বিকেল ৫টায় শেষ হয় রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ সরকারি-বেসরকারি অফিসের কর্মঘণ্টা। অফিস টাইম শেষে সবাই ঘরে ফেরার প্রতিযোগিতায় নামেন। তখন সড়কে তৈরি হয় ভয়াবহ যানজট। এর জের টানতে হয় রাত ৯-১০টা পর্যন্ত।

এখন ওই যানজট থেকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিচ্ছে ঢাকাবাসীর জন্য নতুন চালু করা আধুনিক গণপরিবহন মেট্রোরেল। মেট্রোরেল চলাচলের টাইমিং বা সময়ের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় যাত্রীর চাপ ক্রমেই বাড়ছে। 

রোববার (৪ জুন) বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত রাজধানীর আগারগাঁও মেট্রোরেল স্টেশনে ঘুরে দেখা যায়, শত শত মানুষ স্বস্তির এই বাহনে চড়ছেন। নিচতলার সিঁড়ি থেকে শুরু করে কনকোর্স লেভেল পর্যন্ত যেন ‘মানুষের হাট বসেছে। কেউ বাস থেকে নেমে সোজা ব্যাগ নিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন স্টেশনের দিকে আবার কেউ দলগতভাবে সহকর্মীদের সঙ্গে স্টেশন ব্যবহার করে উড়াল ট্রেনে চড়ছেন। 

টিকিট পাঞ্চ করে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করছেন যাত্রীরা/ ছবি : ঢাকা পোস্ট

যাত্রীদের মধ্যে যাদের কাছে এমআরটি পাস (পারমানেন্ট জার্নি) আছে তারা সহসাই কনকোর্স লেভেলের চেক পয়েন্ট পার হয়ে মেট্রোরেলের প্ল্যাটফর্মে উঠছেন। আর যাদের কাছে এমআরটি পাস নেই তারা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট অফিস মেশিন (টম) অথবা টিকিট ভেন্ডিং মেশিন (টিভিএম) ব্যবহার করে সিঙ্গেল জার্নির টিকিট সংগ্রহ করছেন।

এখানে আসা যাত্রীদের অনেকের কাছে এখন সড়কের ভয়াবহ যানজট এড়ানোর উপায় মেট্রোরেল।

অফিসগামী যাত্রীদের সুবিধার্থে গত ৩১ মে থেকে মেট্রোরেল চলছে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। সেই সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি পরিবর্তন করে মঙ্গলবারের পরিবর্তে শুক্রবার করা হয়েছে।

ছবি : ঢাকা পোস্ট

আগারগাঁও স্টেশনের কনকোর্স লেভেলে দাঁড়িয়ে গণমাধ্যমকর্মী আজাদ বেগ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বাসা মিরপুর-১২ নম্বরে। মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বরের যানজট এড়াতে এখন মেট্রোরেল ব্যবহার করি। আমি মেট্রোরেলের নিয়মিত যাত্রী হিসেবে এমআরটি পাস ব্যবহার করি। কনকোর্স লেভেলে এসে আমাকে টিকিট সংগ্রহ করার জন্য অপেক্ষা করতে হয় না।

তিনি আরও বলেন, যখন মেট্রোরেল ছিল না তখন কারওয়ানবাজার থেকে বাসে করে মিরপুর-১২ নম্বরে যেতাম। মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বরের যানজট চরম একটা ভোগান্তি ছিল। বাসায় যেতে আমার অন্তত দুই ঘণ্টা সময় লাগত। মেট্রোরেলের সুবাদে এখন সর্বোচ্চ ২৫ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে আমি বাসায় যেতে পারি।

কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করছেন যাত্রীরা/ ছবি : ঢাকা পোস্ট

সরকারি কর্মকর্তা নাজমুল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার অফিস আগারগাঁওয়ে। অফিস শেষে উত্তরায় নিজের বাসায় ফিরছি। অফিস টাইমে মেট্রোরেল চালু হওয়ায় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ। এটি আমাদের যাতায়াত সহজ করে দিয়েছে। যখন পুরো ঢাকা শহর মেট্রোরেল নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে তখন মনে হয় মেট্রোরেলেই সবচেয়ে বেশি যাত্রী থাকবে।

তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে টিকিট ইনভ্যালিড দেখানোসহ দুই-একটি জটিলতায় পড়তে হয়। এটা যত দ্রুত সলভ করা সম্ভব হবে তত যাত্রীদের সময় বাঁচবে। কারণ একটি টিকিট ইনভ্যালিড দেখালে সেটি কাউন্টার থেকে ঠিক করে নিয়ে আসতে অন্তত আরো দশ মিনিট সময় ব্যয় হয়। বিষয়টি দেখার জন্য কর্তৃপক্ষকে আমি অনুরোধ জানাব।

টিকিট কাউন্টারের সামনে যাত্রীদের ভিড়/ ছবি : ঢাকা পোস্ট

আগারগাঁও স্টেশন থেকে যারা মেট্রোরেলে উঠছেন তাদের গন্তব্য বেশিরভাগই মিরপুরের বিভিন্ন স্টেশনে। তারা শুধু মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বরের যানজট এড়াতে মেট্রোরেলে চড়ছেন।

অন্যদিকে যারা আগারগাঁও স্টেশনে এসে নামছেন তাদের বেশিরভাগেরই প্রারম্ভিক স্টেশন ছিল উত্তরা উত্তর।

আগারগাঁও স্টেশনে নামা নুবায়েত প্রত্যয় ঢাকা পোস্টকে বলেন, উত্তরায় আমার অফিস। অফিস থেকে মেট্রো স্টেশনে আসতে ৩০ টাকা খরচ হয়। এরপর আগারগাঁও স্টেশনে নেমে তালতলার বাসায় যাই। এই পথ পাড়ি দিতে যানজট পেরিয়ে অন্তত দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় লাগত। এখন সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট সময়ের মধ্যে নিজের বাসায় পৌঁছাতে পারি। ঢাকা শহরের মতো যানজটের শহরে মেট্রোরেল অবশ্যই স্বস্তিকর।

ছবি : ঢাকা পোস্ট

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) এমডি এম এ এন সিদ্দিক জানিয়েছেন, আমরা আগেই বলেছি মেট্রোরেলের চলাচলে ক্রমান্বয়ে সময় বৃদ্ধি করব। জনগণের চাহিদা বিবেচনায় এখন নতুন সময়সূচিতে চলছে। 

এদিকে রোববার (৪ জুন) ডিএমটিসিএলের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বিকেল ৪টা ৫৩ মিনিটে প্রকাশিত এক পোস্টে জানানো হয়েছে, মেট্রোরেলে চলাচলকারী যাত্রীদের সুবিধার্থে সোমবার (৫ জুন) থেকে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত বিকেল ৬টা ১ মিনিট থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ‘অফ পিক আওয়ারের’ হেডওয়ে ১৫ মিনিটের পরিবর্তে ১২ মিনিট হবে।

অর্থাৎ ৫ জুন থেকে ১২ ঘণ্টা মেট্রোরেল চলাচলের মধ্যে ১০ ঘণ্টার হেডওয়ে থাকবে আগের মতো এবং ২ ঘণ্টার হেডওয়ে থাকবে ১২ মিনিট।

এমএইচএন/জেডএস/জেএস