অসুস্থ বা মুমূর্ষু রোগী পরিবহনে অ্যাম্বুলেন্স অপরিহার্য। চিকিৎসা সেবাখাতে অ্যাম্বুলেন্স একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে কাজ করে। কিন্তু নামে অ্যাম্বুলেন্স হলেও এটিকে ব্যক্তিগত যানবাহন হিসেবে ধরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) আয়কর নিয়ে থাকে বলে অভিযোগ অ্যাম্বুলেন্স মালিকদের। তাদের আরও অভিযোগ, সড়কে অ্যাম্বুলেন্স চালাতে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা বিভিন্ন রকম মামলা বা অর্থ আদায়মূলক হয়রানি করেন।

তাই এ দুটি দাবিসহ ৬ দফা দাবি আদায়ে ২৪ জুলাই (সোমবার) দিনরাত ১২টা থেকে সারাদেশে অ্যাম্বুলেন্স ধর্মঘট ডেকেছে বাংলাদেশ অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতি। তারা বলছে, কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের সড়কে নিরাপদে চলার সামান্যতম আশ্বাস দেয়, তবে ডেঙ্গুর মতো ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে সঙ্গে সঙ্গেই ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।

কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স মালিকদের অভিযোগের বিষয়ে বিআরটিএ বলছে, অ্যাম্বুলেন্সের জন্য একটি নীতিমালা দরকার আছে। এটা সময়সাপেক্ষ। অন্যদিকে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। এখনই মন্তব্য করা যাচ্ছে না।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সোমবার (২৪ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বাংলাদেশ অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল পুলিশ হেডকোয়ার্টারে গিয়েছে এ বিষয়ে আলোচনা করতে।

বাংলাদেশ অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতির দাবিগুলো হচ্ছে- অ্যাম্বুলেন্স থেকে প্রাইভেটকারের মতো বিআরটিএকে আয়কর (এটিআই) নেওয়া বন্ধ করা; অনতিবিলম্বে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন করা; দেশের প্রত্যেকটি হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্সের পার্কিং সুবিধা দেওয়া; রোগী থাকা অবস্থায় প্রতিটি পাম্পে সিরিয়াল ছাড়া তেল এবং গ্যাস নিতে ব্যবস্থা করা; সড়কে ট্রাফিক হয়রানিমুক্ত ও নির্বিঘ্নে পথচলা নিশ্চিত করা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত অ্যাম্বুলেন্সের টোল ফ্রি বাস্তবায়ন করা।

ধর্মঘটের বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. গোলাম মোস্তফা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই ৬ দফা দাবিতে ২০২২ সালের ২ অক্টোবর মানববন্ধন করেছিলাম, চলতি মাসের গত ১০ জুলাই একটি সংবাদ সম্মেলন করেছি। ২০১৭ সাল থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সরকারি দপ্তরে আমরা ঘোরাফেরা করছি আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। এখন পর্যন্ত এটার নীতিমালা হয়নি। আমরা হাইকোর্টে রিট পর্যন্ত করেছি নীতিমালা করার জন্য। এই নীতিমালা রাষ্ট্রের করার কথা ছিল। আমরা রিট করায় তারা আরও কালক্ষেপণ করছে, কিন্তু কোনো ধরনের জবাব দেওয়া হয় না।

তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে বিআরটিএ কোনো নীতিমালা করতে পারেনি। নীতিমালা থাকলে গাড়িতে কী কী থাকবে, অ্যাম্বুলেন্স কীভাবে ব্যবহার করা হবে, সবকিছু পরিষ্কার লেখা থাকতো। কোথায় কত ভাড়া হবে তার একটা চার্ট থাকবে। আমরা সবাই মিলে এই কাজটি সুন্দরভাবে করবো। অথচ কালক্ষেপণ করা হয়, কিন্তু এই নীতিমালার কাজ আর করা হয় না।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমরা অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে গাড়িগুলোকে ব্যবহার করি। আর আমাদের কাছ থেকে আয়কর নেওয়া হয় প্রাইভেটকারের মতো। সেই করের পরিমাণ ৩০ হাজার টাকা। এই টাকা কোথায় যায় না যায় সে বিষয়টিও আমাদের জানা দরকার। এটা সরকারি কোষাগারে যায় কি না, সে বিষয়ে আমাদের ডাউট আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে সেতু ও ফেরিগুলোতে আমাদের জন্য টোল ফ্রি করার একটা প্রজ্ঞাপনও জারি করেছিলেন। কিন্তু কিছু অসাধু ইজারাদারের কারণে সেটি বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

ধর্মঘট ভাঙতে যে কারণে আশ্বাস চাইছেন মালিকরা

বাংলাদেশ অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. গোলাম মোস্তফা অভিযোগ জানিয়ে বলেন, ট্রাফিক পুলিশ আমাদের কাগজ দেখে বলে তোমরা ভাড়ায় চালাও কেন। কিন্তু এটা তো অ্যাম্বুলেন্স, এটা তো ভাড়াতেই চলবে। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা বলে, ভাড়া যেহেতু নিয়েছ মামলা হবে দশ হাজার, পনেরো হাজার, বিশ হাজার। আমাকে টাকা দাও। তারা সাধারণ যানবাহনের মতো করে এই বাহনকে দেখে। তখন টাকা দিতে না চাইলে আমাদের মামলা দেয়। অ্যাম্বুলেন্স কি সাধারণ যানের কাতারে পরে? আমরা চাই, এটাকে অ্যাম্বুলেন্সের কাতারে দেওয়া হোক। ট্রাফিক পুলিশ নগদ অর্থ অথবা মামলার ভয় দেখিয়ে হয়রানি করে। আমরা মামলার ভয়ে তেমন একটা চালাই না। কেউ রাতে চালালেও সারাদিনের রোগীগুলো কে টানবে?

তিনি আরও বলেন, করোনার মতো বর্তমানে ডেঙ্গুর পরিস্থিতি যে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, সেখানে আমরা এই মুহূর্তে কোনো ধর্মঘট করতে চাই না। কর্তৃপক্ষ অন্তত আমাদের আশ্বাস দিক। বিআরটিএর চেয়ারম্যানও বলেছেন, তিন মাসের মধ্যে নীতিমালা করে দেবেন। কিন্তু রাস্তায় আমরা ট্রাফিক পুলিশের হয়রানিতে চলতে পারি না। অন্তত এই আশ্বাসটুকু পেলে আমরা তাৎক্ষণিক ধর্মঘট প্রত্যাহার করব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, 'ওটা নিয়ে আলোচনা চলছে, এখনও কোনো ডিসিশন হয়নি। এই মুহূর্তে ওটা নিয়ে কোনো কিছু না বলাই ভালো। আলোচনা শেষে পরে এটি নিয়ে জানা যাবে।'

বিআরটিএর পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) শীতাংশু শেখর বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, অ্যাম্বুলেন্সের আসলে তেমন কিছু নেই। ওগুলো ব্যক্তিগত গাড়ি হিসেবে নিবন্ধন হয় এবং পরে তারা অ্যাম্বুলেন্স বানিয়ে ভাড়া হিসেবে টানে। এটার একটা নীতিমালা হওয়া দরকার। অ্যাম্বুলেন্স একটা সার্ভিস হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে, নীতিমালা করার জন্য আমাদের একটা কমিটি গঠন হয়েছে। তারা বিষয়টা দেখছে। তারা একটা প্রতিবেদন দেবে, সরকার এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে এটি সময়সাপেক্ষ।

এমএইচএন/জেডএস