ইরাক প্রবাসী মোসলেম অপহরণকাণ্ড যেন সিনেমাকেও হার মানায়
ভাগ্যের শিকে ছিঁড়তে ২০১৬ সালে ইরাকে যায় নবাবগঞ্জের বাসিন্দা মোসলেম মোল্লা (৩০)। সেখানে নিজ দেশেরই কয়েকজন প্রবাসীর হাতেই শিকার হন অপহরণের। এরপর ইমো অ্যাপে লাইভ ভিডিও কলে নির্যাতনের চিত্র পরিবারকে দেখিয়ে চাওয়া হয় মুক্তিপণ। নয়তো মোসলেমকে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়।
ইরাক প্রবাসী মোসলেমের এ অপহরণকাণ্ড যেন সিনেমার থ্রিলার গল্পকেও হার মানিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি এ ঘটনায় অভিযুক্ত ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তারা হলেন- আলী হোসেন (৪৯), মো. শামীম (২৫), শিরিন সুলতানা (৩৫), মোহাম্মদ ঘরামী (৫১), রবিউল ঘরামী (২৪), শাহিদা বেগম (৫২), সাহনাজ আক্তার লিপি (৩৮), আকবর সর্দার (৫৫)।
সোমবার (২৯ আগস্ট) পিবিআই সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পিবিআই ঢাকা জেলার ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদা।
বিজ্ঞাপন
তিনি জানান, তদন্ত চলাকালে ২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর, ৬ অক্টোবর, ২০২২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি এবং ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট ও ২৩ আগস্ট বরিশাল, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মাগুরা এবং খুলনায় অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, মোসলেম মোল্লা ২০১৬ সালে জীবিকার তাগিদে ইরাক যান। সেখানে অবস্থানকালে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি সেলিম মিয়া ও শামীমসহ আরো কয়েকজন মোসলেম মোল্লাকে কাজের কথা বলে অন্যত্র অপহরণ করে নিয়ে যায়। ভালো বেতনের কাজের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে আসামি আনোয়ার, শাহনেওয়াজ, রুহুল আমিন, মনির, হাসিবুর ও সাব্বিরের হাতে তুলে দেয়। এরপর ভুক্তভোগীকে নিয়ে আসামিরা একটি আবদ্ধ রুমে আটক করে রাখে। এছাড়া তার সঙ্গে থাকা ২ হাজার ইউএস ডলার ও দেড় লাখ টাকা মূল্যের আইফোন ছিনিয়ে নিয়ে তাকে নির্যাতন করতে থাকে।
তিনি বলেন, তিনদিন ধরে নির্মম, বর্বর নির্যাতনের পর সেই নির্যাতনের দৃশ্য ইমো অ্যাপের মাধ্যমে ভিডিও কলে নিহত যুবকের মা খতেজা বেগমকে দেখায় এবং মোট ১১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
ভুক্তভোগীর মা ছেলের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আসামিদের পাঠানো ১২টি বিকাশ নাম্বারে মোট ছয় লাখ টাকা দেন। আসামি আনোয়ার, শাহনেওয়াজ, রুহুল আমিন, মনির, হাসিবুর ও সাব্বিরকে ইরাকে অবস্থান করলেও বাংলাদেশে তাদের পরিবারের সদস্যরা এই মুক্তিপণের টাকা বিভিন্ন মাধ্যমে করে হাতিয়ে নেয়।
পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, ভুক্তভোগী যুবককে মুক্তি না দিয়ে তার মায়ের কাছে আরও তিন লাখ টাকা দাবি করে অভিযুক্তরা। এরপর ভুক্তভোগী পরিবার ঢাকার নবাবগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে পিবিআই ঢাকা জেলা মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে। এর মধ্যেই ঘটনার চার মাস পর পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে নির্যাতিত মোসলেম।
গ্রেপ্তারদের সম্পর্কে ঢাকা জেলা পিবিআই প্রধান বলেন, শাহনেওয়াজ অপহরণ চক্রের দলনেতা। গ্রেপ্তার ৮ আসামির মধ্যে ৬ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আসামিদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। আলী হোসেন (৪৯), মোহাম্মদ ঘরামী (৫১) ও রবিউল ঘরামীর (২৪) বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা রয়েছে ও মুন্সীগঞ্জের সদর থানার মামলা মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা রয়েছে।
এছাড়া আসামি মো. আকবর সরদারের (৫৫) বিরুদ্ধে মাগুরার মহম্মদপুর থানার মামলা মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা রয়েছে।
জেইউ/এমজে