নামাজের পরই শুরু হয় এ সংঘর্ষ

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর ঘিরে এর প্রতিবাদে নেমে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন ইসলামী দলগুলোর নেতাকর্মীরা। বায়তুল মোকাররমে হওয়া এ সংঘর্ষে আহত হন অর্ধশতাধিক। তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন।

আহতদের বেশিরভাগই স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মী। এছাড়া হেফাজতে ইসলামের কয়েকজন নেতাকর্মীও হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। সংঘর্ষে আটজন সাংবাদিকও আহত হন বলে জানা গেছে।

শুক্রবার (২৬ মার্চ) বায়তুল মোকাররমে জুমার নামাজ শেষে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ইসলামী দলগুলোর সমর্থকরা মোদিবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে মসজিদ প্রাঙ্গণের ভেতর থেকে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকেন। বাইরে অবস্থান করা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরাও পাল্টা জবাবে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারশেলসহ ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এতে উভয়পক্ষের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন।

আহতরা হলেন- জুয়েল (৩০), শাহিনুর হক শাহিন (৩৫), দুলাল (৪০), নজরুল ইসলাম (৪০), রকি (৩৩), মাহতাব হোসেন তানি (৩৫), দুলাল হোসেন (৪৩), মেহেদী আহমেদ (৫০), আলী আকবর (৪১), বাপ্পী (৩৫), মিরাজ শেখ (৩৮), হুমায়ুন কবীর (৪২), মানিক শেখ (৩৫), গাজী আব্দুল মালেক (৩৬), হাসেম (৪৬), মনির (২৭), নাহিদ (২৬), আলমামুন (২৭), কামরুল হাসান (৩৫), রিয়াজ (২২), সোহেল (২২), দিদার (৩৫), টুটুল (৩৫), ফুয়াদ (৩৪), রিয়াদ (৩৩), আরিফ (২৭), শরীফ (২৫), তারেক (২৬), সোহেল (২৭), শহিদুল্লাহ (৩২), আজিম (৩২), খায়রুল (৩৪), চন্ডল (৩৬), আরিফ (৪৫), মাইদুল দেওয়ান (৩০), জীবন মিয়া (২৮), এস এম মিলন (৩০), গাজী মাজহারুল ইসলাম (৫০), রুবেল মাতবর (৩৮), ইমন (৩০), সোহেল (২৩), আসাদুল (৩০), লতিফ (৪৩), নাদির আহমেদ (৪৫), নেয়ামুল ইসলাম (৩০), সোহেল (২৫), সাজ্জাদ ইসলাম (৩১), আনোয়ার (৪২), দুলাল হোসাইন (৪০), সামি (২৪), মনির (২৪), ইসমাইল (৪৫), শাহ আলম সুমন (৩৪), হাফিজুর (৪১), রমজান আলী (৪২), তৈয়েব হোসেন (৩৪), আজিজ ব্যাপারী (৪৩), জাহাঙ্গীর হোসেন (৫০) ও শাহাদত হোসেন বাবু (৪০)।

এছাড়া হেফাজতে ইসলামের কয়েকজন নেতাকর্মীও আহত হন। তাদের মধ্যে মানিক (২৫), শাহাদাত (১৯) ও রাকিবুল হাসানের (৩৬) অবস্থা গুরুতর।

সরেজমিনে হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, আহতদের সবাই ইটের আঘাতে রক্তাক্ত হয়েছেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক তারেক সাঈদ জানান, নামাজ শেষ হওয়ার পরই তারা মোদিবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। এরপর ইট-পাথর ছুড়তে থাকে। এরা সবাই জামায়াত, শিবির ও হেফাজতের নেতাকর্মী। পেছন থেকে বিএনপি তাদের মদদ দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

আহতদের অধিকাংশই তার অনুসারী বলে দাবি করেন সেচ্ছাসেবক লীগের এই নেতা।

এদিকে, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেও জরুরি বিভাগে মোদিবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন হেফাজতের নেতাকর্মীরা। ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর বাচ্চু মিয়া বলেন, বায়তুল মোকাররমে সংঘর্ষের ঘটনায় প্রায় ১০০ জন আহত হয়ে এখানে এসেছেন। ইট-পাথরের আঘাতে তারা আহত হন।

আন্দোলনকারীদের বায়তুল মোকাররম ত্যাগ

সংঘর্ষের ফলে বাইতুল মোকাররমের উত্তর ও দক্ষিণ গেটে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতির কারণে মসজিদের ভেতরে আশ্রয় নেয় আন্দোলনকারীরা। তাদেরকে সেখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বলে পুলিশ- এক্ষেত্রে তাদের নিরাপদ প্রস্থানের বিষয়টিও পুলিশের পক্ষ নিশ্চিত করা হবে বলে জানানো হয়। তবে আন্দোলনকারীরা আশ্বস্ত না হওয়ায় সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত তারা বায়তুল মোকাররম ত্যাগ করেননি। সন্ধ্যার দিকে পুলিশের ফের আশ্বাসে এবং অবস্থান নেওয়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেওয়া হলে তারা মসজিদ প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।

এদিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সংঘর্ষের সময় রাস্তায় ছড়িয়ে থাকা ইটপাটকেল সরিয়ে রাস্তা পরিষ্কারের কাজ করছেন। আন্দোলনকারীদের দেওয়া আগুনে পুড়ে যাওয়া মোটরসাইকেলের ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে ফেলা হয়। বায়তুল মোকাররম মসজিদ ও রাস্তাগুলোতে পানি ছিটিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে।

ডিবির মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ছাড়াই বিক্ষোভকারীদের বায়তুল মোকাররম ত্যাগ করতে বলা হয়েছে।

এফআর