জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) ডেপুটি হাইকমিশনার কেলি ক্লেমেন্টস ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশের ভূমিকাকে স্বাগত জানিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি রোহিঙ্গাদের জীবিকা ও স্বনির্ভরতামূলক কর্মকাণ্ডের উদ্যোগের আহ্বান জানান, যেন মানবিক সংকটের আরও অবনতি না হয়।

সোমবার (৫ জুন) ইউএনএইচসিআরের ঢাকা অফিস থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

চার দিনব্যাপী বাংলাদেশ সফরের পর ডেপুটি হাইকমিশনার বলেন, স্থানীয় জনগণকে সাহায্যের পাশাপাশি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যয় ও জীবন মান উন্নয়নে জোর প্রচেষ্টা দেওয়ার সময় এসেছে। যেন প্রত্যাবাসনের উপযুক্ত পরিস্থিতি তৈরি হলে তারা বাংলাদেশে পাওয়া দক্ষতা, প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা নিয়ে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে।

কক্সবাজারে শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করার পর কেলি বলেন, আমরা মিয়ানমারে অনুকূল পরিস্থিতি তৈরির জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি যাতে শরণার্থীরা নিরাপদে ও মর্যাদার সাথে ফিরে যেতে পারে। তাদের স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসন যেন টেকসই হয়। যেসব শরণার্থী ফিরে যেতে চান, তাদের পরিষ্কার ও সম্পূর্ণ তথ্য পাওয়ার ব্যবস্থা থাকা উচিত। এর ওপর ভিত্তি করে যেন স্বাধীন ও সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, কোনো পরিস্থিতিতেই শরণার্থীদের ফেরত যেতে বাধ্য করা উচিত নয়। আর বাংলাদেশ সরকার আমাদের আশ্বাস দিয়েছে শরণার্থীদের জোর করা হবে না।

ইউএনএইচসিআর বলছে, শিবিরে বসবাসকারী রোহিঙ্গা শরণার্থীরা তাদের মৌলিক চাহিদার জন্য মানবিক সাহায্যের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। তথাপি এ সহায়তার জন্য ন্যূনতম তহবিলও এখন আর পাওয়া যাচ্ছে না। ১ জুন জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি তহবিলের অভাবে তিন মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো খাদ্য সহায়তা কমাতে বাধ্য হয়েছে। মানবিক সংস্থাগুলো এখন বাধ্য হচ্ছে শুধুমাত্র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চাহিদাগুলো চিহ্নিত করে কাজ করতে। যার ফলে অনেক মৌলিক চাহিদা অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে। আর এর পরিণাম হচ্ছে মারাত্মক।

ইউএনএইচসিআর উদ্বিগ্ন যে এই বছরের শুরুতে একটি বড় অগ্নিকাণ্ড ও কয়েক সপ্তাহ আগে ঘূর্ণিঝড় মোখার পর এই হ্রাসকৃত রেশনের কারণে শরণার্থীদের মধ্যে অপুষ্টির হার, লেখাপড়া থেকে ঝরে পড়া, বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রম এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ঘটনা বৃদ্ধি পাবে। পর্যাপ্ত সহায়তার অভাবে শরণার্থীদের মরিয়া পদক্ষেপ গ্রহণের ঝুঁকি রয়ে যায়।

কেলি বলেন, রোহিঙ্গাদের কিছু আয় করার সুযোগ দেওয়া হলে তারা তাদের বেশিরভাগ খাবার নিজেরাই কিনতে পারবে। তারা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে চান। মোবাইল আর্থিক পরিষেবার (ফাইন্যানশিয়াল সার্ভিস) সুযোগ থাকলে তারা নিজে কেনাকাটার মাধ্যমে তাদের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে।

কক্সবাজার ও ভাসানচরের ৯ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং স্থানীয় ৪ লাখ ৯৫ হাজার বাংলাদেশিসহ প্রায় ১.৪৭ মিলিয়ন মানুষকে সহায়তার জন্য মানবিক সংস্থাগুলো এ বছর ৮৭৬ মিলিয়ন ডলারের বেশি সাহায্যের আবেদন করেছে। জুন পর্যন্ত জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানের মাত্র ২৪ শতাংশের অর্থায়ন করা সম্ভব হয়েছে।

এনআই/ওএফ