চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে আবারও সড়ক অবরোধ করেছেন হেফাজত ইসলামের নেতাকর্মীরা। শনিবার (২৭ মার্চ) সকাল থেকে সড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। বন্ধ রয়েছে হাটহাজারী উপজেলা সদরের দোকানপাট।

হাটহাজারী উপজেলার সদরের দোকানদার কাজী ইসমাইল ঢাকা পোস্টকে বলেন, শুক্রবার সংঘর্ষের পর থেকেই দোকানপাট বন্ধ। একদিকে হেফাজতে কর্মীরা দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদরাসার সামনে, অপরদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা থানার সামনে অবস্থান করছে। তাই আতঙ্কে দোকান খুলতে পারিনি।

বেলাল নামে এক মুদি দোকানদার বলেন, এখনও দোকানপাট বন্ধ আছে। আবারও সংঘর্ষ হতে পারে, এমন আশঙ্কায় আমরা দোকান বন্ধ রেখেছি।
 
হাটহাজারী থানার এসআই কবির হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হাটহাজারীতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গতকালের সংঘর্ষের ঘটনায় এখনও কোনো মামলা হয়নি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাটহাজারীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমরা মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছি। সড়ক চালুর জন্য চেষ্টা করছি। তবে মামলার বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি।

চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে এখনও যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সড়কটিতে দারুল উলুম মইনুল ইসলাম মাদরাসার ছাত্ররা ইটের দেয়াল তুলে ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছেন। শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

হেফাজতের প্রচার সম্পাদক মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়জী সড়কের দেয়াল দেওয়ার বিষয়ে বলেন, আসলে গতকালকের ঘটনা থেকে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা রাস্তায় ব্যারিকেড দেয়। পরে দেয়াল দিয়েছে বলে জানতে পেরেছি। আমি এর বেশি কিছু জানি না। তিনি আরও বলেন, আমরা প্রশাসনের সঙ্গে বারবার বৈঠক করছি। আমরা চাইছি গতকাল মারা যাওয়াদের মরদেহগুলো হাটহাজারীতে এনে জানাজা পড়াতে। এ বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাটহাজারী মাদরাসার সামনের সড়ক সকাল থেকে আবারও অবরোধ করেছেন মাদরাসার শিক্ষার্থীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থানার সামনে অবস্থান করছে। এছাড়া চট্টগ্রাম-হাটহাজারী রেললাইনে গাছের গুড়ি ফেলে রাখা হয়েছে। এর আগে রাত ১২টায় রাস্তার অবরোধ তুলে নেয় আন্দোলনকারীরা।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার ঢাকা পোস্টকে শনিবার সকালে বলেন, এখনও লাশের ময়নাতদন্তের কাজ শেষ হয়নি। স্বজনদের লাশ বুঝিয়ে দেওয়া হবে। 

এদিকে ছাত্র নিহতের প্রতিবাদে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। আজ জোহরের নামাজের পর জামিয়াতুল ফালাহ মসজিদ থেকে হেফাজতের বিক্ষোভ মিছিল শুরু হবে বলে জানিয়েছেন হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক। 

শুক্রবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে একটি মিছিল বের করে হাটহাজারী বড় মাদরাসার ছাত্র ও মুসল্লিরা। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে পুলিশ টিয়ারশেল ও গুলি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 

শুক্রবার আড়াইটার দিকে দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদরাসার সামনে এ সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন, রবিউল ইসলাম (২৩), মেরাজুল ইসলাম (২২) মিরাজুল ইসলাম, জামিল (২০) ও মিজান (৪০)। আহত হন পুলিশসহ কমপক্ষে ১৫ জন। সংঘর্ষের সময় হাটহাজারী থানা ও ভূমি অফিসে ভাঙচুর চালায় হেফাজত সমর্থকরা।

রোববার হেফাজতের হরতাল
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে দেশের দুই স্থানে সংঘর্ষে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মী নিহতের ঘটনায় শনিবার (২৭ মার্চ) দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি এবং রোববার (২৮ মার্চ) হরতালের ডাক দিয়েছে সংগঠনটি।

এক ভিডিও বার্তায় হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী এ ঘোষণা দেন। শুক্রবার (২৬ মার্চ) ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন হেফাজতে ইসলামের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আতাউল্লাহ আমিনী।

কেএম/ওএফ