দায়িত্ব পেয়েও মামলার তদন্তে অবহেলা এবং বিবাদীকে নিজ বাংলোতে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদসহ অসদাচরণের দায়ে গুরুদণ্ড দেওয়া হয়েছে জামালপুরের ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের পুলিশ সুপার কমান্ড্যান্ট মোহাম্মদ সালাহ্ উদ্দিন তালুকদারকে। এর আগে, তিনি পিবিআই-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে ময়মনসিংহে কর্মরত ছিলেন। আগামী দুই বছরের জন্য নিম্নবেতন গ্রেডে অবনমিতকরণ করে এর গুরুদণ্ড কার্যকর করা হবে।

সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে। এতে সই করেছেন সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, মোহাম্মদ সালাহ্ উদ্দিন তালুকদার, কমান্ড্যান্ট (পুলিশ সুপার), ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার, জামালপুর ইতোপূর্বে ১৭ ডিসেম্বর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, পিবিআই, ময়মনসিংহ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দায়িত্ব পালনকালে ময়মনসিংহের বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২নং ফুলবাড়ীয়া আমলী আদালতে সিআর মামলা নং-৪৪৪/১৬, তারিখ- ২ অক্টোবর ২০১৬ সাল, ধারা-৪৪৭/৩৮৫/৫০৬/৩৪ পেনাল কোড কোর্ট পিটিশনটির তদন্ত তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে উক্ত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করা, উল্লিখিত মামলার বিবাদী মো. ইউনুছ আলীকে গত ১৩ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়ীয়া থানাধীন এনায়েতপুর ফুলতলা নামক স্থানে মামলার ঘটনাস্থলের নিকটে অবস্থিত তার নিজ বাংলো বাড়িতে ডেকে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, পিবিআই, ময়মনসিংহ হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় ২০১৬ ও তার পূর্ববর্তী সময়ে ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া থানাধীন এনায়েতপুর ফুলতলা গ্রামে আনুমানিক ৮.৮৮ একর জমি ক্রয় করে কাঁটা তারের বেড়া দেওয়া, স্থানীয় কৃষক জনৈক মজিবর, মোস্তফা এবং আরাজুল্লাহগণের ভোগ দখলকৃত জমি রেজিস্ট্রি দলিল বা কোনো প্রকার অঙ্গীকারনামা সম্পাদন ব্যতিরেকে কাঁটা তারের বেষ্টনীর ভিতরে নিজ দখলে রাখা, উল্লিখিত আনুমানিক ৮.৮৮ একর জমি যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে তার নিজ নামে ও স্ত্রীর নামে ক্রয় করা এবং পরবর্তীতে তার পিতার নিকট থেকে নিজ নামে হেবা দলিল করে নেওয়া, যা প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে সত্যতা প্রতীয়মান হয়। উল্লিখিত জমি নিজ নামে ও স্ত্রীর নামে ক্রয়ের পূর্বে কিংবা নিজ নামে হেবা দলিলমূলে গ্রহণের পূর্বে পুলিশ আইন অনুযায়ী যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি গ্রহণ না করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে গত ৪ জুলাই ২০২২ তারিখ বিভাগীয় মামলা রুজুপূর্বক তাকে কারণ দর্শানো হয়। তিনি গত ৩১ আগস্ট ২০২২ তারিখ কারণ দর্শানোর জবাব দাখিলপূর্বক ব্যক্তিগত শুনানির জন্য আবেদন করেন।

শুনানিকালে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ, লিখিত জবাব, উভয়পক্ষের বক্তব্য ও উপস্থাপিত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণাদি পর্যালোচনায় অভিযোগ প্রমাণিত হলে গুরুদণ্ড আরোপের পর্যাপ্ত ভিত্তি রয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়।

এতে আরও বলা হয়, মোহাম্মদ সালাহ্ উদ্দিন তালুকদার কমান্ড্যান্ট (পুলিশ সুপার), ইন সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার, জামালপুর-এর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ, ১ম ও ২য় কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব, ব্যক্তিগত শুনানিতে উভয়পক্ষের বক্তব্য, তদন্ত প্রতিবেদন, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রাসঙ্গিক দলিলপত্রাদি এবং অপরাধের প্রকৃতি ও মাত্রা বিবেচনায় অসদাচরণ এর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৪ (৩) এর উপ-বিধি (১)(ক) অনুযায়ী ২ (দুই) বছরের জন্য নিম্নবেতন গ্রেডে অবনমিতকরণ-এর গুরুদণ্ড দেওয়া হলো। অবনমিতকরণ বলবৎ থাকার সময়কাল বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির জন্য গণনাযোগ্য হবে না। তবে দণ্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বর্তমান বেতন স্কেলে প্রত্যাবর্তন করবেন। তিনি কোনো বকেয়া প্রাপ্য হবেন না।

/এমএম/এফকে/