স্বার্থসংশ্লিষ্ট মহলের চাপে ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) সংশোধন ঢাকা শহরের বাসযোগ্যতাকে আরও সংকটে ফেলবে বলে উল্লেখ করেছে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)।

সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) আইপিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খানের সই করা এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়।

অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, শহরের বাসযোগ্যতাকে ছাড় দিয়ে আবাসন প্রকল্পে ভবন নির্মাণের জন্য নির্ধারিত ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর) ছাড় দিয়ে রাজধানীর বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ ২০১৬-৩৫) সংশোধনের যে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে, তাতে গভীর উদ্বেগ জানাচ্ছে আইপিডি। পরিকল্পনাবিদদের মতামতকে উপেক্ষা করে এবং ড্যাপ রিভিউ সংক্রান্ত ওয়ার্কিং কমিটির সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই আবাসন ব্যবসায়ীসহ কতিপয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট মহল ও পেশাজীবীর চাপে ড্যাপের এই সংশোধন বাসযোগ্য নগর গড়বার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র এবং সরকারের অঙ্গীকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

এই সংশোধনীটি এমন সময়ে চূড়ান্ত করা হলো, যখন অল্প কয়েকদিন আগেই কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিপাতেই ঢাকা শহরে স্মরণাতীতকালের মধ্যে ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় বাসযোগ্যতা সংকটের বিষয়টি আবারও সাধারণ জনগণের নিকট উন্মোচিত হয়েছে। 

তিনি বলেন, ড্যাপ সংশোধনের আগেই এলাকাভিত্তিক ও ব্লকভিত্তিক এফএআরের (ফার) যে মান দেওয়া ছিল, পরিকল্পনার বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী তা এমনিতেই বেশি ছিল। আমরা বার বার বলে এসেছি, নাগরিক সুবিধাদি, পরিষেবা ও  অবকাঠামোর বিবেচনায় ঢাকা শহর চারগুণের ও বেশি জনসংখ্যা, জনঘনত্ব, ভবন ও অবকাঠামো ধারণ করে আছে। ফলে ঢাকাকে বাঁচাতে উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণের কোনো বিকল্প নেই। তাই পরিকল্পনা দলিল হিসেবে ড্যাপকে প্রকৃত অর্থে কার্যকর করতে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যেকোনো মহলের চাপের বিপরীতে রাজউক ও সরকারের অনমনীয় দৃঢ়তার কোনো বিকল্প ছিল না। 

অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, আবাসন সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সম্প্রতি রাজউককে জরিমানা সাপেক্ষে অবৈধ ও বিচ্যুতি নিয়ে নির্মিত বহুতল ভবন বৈধ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেছে। অথচ রাজউকসহ সরকারি সংস্থাগুলোর চোখের সামনেই এসব ভবনগুলো নির্মিত হয়েছে। এই বিষয়ে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের গাফিলতি এবং অবৈধ ভবনের মালিক কিংবা অবৈধ আবাসন প্রকল্পের মালিকের ব্যাপারে বিস্ময়করভাবে নীরব ভূমিকা পালন করছে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা। এভাবেই দিনে দিনে পরিকল্পনা, আইন ও মহাপরিকল্পনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে ঢাকাকে করা হচ্ছে চরমভাবে বসবাসের অযোগ্য।

তিনি বলেন, শুধুমাত্র অর্থ জরিমানা দিয়ে অবৈধ বহুতল ভবন বৈধ করার উদ্যোগের মহাপরিকল্পনা এবং ইমারত ও উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট আইনগুলোকে আরও অকার্যকর করবে। ব্যবসায়ী ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মহলের মুনাফা নয় বরং রাষ্ট্রকে প্রাধান্য দিতে হবে শহরের বাসযোগ্যতা, পরিবেশ সুরক্ষা, সার্বিক জনকল্যাণ ও জনস্বাস্থ্যের দিকে। শুধু ভবনের উচ্চতা সংশ্লিষ্ট বিষয় নয়, ড্যাপে অনুমোদনহীন শিল্প কারখানা, নিয়ন্ত্রণহীন মিশ্র ব্যবহার, জলাশয়-জলাভূমির ব্যবহার, অবৈধ আবাসন প্রভৃতি বিষয়গুলোকে সামনে রেখেই ড্যাপ সংশোধনের যেকোনো উদ্যোগকে স্বাগত জানাবে আইপিডি।

এএসএস/কেএ