পরিবেশ রক্ষা ও দূষণ প্রতিরোধে গ্রিন ডেভলাপমেন্ট বা সবুজীকরণে গুরুত্বারোপের আহ্বান জানিয়েছে আওয়াজ ফাউন্ডেশন। সোমবার (৫ জুন) প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে সংগঠনের নেতারা এসব কথা বলেন।

আওয়াজ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাজমা আক্তার বলেন, পরিবেশের জন্য প্রতিটি দিনই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সকলের নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে পরিবেশ উন্নয়নের জন্য এখনি পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। সমগ্র বিশ্ব পরিবেশের বিপর্যয়ের কারণে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

তিনি বলেন, কোভিড পরবর্তী সময়ে পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি মুদ্রাস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সবমিলিয়ে নিম্ন শ্রেণির মানুষের এক নতুন সংকট তৈরি হয়েছে, যার ফলে এই শ্রেণির মানুষ আরো দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে পড়েছে। পরিবেশ দূষণজনিত সমস্যা এ সংকটের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতেও ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করছে। কাজেই এই বিপর্যয় রুখে দিতে আমাদের সকলকে সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বনভূমির গাছপালা কেটে ফেলা, শিল্প কারখানার ধোঁয়া ও দূষিত বর্জ্য পদার্থ প্রকৃতির সঙ্গে মিশে পরিবেশকে মারাত্মক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অন্যান্য সকল ক্ষেত্রের মতো পোশাকশিল্পেও পরিবেশ দূষণের প্রভাব বহুদিন ধরে পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রকৃতি বিনাশ করে এভাবে শিল্প কারখানা ও স্থাপত্য নির্মাণ চলতে থাকলে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। সমগ্র বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশকেও এখন টেকসই উন্নতির জন্য পরিবেশ রক্ষার কথা ভাবতে হচ্ছে। এছাড়া গ্রিন ডেভলাপমেন্ট নিয়ে ও পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোও বেশ সোচ্চার এবং অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।

পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে তাদের প্রস্তাবিত পদক্ষেপসমূহ হলো-

• পরিবেশ রক্ষায় সকলের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

• গ্রিন ডেভলাপমেন্ট (সবুজীকরণ) নিয়ে আর ও কাজ করা। শিল্প কারখানায় রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারের দিক নিদের্শনা সঠিকভাবে মেনে চলতে হবে। ইটিপির মাধ্যমে ময়লা জলনিষ্কাশন করে পূর্ণ ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা। শিল্প কারখানার বস্ত্র ও রাসায়নিক পদার্থের সৃষ্ট ব্যবস্থাপনায় কার্যকরী সরকারি পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। এছাড়া পাহাড় ও গাছপালা কেটে, নদী-নালা ভরাট করে শিল্পকারখানা ও স্থাপনা নির্মাণ রোধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

• পরিবেশ আইন অমান্যকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

• বায়ার ও ব্র্যান্ডকে পরিবেশবান্ধব শিল্পকারখানা তৈরিতে দায়িত্ব ও গ্রহণের মাধ্যমে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।

• বায়ার ও ব্র্যান্ডকে পণ্যের ও শ্রমের ন্যায্যমূল্য প্রদান করে পরিবেশ উন্নয়নে সহায়তা করতে হবে। প্লাস্টিক দ্রব্য ব্যবহার রোধে মালিক, শ্রমিক, বায়ার, ব্র্যান্ড, দেশি-বিদেশি উন্নয়ন সংস্থা ও সরকার সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করে পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে।

• পরিবেশবান্ধব ব্যবসা নীতি প্রণয়ন করতে হবে।

• পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস সর্বোপরি প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার্থে সরকারকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।

• বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বে ফার্স্ট—ফ্যাশনের জন্য শ্রমিকদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ বন্ধ করার মাধ্যমে পোষাক শিল্পের শ্রমিকদের জন্য কর্মপরিবেশ তৈরি করতে হবে।

• পরিবেশ দূষণের ফলে শ্রমিকরা যেসব স্বাস্থ্যহানির স্বীকার হচ্ছে তা রোধকল্পে সরকারকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন- আওয়াজ ফাউন্ডেশনের সভাপতি মমতাজ বেগম, সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক খাদিজা আক্তার, আরএমজি ফোরামের সভাপতি লিলি বেগম ও সাধারণ সম্পাদক ঊর্মি আক্তার।

ওএফএ/এমজে