ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, পৃথিবীর কোনও উন্নত দেশের রাজধানীর মাঝখানে পচনশীল পণ্যের পাইকারি কাঁচাবাজার নেই। স্মার্ট বাংলাদেশে ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্রে পাইকারি কাঁচাবাজার থাকতে পারে না। কারওয়ান বাজারে কোনও কাঁচাবাজার থাকবে না। উন্নত দেশের পাইকারি মার্কেটগুলো পরিদর্শন করেছি। পর্যাপ্ত খালি জায়গাসহ সব ধরনের সুবিধা নিশ্চিত করে মার্কেটের ডিজাইন করা হবে।

বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাজধানীর টিসিবি ভবনে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। কারওয়ান বাজার অন্যত্র স্থানান্তরের লক্ষ্যে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। 

আতিকুল ইসলাম বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ কারওয়ান বাজারের মার্কেট যেকোনো সময় ভেঙে পরতে পারে। মার্কেট ধসে ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনার দায়িত্ব কে নেবে? ক্রেতা-বিক্রেতার জানমালের নিরাপত্তা স্মার্ট বাংলাদেশে নিশ্চিত করতে হবে।

সবার সঙ্গে আলোচনা করেই কারওয়ান বাজারের আড়ৎ স্থানান্তর করা হবে জানিয়ে মেয়র বলেন, ১১ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করে দিচ্ছি। স্থানীয় তিনজন কাউন্সিলর, কারওয়ান বাজারের সুপার মার্কেট ও কাঁচাবাজার মার্কেটের ব্যবসায়ী মালিক সমিতির নেতা ও ডিএনসিসির কর্মকর্তার সমন্বয়ে এই কমিটি গঠিত হবে। এ কমিটি ১৫ দিনের মধ্যে কারওয়ান বাজার স্থানান্তরের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন জমা দেবে।

তিনি বলেন, আমি ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট স্থানান্তরের চিঠি পাওয়ার পরেই ব্যবসায়ীদের আলাপ-আলোচনা করতে এ এলাকার কাউন্সিলরদের দায়িত্ব দিয়েছি। আমি কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি যে, গাবতলী কাঁচাবাজারে আসা-যাওয়ার রাস্তা নির্মাণের জন্য বিএডিসির জায়গা প্রয়োজন। কৃষিমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন যে, রাস্তার জন্য বিএডিসির জায়গা দেবেন। মার্কেট স্থানান্তর হলে নতুন মার্কেটে সমপরিমাণ জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হবে। এজন্য নতুন করে কোনও টাকা দিতে হবে না। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে এমন সিদ্বান্ত আমাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি কথা দিচ্ছি ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য কারওয়ান বাজারের চেয়ে বহুগুণ সুবিধা সম্বলিত নিরাপদ আধুনিক মার্কেট নির্মাণ করে দেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে একটি কমিটি ডিএনসিসির আটটি মার্কেটকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে। আমাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারাই সিদ্বান্ত জানিয়েছে তড়িৎ গতিতে ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট স্থানান্তর করার। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে কারওয়ান বাজার সরানোর জন্য যাত্রাবাড়ী,  গাবতলী ও মহাখালীতে মার্কেট নির্মাণ করা হয়। এটি একনেকে পাশ হওয়া প্রকল্পের আলোকে হয়েছে। সেসময়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনেই একনেকে পাশ হয়ে এটি বাস্তবায়ন করা হয়। অতএব এটি কারও মনগড়া কথা নয়। প্রধানমন্ত্রী প্রায় ছয় মাস আগে পার্লামেন্টে বলেছেন যে, পদ্মাসেতু হয়ে গেছে... সুতরাং দক্ষিণের জেলাগুলো থেকে আসা পণ্য ঢাকা শহরের দক্ষিণ প্রান্তে থাকবে। আর বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে আসা পণ্য ঢাকার উত্তর প্রান্তে থাকবে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সিদ্বান্তেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রী আমাকে বলেছেন ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট স্থানান্তরে ব্যবস্থা নিতে হবে। বিভিন্ন মার্কেট ধসে পড়ছে। ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার পুনরায় চিঠি দিয়ে বলেছেন আটটি ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট দ্রুত সরিয়ে নিতে হবে। তাই আমরা মার্কেটগুলোতে ঝুঁকিপূর্ণ লিখে সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় সেই সাইনবোর্ডও সরিয়ে ফেলা হয়েছে। 

অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন ডিএনসিসির অঞ্চল ৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বীর আহমেদ। এতে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলাম, ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. সফিউল্লা, ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল্লাহ আল মঞ্জুর, ২৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামীম হাসান, সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর মিতু আক্তার। 

এএসএস/কেএ