রেলপথের কয়েকটি স্থানে মাটি ও পাথর সরে উঁচু-নিচু হয়ে যায়

দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেল নেটওয়ার্কে ৪৫তম জেলা হিসেবে যুক্ত হতে যাচ্ছে কক্সবাজার। প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চললেও বাগড়া দিয়েছে আগস্টের মাঝামাঝিতে হওয়া প্রবল বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল। সে সময়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রকল্পের আধা কিলোমিটারের মতো রেলপথ।

রেলপথের কয়েকটি স্থানে মাটি ও পাথর সরে উঁচু-নিচু হয়ে যাওয়ার ঘটনা দেশব্যাপী বেশ আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়। আশঙ্কা তৈরি হয় নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা নিয়ে (সেপ্টেম্বর)। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১০০ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত এই অংশ মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে সংস্কার করা হবে। এরইমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, প্রকল্পের সাতকানিয়ার তেমুহনী এলাকায় রেলপথটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত অংশে আধা কিলোমিটারের মতো রেলপথের কোথাও উঁচু আবার কোথাও নিচু হয়ে গেছে। পাথর সরে গিয়েছে স্লিপারের মাঝ থেকে। সৃষ্টি হয়েছে হাঁটু থেকে বুক সমান অসংখ্য বড় বড় গর্ত। রেলপথটি আবার সংস্কার না করে কোনোভাবেই ট্রেন চালানো সম্ভব হবে না।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকল্পে পর্যাপ্ত পানি প্রবাহের ব্যবস্থা না থাকায় এমন ক্ষতি হয়েছে। পানি প্রবাহের পথ যদি ঠিক থাকতো, তাহলে এমন ক্ষতি হতো না।

সাতকানিয়া এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রকল্পের যেখানে ব্রিজ প্রয়োজন ৫০টি, সেখানে ব্রিজ দিয়েছে ২০টি। সেগুলো আবার ছোটছোট। এলাকার মানুষদের বাঁচাতে হলে এসব ছোট ব্রিজ দিয়ে হবে না। বড়বড় ব্রিজ বানাতে হবে।

ক্ষতিগ্রস্ত রেলপথ দেখতে গত ১৮ আগস্ট প্রকল্প এলাকার সাতকানিয়ায় গিয়েছিলেন রেলপথ সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবির। তখন তিনি জানিয়েছেন, টেকনিক্যাল টিমের সঙ্গে বসে ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন দ্রুত ঠিক করা হবে। সেপ্টেম্বরের দিকে সব কাজ শেষ করে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ট্রায়াল রানের পর একই মাসের শেষ সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ চালু হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের শুরুতে যে পরিমাণ কালভার্ট ব্রিজ রাখা হয়েছিল, স্থানীয়দের দাবিতে তার চেয়ে আরও অনেক বেশি কালভার্ট-ব্রিজ করা হয়েছে। প্রয়োজন হলে আমরা আরও কিছু কালভার্ট করে দেব, যাতে ভবিষ্যতে পানি আর না হয়।

ওইদিন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান তমা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতাউর রহমান ভূঁইয়া বলেন, পুরো প্রজেক্টের জন্য এটি সামান্য কাজ। এটি আলাদা কোনো কাজ না। প্রজেক্টের কাজের পাশাপাশি এই অংশের মেইনটেন্যান্সটাও চলতে থাকবে। এর জন্য আলাদা কোনো সময় লাগবে না।

এ বিষয়ে কথা হয় দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মো. মফিজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে কাজ শেষ করবো। আর অক্টোবরের মাঝামাঝি বা শেষ সপ্তাহে এ রেলপথ চালু হবে। তবে এখনও তারিখ নির্ধারিত হয়নি। পাহাড়ি ঢলে প্রকল্পের যে অংশটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা দুই সপ্তাহের মধ্যে ঠিক করে ফেলব। আমরা এরইমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছি।

ক্ষতিগ্রস্ত অংশের জন্য অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর জন্য অতিরিক্ত কোনো অর্থের প্রয়োজন হবে না। কারণ আমরা তো এখনও কাজ বুঝে নেইনি। এটা পুরোটা ঠিকাদারের দায়িত্ব। ছোটখাটো যে ক্ষতিটা হয়েছে, এটা ঠিকাদার নিজেই করে নেবে। সব ঠিক করেই ঠিকাদার আমাদের কাজটি বুঝিয়ে দেবে। 

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ৩৯টি বড় সেতু, ২২৩টি ছোট সেতু ও কালভার্ট, বিভিন্ন শ্রেণির ৯৬টি লেভেল ক্রসিং নির্মাণ করা হয়েছে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্পে। হাতি চলাচলের জন্য রয়েছে আন্ডারপাস। নির্মাণ করা হয়েছে নয়টি স্টেশন। এগুলো হলো- দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজরা, ইসলামাবাদ, রামু ও কক্সবাজার।

দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প ২০১০ সালের ৬ জুলাই একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৮ সালে ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২২ সালের ৩০ জুন সময়ে। পরে এক দফা বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ করা হয় ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এতে ব্যয় ধরা হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। প্রকল্পে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। তবে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও ব্যয় বাড়েনি। এ প্রকল্পের কাজ পুরোদমে চলায় প্রায় এক বছর আগেই তা সমাপ্ত হতে যাচ্ছে।

২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল প্রকল্পটি ‘ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। রেলপথটি নির্মিত হলে মিয়ানমার, চীনসহ ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের করিডোরে যুক্ত হবে বাংলাদেশ।

এমএইচএন/জেডএস