ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল/ ফাইল ছবি

সারা দেশ থেকে প্রতিদিন হাজারো মানুষ চিকিৎসার জন্য আসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। কিন্তু দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ হাসপাতালটিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বেসরকারি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হয়ে ঢামেকে দালালির কাজ করে কিছু সংঘবদ্ধ চক্র। যাদের প্রধান কাজ— বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ঢামেক থেকে রোগী ভাগিয়ে নেওয়া।

রোগী ভাগানোকে কেন্দ্র করে এসব দালাল গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটে। যার প্রতিফলন ঘটেছে গতকাল রোববার মধ্যরাতে। সেসময় ঢামেকে দালালদের দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এমনকি মারামারির ঘটনাও ঘটে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন আহতও হয়েছেন।

রোববার (২৭ আগস্ট) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢামেক এলাকায় এমন সংঘর্ষে জড়ান দালালরা। সংঘর্ষের সময় দুই পক্ষ রীতিমতো সেখানে ‘শো ডাউন’ করে!

আরও পড়ুন >> ঢামেকে সরকারি ইনজেকশন রোগীর কাছে বিক্রি করে দিলেন নার্স 

ঢামেক সূত্রে জানা যায়, ঢাকা মেডিকেলে দালালদের দুটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায়ই রোগী ভাগিয়ে নেওয়াকে কেন্দ্র করে ঝামেলা সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে তারা বাইরে থেকে বিভিন্ন লোকজন এনে মেডিকেলে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে। কয়েক মাস আগে ২১২ নাম্বার ওয়ার্ড থেকে রোগী ভাগিয়ে টিজি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে নোবেল নামে এক দালালের সঙ্গে ডাক্তারদের টানাটানি হয়।

পরে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। গতকাল রোববারও রোগী ভাগিয়ে নেওয়াকে কেন্দ্র করে নোবেল ও নাদিম গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।

আরও পড়ুন- ঢামেকের প্যাথলজি বিভাগ : ‘অনিয়ম’ যেখানে নিয়ম

প্রত্যক্ষদর্শী ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ঢাকা মেডিকেলের ২১১ নাম্বার ওয়ার্ডে এনআইসিইউ সংকট রয়েছে। সংকট দেখিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যান দালালরা। রোববার দালালদের দুই গ্রুপের মারামারি হয় এখানকার রোগী ভাগানো নিয়ে।

মারামািরির ঘটনায় আহত নাদিম নামে এক দালাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি রাতে ২১১ নাম্বার ওয়ার্ডের সামনে ছিলাম। আমি মেডিকেয়ার হাসপাতালে চাকরি করি। রাত ১২টার দিকে আমার ভাগ্নির ২১২ তে সিজার হচ্ছিল। আমি সেখানে দাঁড়িয়েছিলাম। এ সময় দালাল নোবেলের নেতৃত্বে ২৫-৩০ জনের একটি দল আমাকে দুই তলা থেকে নামিয়ে মেডিকেলের বাগান গেটের ভেতরে নিয়ে গালাগালি করে এবং মারধর করে। পরে আমাদের লোকজন খবর পেয়ে তাদের ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়। আমি মেডিকেলে এসে চিকিৎসা নিই।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, মোহাম্মদপুরের কলেজগেটে ডা. মাহফুজের টিজি হাসপাতালে রোগী নেওয়ার জন্য প্রায়ই নোবেলের দল বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দেয়। মূলত ২১১ এবং ২১২ নাম্বার ওয়ার্ডের রোগী ভাগিয়ে টিজি হাসপাতালে নেওয়ার জন্য তারা এই হামলা ও মারধর করে।

এ বিষয়ে দালাল নোবেল বলেন, আমি একটি অনলাইন গণমাধ্যমে কাজ করি। সেটির তথ্য সংগ্রহ করতে ঢামেকে যাই। তারা আমাকে জরুরি বিভাগের পাশের ব্রিজের ওপর একা পেয়ে মারধর করে। আমি আনসার সদস্যদের সহযোগিতায় পুলিশ ক্যাম্পে আশ্রয় নিই।

দালালির অভিযোগের বিষয়ে নোবেল বলেন, আমি কোনো দালালি করি না। আমি সেখানে সংবাদ সংগ্রহের কাজে গিয়েছিলাম। আর আমি কাউকে মারধর করিনি বরং তারাই আমাকে আহত করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মেডিকেলের এক কর্মচারী বলেন, রোববার রাতে আমার সঙ্গে নোবেলের মেডিকেলের বাগান গেইটে দেখা হয়। তখন নোবেল বলেন, ‘নাদিমরে আজকে মারতে মারতে জরুরি বিভাগে দিয়ে এসেছি, আজ ওই গ্রুপের যাকে পাব তাকেই পেটাব।’

আরও পড়ুন- রোগী মারা যাওয়া পর্যন্ত কমিশন ঢোকে তাদের পকেটে

ঢামেকের ওই কর্মচারী আরও বলেন, নোবেল পুরো বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন কথা বলছে। সংবাদ সংগ্রহের কাজে আসার বিষয়টি হাস্যকর।

জানতে চাইলে ঢামেক হাসপাতালের আনসারের প্লাটুন কমান্ডার(পিসি) উজ্জ্বল বেপারী বলেন, গতকাল মধ্যরাতে একটি মারামারির ঘটনা ঘটেছে। কে বা কারা মারামারি করেছে, সে বিষয়টি বলতে পারছি না। প্রথমে একটি গ্রুপ বাগান গেইটে একজনকে মারধর করে বলে জানতে পেরেছি। পরে অন্য আরেকটি গ্রুপ জরুরি বিভাগের পাশের ব্রিজের ওপর পাল্টা মারধর করে পালিয়ে যায়।

আরও পড়ুন- ‘চিকিৎসক খুঁজে পাচ্ছেন না রোগী, রোগী পাচ্ছেন না চিকিৎসক’

এ বিষয়ে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হক বলেন, আমি বিষয়টি আপনার কাছ থেকে জানলাম। আমাদের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডের জন্য আইসিইউ তৈরি করা হচ্ছে। এনআইসিইউ এক্সটেন্ড করা খুবই কষ্টকর। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি এটা কীভাবে আরো বাড়ানো যায়।

এমন ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং মারামারির ঘটনা যেন আর না ঘটে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে রোগী ও তাদের স্বজনদের পদে পদে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এসব অনিয়মের সঙ্গে সরকারি স্টাফ ও অ্যাম্বুলেন্স চালকদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া যায়।

এসএএ/এমজে