হজযাত্রীদের লাগেজ বিড়ম্বনা: চিঠি দিয়েই থেমে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়-হাব
গত ২১ মে থেকে শুরু হয়েছে পবিত্র হজের ফ্লাইট। প্রথম ৮টি ফ্লাইট সৌদিতে গিয়ে লাগেজ বিড়ম্বনায় পড়ে। তাদের পূর্ব নির্ধারিত হোটেলে না উঠিয়ে কমদামি ফিতরা করা হোটেলে উঠানো হয়। ভিসায় দেওয়া হোটেলের সঙ্গে সৌদির হোটেল মিল না থাকায় তাদের লাগেজ পৌঁছাতে একদিন দেরি হয়। এরপর অন্য একটি এজেন্সি ৩৪ জনের ঠিকানা না পেয়ে সৌদি হজ অফিসে লাগেজ পৌঁছে দেয়।
যদিও এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৯ এজেন্সিকে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়ে দায় সেরেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এজেন্সিদের সংগঠন হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) বলছে মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিচ্ছে, হাবও ব্যবস্থা নেবে।
বিজ্ঞাপন
জানতে চাইলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ অনুবিভাগ) মতিউল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, হজযাত্রীদের যেসব হোটেলে ঠিকানা দিয়ে ভিসা করা হয়েছিল সেই হোটেলে না উঠিয়ে অন্য হোটেলে ওঠানো হয়েছে, এমন অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এই অভিযোগে ৯ এজেন্সিকে শোকজ করা হয়েছে। আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, তা তদন্ত হচ্ছে। প্রমাণ মিললেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। এরপর যারা এর ব্যত্যয় ঘটাচ্ছে তাদের কাউকে কোনও ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। নানা অভিযোগে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি এজেন্সি ও ব্যক্তিকে শোকজ করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, হাজিদের লাগেজ বিড়ম্বনা শুরু হয় ২১ মের প্রথম ফ্লাইট থেকেই। ওইদিন ৮ হজ এজেন্সি হজযাত্রীদের সৌদিতে নির্দিষ্ট হোটেলে ওঠায়নি। শুধু তাই নয়, তাদের কোনও গাইড ছিল না। ফলে হজযাত্রীদের নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৮ হজ এজেন্সিকে কারণ দর্শানো নোটিশ (শোকজ) দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়। এরপর ২৭ মে সৌদিতে ৩৪ জন হজযাত্রী লাগেজ নিয়ে বেশ বিড়ম্বনায় পড়েন। এয়ার ট্রাভেলস নামে এক এজেন্সি ওই ৩৪ জনের ভিসা করানোর সময় যে হোটেলে ঠিকানা দিয়েছিল সৌদিতে পৌঁছানোর পর সেই হোটেলে ওঠায়নি।
হজযাত্রীকে হোটেলে না পেয়ে লাগেজ যায় সৌদি হজ মিশনে
ভিসার সঙ্গে সৌদির বাড়ির ঠিকানা মিল না থাকায় বাংলাদেশ এয়ার ট্রাভেলস নামে এক এজেন্সিকে শোকজ করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। গত ২৭ মে ওই এজেন্সির বিরুদ্ধে সৌদি আরবে যাওয়ার পর ৩৪ হজযাত্রীকে হয়রানির অভিযোগ আনা হয়েছে।
হজ অনুবিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, মঙ্গলবার পর্যন্ত ৩৮ হাজার ২৯ জন হজযাত্রী সৌদিতে পৌঁছেছে। মোট ৯টি এজেন্সিকে শোকজ করা হয়েছে। আরও চারটিকে শোকজ করার প্রক্রিয়াধীন। কর্মকর্তারা বলছেন, হাজিরা যদি অভিযোগ না করে তাহলে আমরা বিষয়টি জানতে পারছি না। তাই কোনও এজেন্সিকে এ ধরনের প্রতারণা করলে সৌদি হজ অফিস বা বাংলাদেশের হজ অফিসকে জানানোর অনুরোধ করেছেন কর্মকর্তারা।
গত ২১ মে বিজি ৩০০৫ নম্বর ফ্লাইটে ৮টি এজেন্সির হজযাত্রী মক্কায় পাঠানো হয়। এসব এজেন্সি হজযাত্রীদের ভিসা যে হোটেলের ঠিকানায় করা হয়েছে সে হোটেলে তাদের না উঠিয়ে মক্কার বিভিন্ন ফিতরা করা হোটেলে তাদের ওঠানো হয়।
মক্কার এ সব হোটেলে হজযাত্রীদের রিসিভ করার জন্য এজেন্সির কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। ফলে হজযাত্রীরা তাদের জন্য নির্ধারিত হোটেল খুঁজে পেতে সমস্যায় পড়েন। ভিসা অনুসারে হোটেল না হওয়ায় তাদের লাগেজ হোটেলে পৌঁছাতে সমস্যা হয়। পরে হজ মিশনের চেষ্টায় বিষয়টি সমাধান হলেও এটি বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি করে।
কর্মকর্তারা বলছেন, হজযাত্রীদের ভাড়া করা বাড়ির ঠিকানা ভিসার সঙ্গে মিল নেই। এ কারণে হজযাত্রীদের লাগেজ নির্দিষ্ট বাড়ি/হোটেলে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এতে হজযাত্রীরা কষ্টের সম্মুখীন হচ্ছেন। সেক্ষেত্রে সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে এবং সরকারের হজ ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট নির্দেশনা উপেক্ষিত হয়েছে ও মক্কা রোড সার্ভিস কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে।
লাগেজ বিড়ম্বনা এড়াতে হজ অফিস উপসচিব পদায়ন
হজযাত্রীদের লাগেজ বিড়ম্বনায় এড়াতে ঢাকার আশকোনায় হজ অফিসে ড. মঞ্জুরুল হক নামে একজন উপ-সচিবকে পদায়ন করা হয়েছে। তিনি মক্কা রোড সার্ভিস কার্যক্রম তদারকি করবেন। সেখানে কোন হজযাত্রী লাগেজ বিড়ম্বনায় পড়লে তার ব্যক্তিগত নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
সার্বিক অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, লাগেজ বিড়ম্বনা জন্য যেসব এজেন্সি দায়ী তাদের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় ও হজ অফিস ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার, যারাই এ ধরনের অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী থাকবেন তাদের বিরুদ্ধে হাব ব্যবস্থা নেবে।
এনএম/এসএম