবে ঢাকায় আসবেন।

রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে। এরপর তিনি সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করবেন। একই দিন বিকেলে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ‘গেস্ট অব অনার’হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন মোদি।

এছাড়া নরেন্দ্র মোদির এই সফরে আরও সাতটি প্রকল্প উদ্বোধনের কথা রয়েছে। এগুলো হলো, শিলাইদহের সংস্কারকৃত কুঠিবাড়ি, মেহেরপুরের মুজিবনগর থেকে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া হয়ে কলকাতা পর্যন্ত স্বাধীনতা সড়ক, মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতি সমাধি, বাংলাদেশের কাছে ভারতের ১০৯টি অ্যাম্বুলেন্স হস্তান্তর, চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চালু, দুটি সীমান্ত হাট চালু এবং স্মারক ডাকটিকিটের মোড়ক উন্মোচন।

সফরের দ্বিতীয় দিন ২৭ মার্চ সকালে তিনি গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ পরিদর্শন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। একই দিনে সাতক্ষীরা এবং গোপালগঞ্জে দুটি মন্দির পরিদর্শন করে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত পরিসরে মতবিনিময় করবেন মোদি। ওইদিন বিকেলে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠক ছাড়াও প্রতিনিধি পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। ওই দিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। পরে ওই রাতেই তিনি দিল্লির উদ্দ্যেশে ঢাকা ছেড়ে যাবেন।

এনআই/এসকেডি