বাংলাদেশ এখন জঙ্গিবাদে লো রিস্কের দেশ, তবে সন্তুষ্টির সুযোগ নেই
পুলিশের এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এস এম রুহুল আমিন বলেছেন, জঙ্গিবাদ-উগ্রবাদ বিষয়ে সন্তুষ্টির সুযোগ নেই। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বিট ও কমিউনিটি পুলিশিং। বাংলাদেশ একটা সময় জঙ্গিবাদের বৈশ্বিক ইনডেক্সে হাই রিস্কের দেশ ছিল। সেখান থেকে আমরা লো রিস্কের দেশে পরিণত হয়েছি।
এন্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) ও জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থা ইউএনওডিসি’র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘কাউন্টারিং টেরোরিজম অ্যান্ড বায়োলেন্ট এক্সট্রিমিশম থ্রো স্ট্রেংথেনিং অব কমিউনিটি অ্যান্ড বিট পুলিশিং মেকানিজম অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিস ইন বাংলাদেশ’ এর শীর্ষক জাতীয় কনসালটেশন কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। বুধবার (১৪ জুন) সকাল ১০টায় রাজধানীর দ্য ওয়েস্টিন হোটেলে এ অনুষ্ঠান হয়।
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানে এটিইউ প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এস এম রুহুল আমিন বলেন, জঙ্গিবাদ সংক্রান্ত বৈশ্বিক অবস্থান নিয়ে পর্যালোচনামূলক অস্ট্রেলিয়ান একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ইন্সটিটিউট অব পিস অ্যান্ড জাস্টিস নামক ওই প্রতিষ্ঠান জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের দিক থেকে পাঁচটি ক্যাটাগরি করেছে। তা হলো, ভেরি হাই রিস্ক ক্যাটাগরি, হাই রিস্ক ক্যাটাগরি, মিডিয়াম রিস্ক ক্যাটাগরি, রিস্ক ক্যাটাগরি ও লো রিস্ক ক্যাটাগরি।
তিনি বলেন, ২০১৬-১৭ সালে আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তখন আমরা হাই রিস্ক ক্যাটাগরিতে ছিলাম। ২০১৬ সালে ছিল ২২তম। ২০১৭ সালে ছিল ২১তম। অর্থাৎ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ দেশের একটি ছিলাম আমরা। এরপর থেকে আমাদের সম্মিলিত উদ্যোগের ফলে আমাদের গ্লোবাল ইনডেক্সে উন্নতি ঘটে।
বিজ্ঞাপন
এস এম রুহুল আমিন বলেন, ধীরে ধীরে আমরা হাই রিস্ক থেকে মিডিয়াম রিস্কে এবং সর্বশেষ এ বছর আমরা লো রিস্ক ক্যাটাগরিতে ধাবিত হয়েছি। আমাদের অবস্থান এখন ৪৩তম। রেটিং পয়েন্ট ৩.৮২। উপমহাদেশে আমাদের নিচে রয়েছে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান। এমনকি ভারতও রয়েছে আমাদের নিচে ১৩তম অবস্থানে।
তিনি বলেন, উন্নত দেশ যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যও আছে আমাদের চেয়ে বেশি রিস্কে। চারটি দেশই রয়েছে মিডিয়াম রিস্কে। আমরা ভালো কিছু করতে পেরেছি, যা বিশ্বের অনেক দেশের কাছে ঈর্ষণীয়। শুধু তাই নয়, যে দেশটি থেকে আমরা আলাদা হয়েছি স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে তাদের চেয়ে শুধু ইনডেক্সে নয়, অর্থনৈতিক অবস্থানেও আমরা অনেক বেশি নিরাপদ।
এটিইউ প্রধান বলেন, ২০১৩ সালে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী লেখকদের ওপর হামলা শুরু করে। সঙ্গে যোগ দেয় নিউ জেএমবি। ২০১৬ সালে হলি আর্টিসান হামলা ছিল সবচেয়ে ভয়ংকর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গিবাদবিরোধী জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেন। ২০১৯ সালে এটিইউ কার্যক্রম শুরু করে একটি বিধিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে। প্রথম মাত্র ৬০০ জনবলে শুরু। এরপর কোভিড মহামারি, এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু। সারা দেশেই অর্থনৈতিক কৃচ্ছতা সাধন নীতিগ্রহণ করা হয়। যে কারণে এটিইউ আর সম্প্রসারণে যেতে পারেনি।
তিনি বলেন, সীমিত অবস্থানে থেকেও দেড় শতাধিক অভিযানে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৩০০ জঙ্গি গ্রেপ্তার করেছে এটিইউ। অনেক সাজাপ্রাপ্ত, যুদ্ধাপরাধীসহ সেনসেশনাল মামলার আসামি গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সফট ও হার্ট অ্যাপ্রোচের আলোকে কাজ করছে এটিইউ। পাশাপাশি সচেতনতায় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়।
এস এম রুহুল আমিন বলেন, বিট পুলিশিং ও কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে অনেক বেশি কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব। কীভাবে জঙ্গিকে শনাক্ত করা যায়, শিক্ষকদের দায়িত্ব কি? ছেলে-মেয়েদের চলাফেরায় কি কি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে সে বিষয়ে সচেতন করা সম্ভব। বিট ও কমিউনিটি পুলিশিংয়ের কার্যক্রমকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে জঙ্গিবাদ দমন করা যায়, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কানাডিয়ান হাইকমিশনের পলিটিক্যাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের প্রতিনিধি ব্রাডলি কোর্টস বলেন, কানাডাতেও বিট পুলিশিং ও কমিউনিটি পুলিশিং রয়েছে। বাংলাদেশে উগ্রবাদ জঙ্গিবাদোর বিরুদ্ধে বিট পুলিশিং খুবই আশাব্যঞ্জক ফলাফল বয়ে এনেছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এটিইউ’র ডিআইজি (অ্যাডমিন) মফিজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, কমিউনিটি পুলিশিং, বিট পুলিশিংকে আমরা কাজে লাগাচ্ছি। তিনশর অধিক বিট রয়েছে। বিটে প্রায় ৩১০০ সদস্য কাজ করছে। বিভিন্ন সময় বিট পুলিশিংয়ের কার্যক্রমে আমরা মানুষকে সম্পৃক্ত করে ফল পেয়েছি।
তিনি বলেন, আমাদেরকে প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছাতে হবে। উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ সম্পর্কে জানানো ও এর ভয়াবহতা সম্পর্কে জানাতে হলে কমিউনিটি পুলিশিংকে কাজে লাগাতে হবে। বিট পুলিশিংকে শক্তিশালী করা গেলে উগ্রবাদ বিরোধী কার্যক্রমকে আরও বেগবান করা সম্ভব। সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারে এখন অনেক তথ্য আসছে। অনেক ক্ষেত্রে ফিডব্যাকও আসে।
ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, বিট পুলিশিং শক্তিশালী করে এর মাধ্যমে বাল্যবিবাহ, ড্রাগ, নারী নির্যাতনসহ সামাজিক যেকোনো বিষয়ে শক্ত তথ্য আদান-প্রদান ব্যবস্থা আমরা তৈরি করব।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আশরাফ, ঢাকার ইউএনওডিসি’র অফিসার ইনচার্জ শাহ মোহাম্মদ নাহিয়ান, এটিইউ’র ডিআইজি (অপারেশনস) মনিরুজ্জামান, ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান, বিট ও কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
জেইউ/এসএসএইচ/