বইমেলা বলতেই ক্রেতা-দর্শনার্থীদের হুড়োহুড়ি-ভিড় হবে এমনটাই স্বাভাবিক! কিন্তু করোনা মহামারির কারণে চিরাচরিত এ চিত্র একেবারে নেই মেলা প্রাঙ্গণে। সরকারের স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত কঠোর বিধিনিষেধের কারণে মেলার বিশতম দিনে ক্রেতা খুব কমই ছিল। তবে এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ‘টুকটাক’ বিক্রি করতে পেরে ‘খুশি’ প্রকাশকরা।  

মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) বেলা ১২টায় মেলার দ্বার খুললে ধীরে-ধীরে আসতে থাকে ক্রেতা-দর্শীনার্থী। মেলা প্রাঙ্গণে কিছুসংখ্যক ক্রেতাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরে নিজের পছন্দের গল্প-কবিতার, উপন্যাসের প্রিয় বই কিনে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে।

মেলা ঘুরে দেখা গেছে- লকডাউনের প্রথম দিনের তুলনায় আজকে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিল ছিমছাম। অযাচিত ভিড় ছিল না মেলা প্রাঙ্গণে। আগত ক্রেতা-দর্শনার্থীরাও বেশিরভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বিভিন্ন স্টল ও প্যাভিলিয়নে ঘুরে-ঘুরে নিজেদের পছন্দের বই কিনেছে। সঙ্গে প্রিয় লেখকের অটোগ্রাফও নিচ্ছেন। আবার কেউ-কেউ বই কেনা শেষে ‘লেখক বলছি’ মঞ্চে প্রিয়জনের সঙ্গে বসে আড্ডা মেরে অলস সময় পার করছে। অন্যদিকে ভিড়হীন ছিমছাম মেলায় এসে লেখকরাও খোঁজ নিয়ে যাচ্ছেন নিজের বই কেমন বিক্রি হচ্ছে।

প্রকাশরা বলছেন, লকডাউনের প্রথম দিন গতকাল (৫ এপ্রিল) মেলা ছিল একদম ক্রেতা ও দর্শনার্থী শূন্য। ফলে হতাশ হয়ে স্টলগুলো বিক্রকর্মীরা অলস সময় পার করে। কিন্তু আজকে ছিল তার ব্যতিক্রম। দুপুরে মেলার দুয়ার খোলার পর থেকে ধীরে-ধীরে স্টল-প্যাভিলিয়নে দর্শনার্থী-ক্রেতাদের আগমন ঘটতে থাকে। খুব বেশি না হলেও টুকটাক বেচাবিক্রি হয়েছে। তবে, অন্যান্যবার মেলার ২০তম দিনে যে রকম বিক্রি হতো সেই তুলনায় আজকে সেটা একেবারেই নগন্য। তাই অনেক প্রকাশক ক্ষতি কিছুটা কমিয়ে নিতে বিক্রয়কর্মীর ছাঁটাই করে নিজেরাই বেচা-বিক্রির কাজ করছেন।

হাঁটতে-হাঁটতে মেলা প্রাঙ্গণে কথা হয় চারুলিপির সত্ত্বাধিকারী হুমায়ুন কবীরের সঙ্গে। আলাপে তিনি জানান, করোনার কারণে এবারের মেলার শুরু থেকেই বেচা-বিক্রি কম। যা বিক্রি হয় তার বেশি বেতন আসে বিক্রয়কর্মীদের। তাই বিক্রয়কর্মী বাদ দিয়ে নিজেরাই এখন সেই কাজ করছি।

তিনি আরও বলেন, লকডাউনের গতকালের তুলনায় আজকে বিক্রিটা কিছুটা ভালো। তবে এ রকম বিক্রি হলে করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে না। কিন্তু তারপর মেলা শুধু বিক্রি করার জন্য নয়। মেলাকে ঘিরে আমাদের অনেকে আবেগ জড়িয়ে রয়েছে।

তাম্রলিপির প্রকাশক সেঁজুতি বলেন, আজকে মেলার প্যাভিলিয়ন খোলার পর থেকে ক্রেতারা আসতে শুরু করে। খুব বেশি না হলেও টুকটাক বিক্রিও হয়েছে। যা গতকালের তুলনায় অনেক বেশি।

তিনি বলেন, প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারির দিন কম হলেও ১০ লাখ টাকার বই বিক্রি হতো। কিন্তু এবার পুরো মাসেই সেটা বিক্রি হবে কিনা চিন্তার বিষয়।

এবারের মেলায় তরুণ লেখক ও সাংবাদিক নওশাদ জামিলের লেখা নতুন বই ‘প্রত্যাবর্তন’ প্রকাশ করেছে নালন্দা প্রকাশনী। দুপুরের পরে মেলা ঘুরতে এসেছেন এই লেখক। মেলার প্রাঙ্গণে আলাপচারিতা তিনি বলেন, করোনারকালে মেলার পরিবেশ এমনি হওয়া উচিত। দেখনে মেলা প্রাঙ্গণে তেমন ভিড় নেই। পাঠক ও ক্রেতারা স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরে নিজেদের পছন্দের বই সংগ্রহ করতে পারছেন। আমি সব সময় মেলার এমন পরিবেশ চাই।

মেলার ২০টি স্টল বন্ধ
কঠোর বিধিনিষেদের দ্বিতীয় দিনও ঘুরে দেখা যায়, মেলা পূর্ব প্রাঙ্গণে ২০টি স্টল বন্ধ করে রাখা হয়েছে। করোনার কারণে এবার মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রায় ১৫ হাজার বর্গফুটে। মেলার শুরু থেকে পূর্বপাশের স্টলগুলো অভিযোগ করে আসছে- এ পাশে তেমন ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের আগমন ঘটে না। ফলে তাদের বেচা-বিক্রি নেই বললেই চলে। আর লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ হওয়া যাতায়াত ভাড়া ও দুপুরের খাবার মিলে প্রায় হাজার টাকার মতো খরচ হয়। যা দিনে বিক্রিও হয় না। এ কারণে তারা স্টল না খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মেলার দ্বিতীয় দিন যেসব স্টল বন্ধ ছিল- ইছামতি, শৈলী, স্বরবৃত্ত, রাবেয়া, গতিধারা, বাবুই, নওরোজ, বটেশ্বর, এক রুদ্র এক ঘড়ি, গৌরব, তিউভি, নৃ, সুলেখা, শিল্পতরু, ইন্তামিন, দেশজ, হাসি, নিমামিয়া।

আজকের নতুন বই
বাংলা এবাডেমির তথ্য মতে, আজ মেলার ২০তম দিনে নতুন বই এসেছে ২৮টি। মোট বই এসেছে ২ হাজার ১৭টি। আজকের বইয়ের মধ্যে উপন্যাস-৪, প্রবন্ধ-১, কবিতা-৫, গবেষণা-২ এবং অন্যান্য-৪টি বই।

বুধবার (৭ এপ্রিল) মেলা শুরু হবে বেলা ১২টায় এবং চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।

এএইচআর/এসএম