ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারত একংবিশ শতকে অনেক অগ্রগতি লাভ করবে। দুই দেশ বিশ্বকে শান্তি ও ভালোবাসার পথ দেখাবে।’

শনিবার (২৭ মার্চ) গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় মতুয়া সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান শ্রীধাম ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শনে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি।

ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়িতে অনুষ্ঠিত সুধী সমাবেশে মোদি বলেন, ‘শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের দয়ায় আজ এই পবিত্র ভূমিতে আসতে পেরেছি। আমি হরিচাঁদ ঠাকুর ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের চরণে মস্তক নত করে প্রণাম জানাই। এখানে আসার পর কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা বিশ্বাস করতে পারেননি যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী এখানে আসতে পারেন। কিন্তু আমি ওড়াকান্দি আসতে পেরে নিজেকে খুবই ভাগ্যবান মনে করছি। ভারত থেকে আসা দর্শনার্থীরা যেরকম শান্তি অনুভব করেন, আমিও তেমনি অনুভব করছি।’

তিনি বলেন, ‘এখানে আসার ইচ্ছা আমার অনেক আগে থেকেই ছিল। ২০১৫ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে যখন বাংলাদেশে আসি, তখনই আমি ওড়াকান্দি আসতে চেয়েছিলাম। এখানে এসে অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। পশ্চিমবঙ্গের ঠাকুর নগরের বড় মাও আমাকে এরকম স্নেহ ও ভালোবাসা দিয়েছেন। ঠাকুর নগর থেকে ঠাকুরবাড়ি পর্যন্ত একই ধরনের শ্রদ্ধা ও আস্থা রয়েছে।’

মোদি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে ১৩০ কোটি ভারতীয় জনতার ভালোবাসা নিয়ে এসেছি। আপনাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পূর্ণ হওয়ায় সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই। গতকাল ঢাকার প্যারেড গ্রাউন্ডে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখেছি, যা আমাকে মুগ্ধ করেছে।’

তিনি বলেন, ‘এখানে আসার আগে আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিক্ষেত্রে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব আর তাঁর ওপর দেশের মানুষের বিশ্বাস ও ভালোবাসা সত্যিই অতুলনীয়।’

ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে। এই ঠাকুরবাড়ি দুই দেশের আত্মিক সম্পর্কের তীর্থস্থান। আমাদের সম্পর্ক মানুষের সঙ্গে, আমাদের সম্পর্ক মনের সঙ্গে। ভারত ও বাংলাদেশ নিজেদের বিকাশ ও প্রগতির চেয়ে বিশ্বের উন্নতি দেখতে চায়; হানাহানিমুক্ত বিশ্ব দেখতে চায়; প্রেম ও ভালোবাসাময় পৃথিবী দেখতে চায়। আর এই একই স্বপ্ন ছিল হরিচাঁদ ঠাকুরের। এই মূল্যবোধের কথাই তিনি বলেছিলেন।’

মোদি বলেন, ‘হরিচাঁদ ঠাকুর নারী শক্তির বিকাশের কথা বলেছিলেন; তাদের সামাজিক অংশীদারিত্বের জন্য কাজ শুরু করেছিলেন। যেটা সারাবিশ্ব আজ করতে চাচ্ছে। হরিচাঁদ ঠাকুরের বাণী যদি পড়ি বা স্মরণ করি, মনে হয় তিনি আগে থেকেই জানতেন কী হবে। তিনি ভবিষ্যৎকে আগেই দেখে নিয়েছিলেন।’

শনিবার (২৭ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কাশিয়ানীর ওড়াকান্দিতে পৌঁছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ সময় তাকে উলুধ্বনি, শঙ্খ ও ডঙ্কা-কাঁসা বাজিয়ে বরণ করে নেন ঠাকুরবাড়ির মতুয়ারা। সেখানে তিনি পূজা-অর্চনা করেন। পরে তিনি ঠাকুরবাড়ির সদস্য ও মতুয়া সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

এর আগে বেলা ১১টা ৩৮ মিনিটে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিাপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন নরেন্দ্র মোদি। বেলা ১১টা ২৫ মিনিটের দিকে তাকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি টুঙ্গিপাড়া হ্যালিপ্যাডে অবতরণ করে। এ সময় তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। সমাধি কমপ্লেক্স ঘুরে দেখার পর পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষর করেন মোদি। এরপর বঙ্গবন্ধু ভবনের পাশে একটি বকুল গাছের চারা রোপণ করেন তিনি । এ সময় বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা উপস্থিতি ছিলেন।

গোপালগঞ্জে আসার আগে সাতক্ষীরা যান ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। সকাল ১০টার দিকে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে শ্যামনগরের এএস সোবাহান মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে অবতরণ করেন তিনি। সেখানে সাড়ে ৪০০ বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক যশোরেশ্বরী কালীমন্দির পরিদর্শন ও পূজা-অর্চনা করেন মোদি। এ সময় তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। 

ওএফ/জেএস/এমএমজে