ঢামেকে চিকিৎসা নিতে গিয়ে তছনছ নারীর জীবন : তদন্তের নির্দেশ
হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় রিয়াজ উদ্দিন রবিন ও ঢামেক হাসপাতাল ফটকের ছবি
অস্ত্রোপচার-পরবর্তী সংক্রমণের চিকিৎসা নিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে যাওয়া নারীর গোপন ছবি-ভিডিও ধারণ ও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে অনৈতিক কাজে বাধ্য করার ঘটনা সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
ডিএমপি কমিশনারকে বিষয়টি তদন্ত করে আগামী ৭ আগস্টের মধ্যে বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছে মানবাধিকার কমিশন। এসংক্রান্ত আদেশের অনুলিপি স্বরাষ্ট্র সচিবকে পাঠিয়েছে কমিশন।
বিজ্ঞাপন
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উপ-পরিচালক (মিডিয়া) ফারহানা সাঈদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আজ বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) গণমাধ্যমে ‘ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে তছনছ নারীর জীবন’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনের প্রতি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে।
প্রতিবেদন মতে, অস্ত্রোপচার-পরবর্তী সংক্রমণের চিকিৎসা নিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে যান ২৮ বছর বয়সী এক নারী। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেশ কিছুদিন তার ড্রেসিং (ক্ষতস্থান পরিষ্কার) করেন হাসপাতালের কর্মী রিয়াজ উদ্দিন রবিন।
বিজ্ঞাপন
একদিন তিনি বলেন, ‘তোমার কিছু গোপন ছবি আছে আমার ফোনে।’ ছবিগুলো দেখিয়ে তিনি হুমকি দেন, তার সঙ্গে একান্তে সময় না কাটালে সেগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। শেষ পর্যন্ত ফাঁদে পড়ে সামাজিক বদনামের ভয়ে ওই অনৈতিক প্রস্তাব মেনে নিতে বাধ্য হন তিনি। সেসব মুহূর্তের ছবিও কৌশলে তুলে রাখেন রবিন।
এরপর ছবি-ভিডিও ছড়ানোর ভয় দেখিয়ে বারবার তার ওপর চলে যৌন নিপীড়ন। এক পর্যায়ে তিনি পুলিশের কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তখন রবিন বিদেশে চলে যান। তবে পরে তিনি ওই নারীর স্বামীর কাছে ছবিগুলো পাঠিয়ে দেন। ফেসবুকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে ছবিগুলো ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে ওই নারীর জীবন চরম দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। লোকজনের নির্দয় কটূক্তির কারণে তিনি এখন ঘর থেকে বের হতে পারেন না। ঘরে মারধর আর গালাগাল তার নিত্যদিনের সঙ্গী।
মানবাধিকার কমিশনের মতে, অভিযোগের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর। এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক দোষীদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সেজন্য আগামী ৭ আগস্টের মধ্যে কমিশনে প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য ডিএমপি কমিশনারকে বলা হয়েছে।
ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ওই নারী স্বামী-সন্তানের সঙ্গে থাকেন রাজধানীর কড়াইল এলাকার ভাড়া বাসায়। ২০১৯ সালে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে তার তৃতীয় সন্তানের জন্ম হয়। এর পর সেলাইয়ের স্থানে দেখা দেয় সংক্রমণ। সেটির চিকিৎসা চলমান থাকতেই ২০২০ সালে তাঁর অ্যাপেন্ডিসাইটিস অপারেশন হয়। সেখানেও সংক্রমণ দেখা দেয়। বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসায় সেরে না ওঠায় ২০২১ সালের ২০ অক্টোবর তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। ডা. নিবেদিতার অধীনে তাঁর চিকিৎসা চলে। ওই সময় কর্তব্যরত নার্সরা ওয়ার্ডবয় রিয়াজ উদ্দিন রবিনকে ড্রেসিংয়ের দায়িত্ব দেন। তিনি নিয়মিত ড্রেসিং করে দেন, বিনিময়ে অর্থ নেন। একদিন রবিন ভুক্তভোগী নারীকে জানান– হাসপাতালে অনেক ভিড়, তা ছাড়া প্রতিদিন এভাবে ড্রেসিং করা যাবে না। বিকল্প পথও তিনিই বাতলান। হাসপাতালের পাশের এলাকার একটি বাসায় ঘর ভাড়া নিয়ে সেখানে ড্রেসিং করতে হবে। তত দিনে রবিনের ওপর আস্থা গড়ে ওঠায় নারী এ প্রস্তাবে রাজি হন।
এর পর রবিন অনলাইনে ছবি ছড়ানোর ভয় দেখিয়ে তাকে একান্তে সময় কাটাতে বাধ্য করেন। এভাবে তাঁকে জিম্মি করে চালানো হয় যৌন নিপীড়ন। সেই সঙ্গে রবিনের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবিও তুলতে বাধ্য করেন। বিদেশে যাওয়ার পরও ফোনে নিয়মিত কথা বলতেন রবিন। একদিন ক্ষিপ্ত হয়ে ছবিগুলো পাঠিয়ে দেন ওই নারীর স্বামীর মোবাইল ফোনে। রবিনের কাছ থেকে তাঁর চার বন্ধুও ছবিগুলো পেয়েছেন। তারাও ফোন করে নানাভাবে নারীকে উত্ত্যক্ত করছেন।
জেইউ/এসএম