পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাঙালি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রতিটি ধাপে বঙ্গমাতার অবদান রয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত জন্মভূমিকে শস্য-শ্যামলারূপে গড়ে তুলতে জাতির পিতার পাশে দাঁড়ান বঙ্গমাতা।

মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

ড. মোমেন বলেন, ইতিহাসে বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিব কেবল একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রনায়কের সহধর্মিণীই নন, বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে অন্যতম এক নেপথ্য অনুপ্রেরণাদাত্রী, রাজনৈতিক সহকর্মী হিসেবে আজীবন প্রিয়তম বঙ্গবন্ধুর ছায়াসঙ্গী ছিলেন।

দেশের জন্য বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে বঙ্গমাতার সারা জীবনের ত্যাগের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বেগম ফজিলাতুন নেছা আড়ালে থেকে তার গার্হস্থ্য জীবনের কর্তব্য পালন আর মন-মস্তিষ্কে স্বামী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সহযোগিতা করে গেছেন আজীবন। খোকা থেকে শেখ মুজিব। শেখ মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু এবং সবশেষে বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা। এগুলোর পেছনে আজীবন স্বামীকে সাহস জুগিয়েছেন বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, দিয়েছেন অনুপ্রেরণা ও গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ।

রাজনীতিতে বঙ্গমাতার দূরদর্শিতা ও অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী হিসেবে দীর্ঘকাল তার পাশে থেকে মানবকল্যাণ ও রাজনীতির শিক্ষা লাভ করেছিলেন বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব। তিনি সংগঠনকে (আওয়ামী লীগ) সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন। সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে সব সময় তার যোগাযোগ ছিল। নিজের গহনা বিক্রি করে ছাত্রলীগের সম্মেলনে টাকা দিয়েছেন।

ড. মোমেন বলেন, উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সম্পত্তি থেকে আয় করা টাকায় তিনি অনেক মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থাও করেছিলেন। এছাড়াও দলীয় কার্যক্রম, আন্দোলন সংগ্রামে নিজের অর্থ-সম্পদ দিয়ে সাহায্য করেছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বঙ্গমাতা এবং তাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের হত্যা করে। এমনকি ১০ বছরের শিশুপুত্র শেখ রাসেলকেও হত্যা করে। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন বর্বর ঘটনা বিরল।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব বাংলাদেশের জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের প্রতিটি পদক্ষেপ ও কার্যক্রম বাস্তবায়নে জাতির পিতার নেপথ্যের শক্তি, সাহস ও বিচক্ষণ পরামর্শক হয়ে নিভৃতে কাজ করে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকেছেন শক্তি হয়ে, অনুপ্রেরণা হয়ে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সংগ্রাম, আন্দোলন ও কারাজীবনে বঙ্গমাতা এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। স্ত্রী হিসেবে তার জীবনকালে কখনো স্বামীকে একনাগাড়ে দুই বছর সঙ্গে পাননি। কিন্তু কোনো দিন কোনো অনুযোগ-অভিযোগ ছিল না, কখনো বলেননি যে তুমি রাজনীতি ছেড়ে দাও। জীবনে কোনো প্রয়োজনে কোনো দিন বিরক্ত হননি। যত কষ্টই হোক কখনো ভেঙে পড়তে দেখা যায়নি তাকে।

কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, একজন মানুষ কীভাবে তার সমস্ত চিন্তা এবং চেতনাকে কাজে লাগিয়ে সামগ্রিকভাবে জনকল্যাণে সেটা নিয়োগ করে আজকের দিনে বঙ্গমাতা আমাদের কাছে সেই অসাধারণ দৃষ্টান্ত। আমরা তাকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।

তিনি বলেন, সরকারের কাছে নিবেদন, বঙ্গমাতাকে নিয়ে রচিত একটি বই যেন শিক্ষার্থীদের স্কুলের পাঠ্য করা হয়, যেন শিক্ষার্থীরা গভীরভাবে সেটা পড়ে এবং তাদের নিজেদের চেতনাকে আলোকিত করতে পারে।

অনুষ্ঠানে শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ছিলেন অত্যন্ত বিচক্ষণ। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তিনিই জাতিকে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। আর এসব নির্দেশনা তিনি বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে সংগ্রহ করতেন নানা উপায়ে।

এনআই/এসএসএইচ/