লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানার পশ্চিম বাজার বাঁধের গোড়ায় একটি ছোট ঝুপড়ি ঘরে জন্ম সালমার। যখন থেকে তিনি বুঝতে শেখেন, তখন থেকে দেখছেন তার পরিবারের নিজস্ব ভূমি বলতে কিছু নেই। সালমা বাবাকে প্রায়ই প্রশ্ন করতেন, আমাদের নিজস্ব জমি বলে কি কিছু নেই?

সড়কের পাশে সরকারি জায়গায় জন্ম নেওয়া সালামার বয়স এখন ২৭ বছর। তিনি এখন তিন সন্তানের মা। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় আগামীকাল বুধবার (৯ আগস্ট) ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে ২২ হাজার ১০১টি পাকা ঘর হস্তান্তর করা হ‌বে। তার একটি ঘরের মালিকানা পেয়েছেন সালমা। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাওয়ায় সালমা খুব খুশি। বঙ্গবন্ধু কন্যার কাছ থেকে পাওয়া উপহারের প্রতি সম্মান জানাতে তাকে (প্রধানমন্ত্রীকে) একটি কবুতর উপহার দিতে চান তিনি।

মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আমানউল্লাহপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয় সালমার। তিনি বলেন, আমাদের ঘর ছিল না। রাস্তায় থাকতাম। প্রধানমন্ত্রী একটি ঘর দিয়েছেন আমার নামে।  প্রধানমন্ত্রীকে আমার পালা একটি কবুতর উপহার দিতে চাই। আমার ১১টি কবুতর থেকে তাকে একটি কবুতর দেব।

মুজিববর্ষে ভূমিহীন-গৃহহীন সব অসহায় মানুষকে নতুন ঘর উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই অংশ হিসেবে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় এবার সারা দেশে ২২ হাজার ১০১টি পাকা ঘর দেওয়া হবে। এ দফায় নোয়াখালী জেলায় ৪১৮টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। এর মধ্যে বেগমগঞ্জের আমানউল্লাহপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৫০টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হচ্ছে। বুধবার (৯ আগস্ট) এসব পাকা ঘর আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বেগমগঞ্জের আমানউল্লাহপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে পাকা ঘর পেয়েছেন জেস‌মিন বেগম। একসময় মেঘনা নদীতে ভিটে হারাতে হয় জেসমিনের পরিবারকে।

জেসমিন বলেন, নদী আমাদের সব নিয়ে গেছে। বাঁধের গোড়ায় (চন্দ্রগঞ্জের পশ্চিম বাজার) গত ১৭ বছর থেকে আছি। রাস্তার পাশে সরকারের জমিতে ছিলাম। এখন আমরা ঘর পেয়েছি।

প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তাকে আবার সরকারপ্রধান হিসেবে দেখার অভিপ্রায় প্রকাশ করেছেন জেসমিন।

তিনি বলেন, ‌‘যে আমাদের ঘর দিয়েছে, আমরা চাই তিনি আবার ক্ষমতায় আসুন। তার জন্য আমরা আল্লার কাছে দোয়া করি। আল্লা তারে বাঁচাইয়া রাখুক।’

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থে‌কে পাওয়া তথ্য বল‌ছে, এ দফায় ঘর হস্তান্তরের মধ্য দি‌য়ে দে‌শের ১২‌ জেলার সকল উপজেলাসহ সারাদেশে মোট ১২৩‌টি উপজেলা গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করা হ‌বে। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে তিন উপজেলায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হ‌য়ে বাড়িসহ জমি হস্তান্তর করবেন। সরকারপ্রধান যে তিন উপজেলার ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন, তার মধ্যে একটি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আমানউল্লাহপুর আশ্রয়ণ প্রকল্প। এছাড়া তিনি খুলনা জেলার তেরখাদা উপজেলার বারাসত সোনার বাংলা পল্লী আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং পাবনার বেড়া উপজেলার চাকলা আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের সুবিধা গ্রহীতাদের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময় করবেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা ঘর পাওয়াদের কাছ থেকে শুনবেন তাদের অনুভূতির কথা।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় এরই মধ্যে ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৬১৭ পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এছাড়া ভূমি মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচির অধীনে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৯৯০ পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

১৯৭২ সালে গৃহহীনদের পুনর্বাসন কর্মসূচি চালু করেন জা‌তির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মু‌জিবুর রহমান। তার দেখা‌নো প‌থে কন্যা শেখ হা‌সিনা ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের বাড়ি ও জমির মালিকানা দেওয়ার উদ্যোগ নেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ৮ লাখ ২৯ হাজার ৬০৭টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আর পুনর্বাসিত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৫ জনকে।

এনআই/এসকেডি