দেশের উন্নয়ন নিশ্চিতে গুণগত উপাত্ত ব্যবস্থাপনা এবং টেকসই পরিসংখ্যান প্রণয়ন জরুরি। সঠিক পরিকল্পনা করতে সময়োপযোগী ও নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান প্রণয়নে জাতীয় পরিসংখ্যান উন্নয়ন কৌশলপত্র (এনএসডিএস) ৬১টি লক্ষ্যের আওতায় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ১৬টি কার্যক্রম পূর্ণ বাস্তবায়ন করেছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক মো. দিলদার হোসেন।

বুধবার (৭ জুন) রাজধানীর হোটেল শেরাটনে বিবিএস আয়োজিত জাতীয় পরিসংখ্যান উন্নয়ন কৌশল পত্র প্রণয়ন শীর্ষক কর্মশালায় এনএসডিএস নিয়ে নানা বিষয় উঠে আসে। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন, বিবিএস মহাপরিচালক মো. মতিয়ার রহমান, এনএসডিএস প্রকল্প পরিচালক মো. দিলদার হোসেন কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন।

এনএসডিএস প্রকল্পের পরিচালক মো. দিলদার হোসেন বলেন, বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এনএসডিএস হলো দেশের পরিসংখ্যান ব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত একটি বিস্তারিত, বাস্তবসম্মত, অংশগ্রহণমূলক, পরিবর্তনশীল ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পরিকল্পনা দলিল। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বিবিএস দেশের পরিসংখ্যান ব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নতিকল্পে জাতীয় পরিসংখ্যান উন্নয়ন কৌশলপত্র যা ২৮ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মন্ত্রিপরিষদ অনুমোদিত হয়।

তিনি বলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রমাণক, নির্ভর পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে গুণগত উপাত্ত ব্যবস্থাপনা ও টেকসই পরিসংখ্যান প্রণয়ন আবশ্যক। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে সঠিক, সময়োপযোগী ও নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান প্রণয়নের জন্য এনএসডিএস ৬১টি কৌশলগত লক্ষ্যের আওতায় বিস্তারিত বাস্তবায়ন কার্যক্রম চিহ্নিত করে কর্মপরিকল্পনা গৃহীত হয়। ইতোমধ্যে বিবিএস ১৬টি কার্যক্রম পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়েছে। বর্তমানে এনএসডিএস টেকসই পরিসংখ্যান প্রণয়নের একটি সমন্বিত বাস্তবায়ন কাঠামো হিসেবে কাজ করছে। 

তিনি বলেন, সরকার পরিসংখ্যান ব্যবস্থাকে অধিকতর যুগোপযোগী, শক্তিশালী ও সুসংহত করার জন্য ২০১০ সালে ‘পরিসংখ্যান বিভাগ’ পুনর্গঠন করে যা ২০১২ সালে ‘পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ নামে সম্প্রসারিত হয়। পরিসংখ্যান ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনগত সুদৃঢ় ভিত্তি দেওয়ার জন্য দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪২ বছর পর পরিসংখ্যান আইন, ২০১৩ প্রণয়ন করা হয়। এ আইনের ধারাতে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জাতীয় পরিসংখ্যান উন্নয়ন কৌশলপত্র প্রবর্তন ও সময় সময় হালনাগাদ করার কথা উল্লেখ আছে।

দিলদার হোসেন বলেন, এনএসডিএস একটি বৈশ্বিক ধারণা যার উৎপত্তি হয় ২০০৪ সালে মরক্কোর মারাকাস শহরে ঘোষণার মাধ্যমে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ, উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কার্যক্রমে সহযোগিতা করার লক্ষ্যে মূলত এ ধারণার সৃষ্টি হয়। এ উদ্যোগটি বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ও আন্তর্জাতিক সংস্থা এটা বাস্তবায়নে পাশে আছে।

বিবিএস জানায়, বিবিএস প্রথাগতভাবেই পরিসংখ্যান উন্নয়ন নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং সামগ্রিক উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যেহেতু ২০১৩ সালে প্রণীত এনএসডিএসের চলতি বছরের মেয়াদ জুনে শেষ হবে, সে কারণে বর্তমানে ক্রমবর্ধমান পরিসংখ্যানিক চাহিদা পূরণ ও এসডিজি পরিবীক্ষণে পরিসংখ্যানের গুরুত্ব বিবেচনায় এ দলিলটি পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জনপূর্বক হালনাগাদ করা প্রয়োজন। প্রস্তাবিত সংশোধিত এনএসডিএস-এ চলমান ডাটা গ্যাপ ও ভবিষ্যৎ ডাটার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় এনে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম/ কমপোনেন্ট অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

প্রকল্পের পরিচালক বলেন, গত দশ বছরে পৃথিবীতে আর্থসামাজিক ও জনমিতিক ক্ষেত্রে বহু পরিবর্তন/রূপান্তর ঘটেছে। এমডিজি শেষে এসডিজি গৃহীত হয়। বাংলাদেশে অষ্টম পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনা, ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ও প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-৪১) গৃহীত হয়। ইতঃপূর্বে প্রণীত এনএসডিএসের মেয়াদ প্রায় শেষ হওয়ায় এবং উন্নয়ন পরিকল্পনায় বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্তি ও ভবিষ্যতের সম্ভাব্য প্রয়োজনীয়তাসমূহ বিবেচনায় এনে এনএসডিএস পুনর্বিন্যাস/ হালনাগাদ আবশ্যক। এ লক্ষ্যে গত ১-২ মার্চ পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ এবং বিবিএসের কর্মকর্তাদের নিয়ে দুই দিনব্যাপী কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

কর্মশালায় প্রাপ্ত সুপারিশগুলো সংশোধন ও হালনাগাদ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি বিবেচনায় আছে। অন্যান্য অংশীজনদের মতামত সুপারিশ গ্রহণের জন্য পর্যায়ক্রমে আরও কর্মশালা আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। গাইডলাইন অনুযায়ী সময়োচিত, নির্ভুল এবং নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান প্রণয়নের লক্ষ্যে এনএসডিএস প্রণয়ন প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া প্রয়োজন। সে কারণে সব অংশীজনের মতামত গ্রহণ আবশ্যক। এক্ষেত্রে আমাদের অগ্রাধিকারগুলো চিহ্নিত করে কৌশলগত লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। প্রয়োজনীয় কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন পর্যায়ে পরিসংখ্যান ব্যবস্থাপনা জোরদার ও সমন্বয় ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস করতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ে পরিসংখ্যান প্রণয়ন ও এর ব্যবহার বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।

এসআর/কেএ