ফৌজদারি মামলায় কোনো সরকারি কর্মচারীকে গ্রেপ্তারের আগে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের অনুমতি নেওয়ার বিধান রেখে জাতীয় সংসদে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) বিল-২০২৩’ পাস করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ জুলাই) জাতীয় সংসদে এই বিল পাস হয়।

এতে স্বশাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, অবসর-সুবিধা সরকারি চাকরি আইনের আওতায় আনা হয়েছে।

অবশ্য জাতীয় পার্টির পীর ফজুল রহমান বলেছেন, এই আইন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। ফৌজদারি মামলায় অভিযোগ গঠনের আগে যে কাউকেই গ্রেপ্তার করা হয়। এ জন্য কারও অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু সরকারি কর্মচারীদের অভিযোগ গ্রহণের আগে গ্রেপ্তার করা যাবে না, এটা আইনের চোখে সবাই সমান— এই নীতির পরিপন্থি।

গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, জনপ্রশাসনে আজ চরম বিশৃঙ্খলা। তারা ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স মানেন না। প্রজাতন্ত্রের কিছু কর্মচারী নিজেকে স্বঘোষিত মার্শাল আইয়ুব খান বা তার অনুসারী ভাবেন। তাদের ইচ্ছেমতো স্বাধীন ও জনস্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সিদ্ধান্ত নিয়ে জনগণ ও জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন।

তিনি বলেন, কোনও কোনও মন্ত্রণালয়ে গেলে দেখা যায় সচিব, অতিরিক্ত সচিব বা যুগ্মসচিব মন্ত্রীর স্বাক্ষর থাকার পরও ঠিকমতো কাজ করেন না, গুরুত্ব দেন না। জেলা ও উপেজলা পর্যায়ের কর্মকর্তা কোথাও গেলে তাদের গাড়ির বহর দেখে মনে হয় সরকারের কোনও উচ্চ পর্যায়ের মন্ত্রী সেখানে গেছেন। বেশিরভাগ দপ্তরের জনপ্রতিনিধিদের প্রাপ্য সম্মান দিতে ইতস্তত বোধ করেন। কিছু ক্ষেত্রে মন্ত্রীকেও অসহায় দেখা যায়। তাদের (মন্ত্রী) ইচ্ছা বা নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতেও গড়িমসি করেন।

তিনি বলেন, সরকার মনে করে জনপ্রশাসন নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে তাদের হেফাজত করবে। এটা ভালো লক্ষণ নয়। এতে জনপ্রশাসনে বিশৃঙ্খলা আরও বাড়বে। প্রতিষ্ঠানগুলোর ভিত্তি দুর্বল হবে, জনস্বার্থ বিঘ্নিত হবে। কীভাবে কিছু আমলার কাছে আমাদের সংসদ সদস্যরা হেয়প্রতিপন্ন হন। এটার ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দিলে জনপ্রতিনিধি ও জনগণ সম্মানিত হবে।

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়িয়ে ৩৫ বছর করার দাবি জানিয়েছেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রেজাউল করিম। তিনি বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে ৩৫, ৪০, ৫৫ এমনকি ৫৯ বছর পর্যন্ত চাকরির বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে একেবারে নিম্ন পর্যায়ে আছে। বয়সসীমা ৩৫ বছর করা হলে বেকার সমস্যা লাঘব হবে।

বিলটি জাতীয় সংসদে পাসের জন্য উত্থাপন করেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে সংসদে পাস হয়।

সরকারি চাকরি (সংশোধন) বিল ২০২৩-এ বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইনের ১৫, ৪১, ৪২, ৪৩, ৪৪ ও ৪৫ ধারার বিধান স্বশাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় সরকারের অধীন প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য হবে।

২০১৮ সালের আইনের ১৫ ধারায় বলা আছে, সরকারি গেজেটে আদেশের মাধ্যমে কোনও সরকারি কর্মচারীর বা সব সরকারি কর্মচারীর বা সরকারি কর্মচারীর কোনও একটি অংশের জন্য বেতন, ভাতা, বেতনের গ্রেড বা স্কেল, অন্যান্য সুবিধা ও প্রাপ্যতা বা অবসর-সুবিধা সম্পর্কিত শর্তাদি নির্ধারণ করতে পারবে সরকার।

আর ৪১ ধারায় বলা আছে, ‘কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালন সম্পর্কিত অভিযোগে দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ার পূর্বে তাকে গ্রেপ্তার করতে হলে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ করতে হবে।’

এসআর/টিএম