হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শুল্ক বিভাগের গুদামের লকার থেকে সোনা চুরি যাওয়ার ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। থানা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দুদকে পাঠালে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে সংস্থাটি।

সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে দুদক কার্যালয়ে তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা পোস্টকে এ কথা জানান দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন। 

দুদক সচিব বলেন, বিষয়টি আসলেই দুঃখজনক। এ বিষয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ থানায় মামলা দায়ের করেছে। এখন থানা কর্তৃপক্ষ যদি দেখে এটা দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ, তাহলে তারা দুদকে পাঠালে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সোনা চুরির ঘটনায় মামলার তদন্তে এরইমধ্যে ৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বিমানবন্দর থানা পুলিশ।

এর আগে, রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকা শুল্ক বিভাগের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় সোনা চুরির ঘটনায় মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালে উদ্ধার হওয়া ৪৮টি ডিএম বার যার ওজন ৮.০২ কেজি ও ২০২০ থেকে ২০২৩ সালে বিভিন্ন সময়ে আটক ৩৮৯টি ডিএম বার যার মোট ওজন ৪৭.৪৯ কেজি সোনা আলমারির লকার ভেঙে চুরি হয়েছে। গত শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১২টা ১৫ মিনিট থেকে পর দিন সকাল ৮টা ৩০ এর মধ্যে কে বা কারা বর্ণিত সোনার বার ও স্বর্ণালংকার গোডাউন থেকে স্টিলের আলমারির লকার ভেঙে চুরি করেছে। 

রোববার সকাল ৯টার দিকে ঢাকা শুল্ক বিভাগের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও গুদামের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা মাসুদ রানা শুল্ক বিভাগের এক যুগ্ম কমিশনারকে জানান, বিমানবন্দরের ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ শাখার কাছে শুল্ক বিভাগের গুদামের মূল্যবান পণ্যসামগ্রী রাখার একটি স্টিলের আলমারির লকার ভাঙা আছে। মাসুদ রানা যুগ্ম কমিশনারকে আরও জানান, প্রতিদিনের মতো আটক পণ্য গুদামে রেখে তিনিসহ চারজন রাত সাড়ে ১২টার দিকে শুল্ক বিভাগ ছেড়ে চলে যান।

মামলার এজাহারে আরও বলা হয়েছে, গুদামের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এমন সংবাদ পেয়ে ওই গুদাম পরিদর্শনে যান ঢাকা শুল্ক বিভাগের কমিশনার, অতিরিক্ত কমিশনার ও যুগ্ম কমিশনার। তারা গিয়ে গুদামের একটি স্টিলের আলমারির লকার ভাঙা দেখেন। গুদামের পূর্বপাশে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের বাতাস যে অংশ দিয়ে বের হয়, সেখানকার টিনের কিছু অংশ কাটা দেখতে পান। পরে তারা গুদামের দায়িত্বে থাকা চারজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও চারজন সিপাহিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গুদামের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের কাছ থেকে কোনো সন্তোষজনক উত্তর না পেয়ে শুল্ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গুদাম থেকে কোনো মূল্যবান বস্তু চুরি হয়েছে কি না, সেটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য গুদামের দায়িত্ব কর্মকর্তাদের মৌখিক নির্দেশনা দেন।

বিমানবন্দরের ভেতরের ওই গুদামের দায়িত্ব পালন করেন চারজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও চারজন সিপাহি। তাদের মধ্যে চার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা হলেন মাসুদ রানা, সাইফুল ইসলাম শাহেদ, শহিদুল ইসলাম ও আকতার শেখ। চার সিপাহি হলেন রেজাউল করিম, মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, আফজাল হোসেন ও নিয়ামত হাওলাদার।

ঢাকা কাস্টমস সূত্র জানায়, অস্থায়ী গুদাম পূর্ণ হওয়ায় গত শুক্রবার মালামাল সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করে কাস্টমস টিম। শনিবার গুদাম থেকে মালামাল স্থানান্তর করতে গিয়ে দেখা যায় গুদামের লকার ভাঙা। সোনা চুরির এই ঘটনা জানাজানি হলে শুল্ক বিভাগ একজন যুগ্ম কমিশনারের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে।

আরএম/জেডএস