২০২৫ সালের মধ্যে তথ্য-প্রযুক্তি খাত পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রফতানি শিল্পে পরিণত হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক।

বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত কোইকার ৩০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এ সময়ে উন্নয়নের অংশীদার দক্ষিণ কোরিয়াকে দেশে ২০২১ সালে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক ব্লকচেইন অলিম্পিয়াড ও উইটসায় অংশগ্রহণের আহ্বান জানান প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ২০০৮ সালে তথ্য-প্রযুক্তি খাত মাত্র ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের রফতানি শিল্প ছিল। যা ২০১৯ সালে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রফতানি শিল্পে উন্নীত হয়। আগামী ২০২৫ সালে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

পলক বাংলাদেশি তথ্য-প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো যেন আগামীতে দক্ষিণ কোরিয়ায় ব্যবসা সুযোগ ও সম্প্রসারণে আরও বেশি সুযোগ পায় সে জন্য কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সির (কোইকা) সঙ্গে আরও বেশি যৌথ প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

বাংলাদেশ তথ্য-প্রযুক্তি খাতে অনেক এগিয়ে গেছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তারুণ্য শক্তির বাংলাদেশের ৫০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর বয়স ২৫ বছরের নিচে। দেশের ১৫০টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবছর অর্ধলাখ স্নাতক কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে। এই ডিজিটালপ্রেমী তরুণরা আইটি পেশাদার ফ্রিল্যান্সার এমনকি উদ্যোক্তা হিসেবেও দেশে-বিদেশে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখছে।

তিনি জানান, অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের মতে, বিশ্বব্যাপী অনলাইন কর্মীদের ১৬ শতাংশই বাংলাদেশি। ফলে ডিজিটাল কর্মীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুক্তি ও তথ্য-প্রযুক্তি সক্ষম সেবা শিল্পও গত দশকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

পলক বলেন, বাংলাদেশে অর্থনীতির প্রায় প্রতিটি খাতে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণের ওপর কোনো বিধিনিষেধ নেই। একটি উচ্চ অগ্রাধিকার রফতানি খাত হিসেবে সব সফটওয়্যার এবং আইটি সার্ভিস কোম্পানি সফটওয়্যার, আইটিইএস এবং আইসিটি হার্ডওয়্যার রফতানিতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি সুবিধা পাচ্ছে। এছাড়াও সরকারের পক্ষ থেকে দীর্ঘমেয়াদি ইকুইটি ফান্ড এবং স্বল্পমেয়াদি ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ফাইন্যান্স করা হচ্ছে।

ভবিষ্যৎ প্রযুক্তিতে একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোরিয়া সরকারকে ডিজিটাল বাংলাদেশের বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেন পলক। বলেন, কোইকার মাধ্যমে কোরিয়া সরকারের প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহায়তায় আমরা একটি আন্তর্জাতিক মানের আইসিটি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কোরিয়া ইনস্টিটিউট অফ ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (বিকেআইআইসিটি) প্রতিষ্ঠা করেছি।

তিনি জানান, ই-গভর্নমেন্ট প্রতিষ্ঠায় কোরিয়ার অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে কোইআইসিএ’র সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য ই-গভর্নমেন্ট মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও আইসিটি বিভাগ, কোরিয়া টেলিকম ও আইওএমের পক্ষ থেকে বাস্তবায়িত ‘ডিজিটাল দ্বীপ মহেশখালী’ প্রকল্পটি কক্সবাজারের উপজেলাকে উচ্চ গতির ইন্টারনেট, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, মোবাইল স্বাস্থ্য সেবা, তথ্য, সৌর বিদ্যুৎ ও ই-কমার্সের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে।

ইডিসিএফ এবং কোরিয়া এক্সিম ব্যাংক থেকে একটি স্বল্প সুদের ঋণ নিয়ে বাস্তবায়িত বাংলাগভনেট প্রকল্প একক নেটওয়ার্কের অধীনে সারা দেশের সব সরকারি প্রতিষ্ঠানকে সংযুক্ত করেছে। ‘আইডিয়াথন’ বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার আরেকটি সফল যৌথ আইসিটি উদ্যোগ।

আগামী ২ থেকে ৪ জুলাই এবং নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে অনুষ্ঠিতব্য ডব্লিউসিআইটি ২০২১ এর স্বাগতিক দেশ হিসেবে এই আন্তর্জাতিক ইভেন্ট দুটিতে কোয়েকার মাধ্যমে কোরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, স্টার্টআপ এবং আইটি কোম্পানিগুলোকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণও জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে কোরিয়া বাংলাদেশ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন প্রেসিডেন্ট মঞ্জুর হোসেন সভাপতিত্ব করেন। বক্তব্য দেন- পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী, কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং-গুনে, কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (কোইকা) কান্ট্রি ডিরেক্টর মিস ইয়াং আদো। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতেমা ইয়াসমিন ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

একে/এফআর