কয়লা সংকটে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সারা দেশে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে গেছে। গরম আর লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিদ্যুৎ না থাকায় মানুষের অতি প্রয়োজনীয় ঘুমের সময়ও কমে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যক্তি পর্যায়ে মানুষ এখন ভরসা করছে আইপিএসের ওপর।

ইন্সট্যান্ট পাওয়ার সাপ্লাই বা আইপিএস লাইনে স্বাভাবিক সরবরাহ থাকার সময় বিদ্যুৎ জমা করে এবং পরে লোডশেডিংয়ের সময় ওই জমাকৃত বিদ্যুৎ ঘরে সরবরাহ করে। লোডশেডিংয়ের প্রভাবে বাজারে হঠাৎ করে চাহিদা বেড়ে গেছে আইপিএসের। যাদের সামর্থ্য আছে, তারা প্রায় সবাই আইপিএস কিনছেন। 

ক্রেতারা বলছেন, এটি এখন অতি জরুরি পণ্যের তালিকায় পড়ে গেছে। বিক্রেতারা বলছেন, গত ৫ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে বেশি চাহিদা বেড়েছে আইপিএসের। হঠাৎ করে চাহিদা বাড়ায় বাজারে আইপিএসের ব্যাটারির সংকট দেখা দিয়েছে। চাহিদা মতো মেশিন দিতে পারলেও ব্যাটারি দিতে সময় লাগছে সরবরাহকারীদের।

রাজধানীর কলাবাগান, জিগাতলা ও মোহাম্মদপুর ঘুরে আইপিএস বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছরই গরমের সময় আইপিএসের চাহিদা থাকে বাজারে। তখন যে পরিমাণ চাহিদা থাকে, সেটাকে রেগুলার সেল বলা যায়। কিন্তু গত ৭ দিনে যে চাহিদা বাজারে তৈরি হয়েছে তা একেবারেই অস্বাভাবিক। আইপিএস স্টক করার জন্য কেউ একবারে বেশি কিনে নিচ্ছে, বিষয়টা এমন নয়। ভোক্তা পর্যায়ের একক ক্রেতারাই এটি কিনছেন।

তারা আরও জানিয়েছেন, আগে সমাজের স্বচ্ছল ব্যক্তিরাই কেবল আইপিএস কিনতেন, এখন কম আয়ের মানুষেরাও ধার করে হলেও আইপিএস কিনছেন।

জিগাতলার লিংকন ইলেকট্রনিক্সের প্রোপাইটার মো. সৈকত হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ১০ দিনে আইপিএস বিক্রির পরিমাণ বেড়ে গেছে অন্তত ১০ গুণ। গত কয়েক বছরেও এই পরিমাণ আইপিএস কখনো বিক্রি করিনি।

তিনি জানান, নতুন করে যে ক্রেতারা আসছেন তারা বলছেন, অন্তত রাতে শান্তিতে ঘুমানোর জন্য তাদের আইপিএস দরকার। কারণ এই শহরে বসে খাওয়ার মতো কেউ নেই। সবাইকে দিনের বেলা কাজ করতে হয় এবং রাতে ঘুমাতে হয়। লোডশেডিংয়ের কারণে এখন রাতেও ঘুমাতে পারছেন না অনেকে।  তাই বাধ্য হয়ে ধার-দেনা করে হলেও আইপিএস কিনছেন তারা।

কলাবাগান এলাকার জিকো কর্পোরেশনের স্বত্বাধিকারী জামিল হোসেন বলেন, গত বছর যখন ন্যাশনাল গ্রিডে দুর্ঘটনা হলো তখন আইপিএসের চাহিদা একটু বেড়েছিল। এখন আবার আইপিএস বিক্রির ধুম পড়েছে। আমরা কোম্পানিগুলোর কাছে চাহিদা দিয়েও উপযুক্ত পরিমাণ পণ্য পাচ্ছি না। কারণ তারাও হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে।

মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড এলাকার এমকো ট্রেডার্সের প্রোপ্রাইটর মো. রুহুল আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, হঠাৎ করেই আইপিএসের চাহিদা বেড়ে গেছে। চাহিদা মতো যোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, কারণ ব্যাটারির সংকট রয়েছে‌। ডেলিভারি দিতে দুই-এক দিন সময় লাগছে।

তিনি বলেন, বাজারে চাহিদার শীর্ষ আছে তিন লাইট, তিন ফ্যানের আইপিএস সিস্টেম‌। ২ ফ্যান, ২ লাইটের আইপিএস এবং ৩ ফ্যান, ৩ লাইটের আইপিএসের মধ্যে টাকার ব্যবধান মাত্র তিন থেকে চার হাজার। ফলে মানুষ তিন ফ্যান, তিন লাইটের আইপিএস সিস্টেমে বেশি ঝুঁকছে।

ওই দোকানে দাঁড়িয়ে কথা হয় ক্রেতা আব্দুল্লাহ আল হাসানের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক ঘন্টা পরপর বিদ্যুৎ আসে আর যায়। এভাবে আর কতদিন। বাসায় শিশু আছে, আমাদেরও তো রাতে ঘুম হয় না। তাই বাধ্য হয়ে এটি নিতে হচ্ছে।

বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আইপিএস বিভিন্ন দামে পাওয়া যাচ্ছে। রহিম আফরোজের এক লাইট এক ফ্যানের আইপিএস সেটের দাম ২১ হাজার টাকা। ৩ লাইট, ৩ ফ্যানের সেটের দাম ২৭ হাজার টাকা; ২ লাইট ২ ফ্যানের দাম চব্বিশ হাজার টাকা। আর ৪ ফ্যান ৪ লাইটের আইপিএস সিস্টেমের দাম ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা‌।

আইপিএস যেভাবে কাজ করে

ইন্সট্যান্ট পাওয়ার সাপ্লাই বা আইপিএস মূলত পাওয়ার স্টোরেজ হিসেবে কাজ করে। আইপিএসের মূল ডিভাইসের বাইরে ক্যাপাসিটি অনুযায়ী আলাদা করে ব্যাটারি লাগানো থাকে। মূল ডিভাইসটি মেইন লাইন থেকে বিদ্যুৎ সংগ্রহ করে ওই ব্যাটারিতে বিদ্যুৎশক্তি জমা রাখে। মেইন লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে সংযুক্ত লাইনগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আইপিএস। এটি ক্যাপাসিটি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ব্যাকআপ দিয়ে থাকে।

বাজারে আইপিএসের ব্যাটারির সংকট

আইপিএসে যে ব্যাটারি ব্যবহার করা হয় এই মুহূর্তে বাজারে সেগুলোর সংকট তৈরি হয়েছে। কেন এই সংকট? এক বিক্রেতা জানান, কারখানাগুলোতে ব্যাটারি প্রস্তুত করতে বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। ব্যাটারির ভেতরে থাকা প্লেট চার্জ করা এবং অন্যান্য জিনিসপত্র তৈরিতে বিদ্যুত ব্যবহার করা হয়। লোডশেডিংয়ের কারণে এসব প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কিছু কোম্পানির বড় জেনারেটর থাকলেও ডিজেল বেশি লাগায় তারা ওই জেনারেটর ব্যবহার করে ব্যাটারি উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছে না। কারণ এতে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যায়।

/এমএইচএন/জেএস