খাগড়াছড়ির সড়কে উন্নয়নের ছোঁয়া, দুর্গম পাহাড়ে কমেছে দুর্ভোগ
অসুস্থ হলে পরিবারের লোকজন কিংবা পাড়া-প্রতিবেশীর সাহায্যে মাইলের পর মাইল হেঁটে রোগীকে যেতে হতো উপজেলা হাসপাতালে। পাহাড়ের দুর্গমে বসবাসকারীদের পায়ে হেঁটে চলাই ছিল একমাত্র যাতায়াত ব্যবস্থা। পাহাড় ভেঙে চলাচল করতে হতো তাদের। তবে সেই চিত্র বদলে গেছে। এখন আর রোগীদের কাঁধে তুলতে হয় না, বরং চান্দের গাড়ি দিয়ে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে স্বল্প সময়ে ডাক্তারের কাছে নেওয়া যায় বলে জানিয়েছেন মাটিরাঙ্গা উপজেলার দলিয়া এলাকার বাসিন্দা প্রত্ত দত্ত।
সরেজমিন দেখা যায়, খাগড়াছড়ির বিভিন্ন এলাকার সড়কের উন্নয়ন কাজ চোখে পড়ার মতো। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রতিটি সড়কই পাকা হচ্ছে। পাহাড়ে সড়ক উন্নয়ন বর্তমান সরকারের সুনজরের ফসল। এছাড়া খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগের অধীন পাহাড় বা ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের বিভিন্ন স্থানে ড্রেনসহ স্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, জেলার বিভিন্ন সড়কে গার্ডার সেতু, আরসিসি সেতু ও আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণে যাতায়াত ব্যবস্থার সুবিধা ভোগ করছেন পাহাড়িরা। জেলার সঙ্গে সীমান্তের যোগাযোগ স্থাপনেও সড়ক পাকা করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, পার্বত্য তিন জেলাকে এক সড়কে সংযুক্ত করতে বর্তমান সরকার ১০৩৬ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক তৈরি করছে। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলার সীমান্তে পাহাড়ের চূড়ায় নির্মিত হচ্ছে দেশের এই সীমান্ত সড়ক। এরইমধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে সড়কটি। পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়নের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহেই সীমান্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্প নেওয়া হয়। প্রকল্পটি গুণগতমান নিশ্চিত ও যথাসময়ে সম্পন্ন করতে বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে। সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্রিগেডের ১৬, ২০ ও ২৬ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন ব্যাটালিয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয়রা জানান, রামগড় তানাক্কাপাড়া সীমান্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্প মাটিরাঙ্গা সদর ইউনিয়নের দলিয়া গ্রামের কাশেম টিলা থেকে রামগড় পর্যন্ত গেছে। এটি নির্মাণের কারণে সীমান্তের মানুষের যাতায়াত সুবিধাও বাড়বে, কমবে দুর্ভোগ। এই সড়কটি আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে। ভারত, মিয়ানমারসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে সীমান্ত সড়কটি সংযুক্ত হবে।
টিলাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা নিতাই দত্ত বলেন, মহালছড়ি-সিন্দুকছড়ি-জালিয়াপাড়া সড়কটি প্রায় তিন বছর আগে চালু হয়। এটি হওয়ার কারণে আমাদের বাণিজ্যিকভাবে উপকার হয়েছে। কাঠ, বাঁশ, লেকের মাছ ঢাকা ও চট্টগ্রামে সহজে পাঠাতে পারি। এখানে পাহাড়ি ও বাঙালিরা মিলেমিশে বসবাস করে আসছে।
পংকি মুরা এলাকার বিপুল বিশ্বাস ত্রিপুরা বাচ্চু বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এই এলাকার মানুষ পাহাড়ের ফলমূল, শাক-সবজি শহরে পাঠাতে পারে। আগে এই এলাকার মানুষ অসুস্থ হলে রাস্তার কারণে কোথাও নেওয়া যেত না। দুর্গম এলাকার মানুষের কষ্টের শেষ ছিল না। কিন্তু রাস্তা করে দেওয়ায় তাদের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হয়েছে।
এ বিষয়ে খাগড়াছড়ির সড়ক বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রনেন চাকমা বলেন, সীমান্তের নিরাপত্তার জন্য সীমান্ত সড়কটি তৈরি করা হচ্ছে। ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ গড়তে খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতুগুলোর পরিবর্তে পাকা সেতু নির্মাণ করার ফলে এ অঞ্চলে সড়ক যোগাযোগের আমূল পরিবর্তন হচ্ছে ও জনগণের জীবনমান উন্নত হচ্ছে। সড়কপথের উন্নয়নের কারণে এই অঞ্চলের অর্থনীতিরও আমূল পরিবর্তন হবে।
খাগড়াছড়ি জেলায় অবস্থিত অযোধ্যা নদীর পাশে বসবাস করেন বাঙালি সফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, এখানে সড়ক হবে তা কখনো ভাবিনি। আগে রোগী নিয়ে পায়ে হেঁটে শহরে যেতে হতো। বর্তমানে গাড়ি দিয়ে চলচল করতে পারছি। সীমান্ত সড়কটি নির্মাণের কারণে অনেকের জীবন বদলে দিয়েছে।
এমএসআই/জেডএস