জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেছেন, বাঁচার দাবি ঐতিহাসিক ৬ দফার মধ্যে ছিল বাঙালি জাতির মুক্তি। পিতা মুজিব বাঁচার কথা বলেছেন। কেন তিনি বাঁচার কথা বলেছেন- কারণ তিনি দেখেছেন ঐতিহ্যপূর্ণ এই অঞ্চল বিভিন্ন দিক থেকে বঞ্চিত, নিগৃহীত ছিল। সর্বশেষ পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধু সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিল পাকিস্তান এক অলিক রাষ্ট্র। এর মধ্য দিয়ে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। 

মঙ্গলবার (৬ জুন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) ঐতিহাসিক ছয় দফা উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। 

মশিউর রহমান বলেন, কেন বঙ্গবন্ধু রচনা করলেন ছয় দফা। তার আত্মোপলব্ধি থেকে তিনি এটি রচনা করলেন। আত্মোপলব্ধি এই- পূর্ব পাকিস্তানের শোষণ থেকে মুক্তি। প্রতিটি মানুষের মুক্তি। প্রতিটি মানুষ যেন স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়, আত্মনির্ভর হয়, দারিদ্র বিমোচন হয়। পিতা মুজিব শুধুমাত্র ৬ দফার আগে তিনমাসে ৮ বার কারাগারে গেছেন। তাকে আটক করা হয়েছে। এমন করে জীবনে এক যুগেরও বেশি সময়ে একজন মানুষ ক্রমাগত কারাগারে কাটিয়েছেন। ৬ দফা হলো সেই মুক্তির রচনা। যেখানে কারাগারে বসে বসে পিতা-পুত্রের মুখ দেখতে পারতেন। স্ত্রী কন্যাদের আরও বেশি স্নেহ-ভালোবাসা দিতে পারতেন। কিন্তু পিতা মুজিব সেই সময়ে রচনা করেছেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মানচিত্র, লাল-সবুজের পতাকা।

তিনি বলেন, ছয় দফা মুক্তির দাবিতে যা ছিল সেটির সঙ্গে মিল খুঁজে পাই বঙ্গবন্ধু কন্যার ভোট আর ভাতের অধিকারের আন্দোলনের। তারপরে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার আন্দোলন, ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারাবাহিকতায় অত:পর স্মার্ট বাংলাদেশ। অতি সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু কন্যা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সমতার কূটনীতির। পদ্মাসেতুর চ্যালেঞ্জ গ্রহণের সময় অনেকে বলেছিল বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করে মুখ থুবড়ে পড়বে কি না। কিন্তু মুখ থুবড়ে পড়েনি। বাংলাদেশ মাথা উচু করে, আত্মনির্ভরশীল হয়ে, স্বাবলম্বী হয়ে আত্মমর্যাদার পদ্মাসেতু নির্মাণ করেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যার সমতার কূটনীতির সাহসী যে পদক্ষেপ এটিই বাংলাদেশ, শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়ানোর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এজন্য আমি বঙ্গবন্ধু কন্যাকে অভিনন্দন জানাই, স্বাগত জানাই, সেলুট জানাই।

উপাচার্য আরও বলেন, বাঁচার দাবি থেকে ক্রমাগত আজকে যে সমতার কূটনীতির আত্মমর্যাদা-এই সবকিছু সম্ভব হয়েছে পিতা এবং কন্যার রক্তধারায়। বাংলাদেশে এর বাইরে যা ছিল তা ছিল অগণতান্ত্রিক ও সামরিক শাসন। যেখানে ছিল গণতন্ত্রহীনতা। বঙ্গবন্ধু কন্যা যখন এই গণতন্ত্রহীনতা থেকে দেশের মানুষের মুক্তির জন্য অশ্রুসজল চোখে দেশে ফিরেছিলেন। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে পিতার রক্তাক্ত বাড়িতে ঢুকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ঢুকতে দেয়া হয়নি। এমনকি মোনাজাতও করতে দেয়া হয়নি। সেদিন থেকে তিনি ঠিক করেছেন যেমন করে হোক পশ্চিম পাকিস্তানের রোষানল থেকে বাঁচতে হবে। একইভাবে গণতন্ত্রহীনতা, সামরিক শাসন থেকে মুক্তির জন্য ভোট এবং ভাতের অধিকারের জন্য লড়াই করেছেন। এভাবেই দেশকে আত্মমর্যাদায় বলীয়ান করেছেন।

এমএম/এমজে