ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা। হাসপাতাল ভবনের ভেতরে উপরে ঘুরছে পাখা আর নিচে চলছে টেবিল ফ্যান। এরপরও গরমে অতিষ্ঠ সবাই।

সারা দেশে চলছে দাবদাহ, সেইসঙ্গে চলছে লোডশেডিং। এর প্রভাব পড়েছে ঢামেক হাসপাতালেও। এখানে গরমের কারণে রোগীর সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। তীব্র গরমে হাসপাতালের বাইরে গাছের ছায়ায় পাটি বিছিয়ে বসে আছেন রোগীর স্বজনরা।

বুধবার (৭ জুন) দুপুরে ঢামেক হাসপাতালে সরজমিনে ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। 

হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের বারান্দায় কথা হয় এক শিশু রোগীর মা বেবি আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, বাচ্চা এখনো ঠিকমতো খাচ্ছে না। শুধু কান্নাকাটি করে। এজন্য ডাক্তার স্যালাইন দিয়েছেন। এখানে তিনদিন ধরে ভর্তি আছি। দুপুর হলে গরমে টেকা যায় না। কী কষ্টের মধ্যে যে এখানে দিন যাচ্ছে, বলে বোঝাতে পারব না।

হাসপাতালের এক কর্মচারী জানান, শিশু ওয়ার্ডে রোগীর অতিরিক্ত চাপ। একটি বেডে দুই থেকে তিনজন করে শিশু রাখা হয়েছে। এই গরমে যেখানে একটি বেডে একজনকে রাখাই কষ্ট, সেখানে দুই থেকে তিনজনকে রাখা হয়েছে। একেক ধরনের রোগীর একেক ধরনের সমস্যা রয়েছে। যদি এক বেডে বেশি করে রোগী রাখা হয় তাহলে সেই রোগীদের ইনফেকশনও তো হতে পারে। বর্তমানে যে পরিমাণ গরম তাতে শিশুদের অনেক বেশি কষ্ট হচ্ছে।

হাসপাতালের ভেতরে রোগীর চিকিৎসা চলছে বাইরে আম গাছের নিচে বসে আসেন স্বজন মাসুদ রানা। তিনি বলেন, উপরে ফ্যান চলুক আর নিচে ফ্যান চলুক... কিছুতেই শরীরে ঠিকমতো বাতাস লাগে না। যেটুকু বাতাস লাগে সেটাও গরম। তাই সামান্য বাতাসের জন্য বাইরে গাছের নিচে পাটি বিছিয়ে শুয়ে আছি। কিছুক্ষণ পরপর আবার রোগীর কাছ থেকে ঘুরে আসছি।

এ ব্যাপারে ঢামেক হাসপাতালের শিশু বহির্বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মো. শাহেদুর রহমান সোহাগ বলেন, গরমের কারণে বিভিন্ন রোগ নিয়ে দেশের নানা প্রান্ত থেকে রোগী আসছে। এর মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ শিশুর সর্দি-জ্বর ও হাঁপানি। এছাড়া জন্ডিস, টাইফয়েড ও ডায়েরিয়ার রোগীও তুলনামূলকভাবে বেড়েছে।

জানতে চাইলে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, গরমের কারণে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সব রোগীই কষ্টে আছে। আমাদের যেখানে যেখানে ফ্যানে সমস্যা আছে সেগুলো আমরা ঠিক করে দিচ্ছি। প্রায় দুইশ’ নতুন ফ্যান লাগানো হয়েছে। আমরা সবাইকে বলছি, বেশি লোক রোগীর কাছাকাছি থাকবেন না। অতিরিক্ত অ্যাটেনডেন্ট কমলে গরম কিছুটা কম লাগবে। আপনারা জানেন, আমাদের এখানে একবার ফ্যান চালু হলে শীতের সময় পর্যন্ত সেই ফ‍্যানটি আর বন্ধ হয় না। 

তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ যে জায়গাগুলোতে অতিরিক্ত ফ্যান লাগানো আছে সেগুলো আমরা বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমরা মানবিক দিক চিন্তা করে অনেক সময় অনেক কিছু করতে পারি না। এই গরমে উপরে ফ্যান চললেও নিচে অতিরিক্ত ফ্যান লাগানো আছে। সেগুলো আমরা চাইলেই খুলে দিতে পারি না। নিচের ফ্যানের বাতাসে রোগীরা যদি একটু আরাম পায় তাহলে সেটি আমরা অনেক সময় ওভারলুক করে যাই। আমাদের এনআইসিইউ, পিআইসিইউ ও অপারেশন থিয়েটারসহ আরও বেশ কয়েক জায়গায় এসি লাগানো আছে। কিন্তু সব ওয়ার্ডে তো এসি লাগানো সম্ভব নয়। হাসপাতালটিকে সংস্কার করা হবে। তখন আর এই ধরনের সমস্যা থাকবে না।

এসএএ/কেএ