জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছরে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরে ইসিতে বরাদ্দ বেড়েছে ৭০ শতাংশ। ইসির জন্য বরাদ্দ দেওয়া বেশিরভাগ অর্থই ব্যয় হবে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও উপজেলা পরিষদের সাধারণ নির্বাচনে।

বৃহস্পতিবার (১ জুন) দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বাজেট ডকুমেন্টে দেখা গেছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ইসির জন্য বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা। যা সংশোধিত বাজেটে কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ৪২৩ কোটি ১৩ লাখ ৫২ হাজার টাকা। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ইসি বরাদ্দ পাচ্ছে ২ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ২৮২ কোটি টাকা। বাকি টাকা পরিচালনা খাতে ব্যয় হবে।

ইসির বরাদ্দের প্রধান প্রধান খাতের মধ্যে রয়েছে- দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন, ছয়টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন, নয়টি পৌরসভা সাধারণ নির্বাচন, ৪৫৪টি উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচন, ১০০টি ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ নির্বাচন এবং জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকারের উপনির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পাদন; কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ে জাতীয় ভোটার দিবস উদযাপন; ছবিসহ ভোটার তালিকা হালনাগাদ করণের কার্যক্রম গ্রহণ; পেপার লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয় পত্র প্রস্তুত, মুদ্রণ ও বিতরণ; স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান; শূন্য হতে ১৮ বছর বয়সের নিচে নাগরিক নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান; এনআইডি সিস্টেমের অডিট ও ডকুমেন্টেশন; প্রবাসে অবস্থিত বাংলাদেশি নাগরিকগণকে প্রবাসেই নিবন্ধনকরণ ও স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান; এনআইডি মিনি আর্কাইভ/লাইব্রেরি স্থাপন; বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য যাচাই/সনাক্তকরণ সংক্রান্ত পার্টনার সার্ভিস অব্যাহত রাখা, নির্বাচন কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন, নির্বাচন প্রক্রিয়া ও নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখা।

‘উন্নয়নের অভিযাত্রায় দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’ শিরোনামে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট সংসদে পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিকেল ৩টায় তিনি ডিজিটাল উপস্থাপনার মাধ্যমে বাজেট পেশ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসময় সংসদে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন করা হয়। তারপর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বাজেটে সম্মতি জানিয়ে স্বাক্ষর করেন।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ।

প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ঠিক করা হয়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ।

বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। করবহির্ভূত ও অন্যান্য আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২০ হাজার কোটি টাকা। কর ছাড়া প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদান থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।

ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেওয়া হবে এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হবে এক লাখ দুই হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।

অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ নেওয়া হবে ব্যাংক খাত থেকে। যার পরিমাণ ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এছাড়া সঞ্চয়পত্র থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে ৫ হাজার ১ কোটি টাকা নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার।

এবারের বাজেট আওয়ামী লীগ সরকারের ২৩তম আর বাংলাদেশের ৫২তম বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেট আগামী ২৬ জুন অনুমোদন করা হবে। তার আগে বাজেট নিয়ে সংসদে ৪০ ঘণ্টা আলোচনা হবে। ১ জুলাই থেকে নতুন অর্থবছর শুরু হবে। নতুন অর্থবছর চলবে নতুন বাজেটের বরাদ্দ ও পরিকল্পনা অনুযায়ী।

এসআর/কেএ