রাজধানীর কলাবাগানের সেন্ট্রাল রোডের একটি বাসায় শিশু গৃহকর্মী হেনা হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রধান ও একমাত্র আসামি গৃহকর্ত্রী মোছা. সাথী পারভীন ডলিকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ।

শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় তাকে গ্রেপ্তার দেখায় কলাবাগান থানা পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, নিহত গৃহকর্মীর নাম মোছা. হেনা (১০)। তার বাবার নাম হক মিয়া। তার বাড়ি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায়। তার বাবা-মা দুজনই মৃত। তিন বছর আগে ময়মনসিংহে একটি ট্রেনিং করতে গিয়ে এতিম হেনার স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে ঢাকায় নিয়ে আসেন গৃহকর্ত্রী সাথী।

শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, হেনার বাবা ও মা দুজনই মৃত। এতিম হেনাকে তিন বছর আগে ঢাকায় নিয়ে আসেন গৃহকর্ত্রী সাথী। নির্যাতনে মারা যাওয়া হেনার পরিচয় শনাক্তের পর স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে হেনার মরদেহ।

তিনি বলেন, সাথী বাসায় চারটি মোবাইল ফোন ফেলে পালিয়ে ছিল। তার সঙ্গে কোনো মোবাইল ফোন ছিল না। জব্দ করা চার মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে কয়েকশ নম্বরে যোগাযোগ করা হয়।

ওসি বলেন, আমরা এমন একটি মেসেজ পাই যে, যশোর কোতোয়ালি থানায় সাথী আছে। এ সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি টিমকে যশোরে পাঠিয়ে পরিচয় শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করে ঢাকায় আনা হয়েছে।

রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হবে।

এর আগে পুলিশ সূত্র জানিয়েছিল, তাদের ধারণা কলাবাগানের সেন্ট্রাল রোডের ওই বাসায় প্রায়ই শিশু গৃহকর্মীকে (১০) নির্যাতন করা হতো। গত শুক্রবার (২৫ আগস্ট) সকালেও হয়ত ওই শিশু গৃহকর্মীকে নির্যাতন করা হয়েছিল। শিশুটি মারা যাওয়ার পর রান্নার সব কিছু আর মোবাইল ফেলে লাপাত্তা হয়ে যান গৃহকর্ত্রী সাথী

কলাবাগান থানা পুলিশের দাবি, শুক্রবার(২৫ আগস্ট) রাতে অজ্ঞাত ফোনে গৃহকর্মী মৃত্যুর প্রাথমিক তথ্য পায় কলাবাগান পুলিশ। এরপর রাত দেড়টার দিকে কলাবাগান থানাধীন সেন্ট্রাল রোডের ৭৭নং ভবনে গিয়ে বেশ কয়েকটি বাসায় খোঁজও নেয় পুলিশ। ওই ভবনটিতে ৪৪টি ফ্ল্যাট রয়েছে। মধ্যরাতে সব ফ্ল্যাটে খোঁজ নেওয়া বেগতিক বুঝে ফিরে যায় পুলিশ। পরদিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাড়ি মালিক সোসাইটির লোকজনকে নিয়ে ভবনটির দ্বিতীয় তলা ই-১ ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতর থেকে অজ্ঞাত গৃহকর্মী শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

মৃত্যুর আনুমানিক ২৪ ঘণ্টা পর শনিবার (২৬ আগস্ট) সকালে মরদেহ উদ্ধারের পর সুরতহালে পুলিশ দেখতে পায়, শরীরে অনেক নতুন ও পুরোনো আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মুখে ফেনা, শরীর ফোলা। মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এর দু’দিন পর নিহত গৃহকর্মীর পরিচয় শনাক্ত করতে সক্ষম হয় পুলিশ।

/জেইউ/এসএসএইচ/