মিরকাদিম ২ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার ও প্যানেল মেয়র আওলাদ হোসেন

‘আশপাশের কমিশনার, প্যানেল মেয়রসহ রুমে আমরা ১৫-১৬ জনের মতো ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ। জানালার কাঁচ ভেঙে চুরমার। দরজা খুলে পড়ল। ফ্লোরে আগুন দাউ দাউ করছে। মুহূর্তেই আমাদের পায়ে-হাতে আগুন ধরে গেল।’

ঢাকা পোস্টকে মুন্সিগঞ্জের রোমহষর্ক বিস্ফোরণের বর্ণনা দিচ্ছিলেন মিরকাদিম ২ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার ও প্যানেল মেয়র আওলাদ হোসেন। আগুনে তার দুই পা, হাত, চুল, পিঠসহ শরীরের ৭ শতাংশ পুড়ে গেছে।

ঢাকা পোস্টের কাছে নিজের চোখে দেখা সেই ভয়াবহ দৃশ্যের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সভা চলাকালীন সময়ে রুমে ৮-১০ জন খাটে বসেছিল। আমি এবং সালাম সাহেবও খাটেই ছিলেন। বাকিরা চেয়ারে বসেছিল। আমাদের কিছু আপ্যায়ন করা হয়েছিল। আমরা ফল খাচ্ছিলাম। আগুনে চেয়ারের যারা ছিল সবার পা জ্বলছিল, খাটে যারা ছিল হুড়োহুড়ি করতে গিয়ে আমাদের হাতে পায়েও আগুন ধরে যায়।

‘দেখলাম দরজার পাশে দাঁড়ান সালাম সাহেবের (মিরকাদিম পৌরসভার মেয়র আব্দুস সালাম) স্ত্রী কাননের শরীরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছিল। তাকে রক্ষা করার সুযোগ ছিল না। আমি আমার মতো করে আগুন নিয়ে বাথরুমে ঢুকে যাই। পানি ঢালি। এরপর আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলো’, যোগ করেন তিনি।

দগ্ধ আওলাদ শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে চিকিৎসা নিয়ে বুধবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে বাড়ি ফিরে গেছেন। তবে তিনি এখনও শঙ্কামুক্ত নন। 

যে কারণে মিলিত হয়েছিলেন সবাই
আওলাদ হোসেন জানান, মঙ্গলবার রাতে ফোন অফিস থেকে মিরকাদিম পৌরসভার ২০১৭, ২০১৮ এবং ২০১৯ সালের আয়-ব্যয়সহ সব ধরনের কার্যক্রম, দুর্নীতির তথ্য সংক্রান্ত খাতা নিয়ে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন পৌরসভা অফিসের স্টাফ মনির। তখন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার দ্বীন ইসলাম তাকে রাস্তায় দেখেন। ‘খাতা নিয়ে কোথায় যাচ্ছ’ জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তর দেন, ‘মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয় এসব খাতা চেয়েছেন।’ তখন দ্বীন ইসলামের সন্দেহ হলে তিনি আশপাশের কমিশনার ও মেয়রদের ফোন দিয়ে বিষয়টি নিয়ে পৌর মেয়র আব্দুস সালামের বাসায় আসতে বলে। রাতে সেই বাসায় তারা মিলিত হয়েছিলেন।

স্টাফ মনির যেই ৩ বছরের খাতাগুলো সরিয়ে নিচ্ছিলেন সেসময়কার মিরকাদিম পৌরসভার মেয়র ছিলেন শহীদুল ইসলাম শাহীন।

চিকিৎসার সর্বশেষ অবস্থা
এই ঘটনায় দগ্ধ ও আহত ১৬ জনের মধ্যে ৪ জন সদর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বাকি ১২ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে পাঠানো হয়। তাদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের একজন হচ্ছেন পৌরসভা মেয়র আব্দুস সালামের স্ত্রী কানন। তার শরীরের ৮০ ভাগ পুড়ে গেছে। বর্তমানে তিনি শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি আছেন।

অপরজন হচ্ছেন মনির হোসেন। তার শরীরের ২০ ভাগ পুড়ে গেছে। বর্তমানে তিনি বার্ন ইন্সটিটিউটের হাই-ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) ভর্তি আছেন।

এ ঘটনায় দগ্ধ বাকি ৯ জনকে ছাড়পত্র দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তারা দুপুর থেকে বাড়িতে ফেরা শুরু করেছেন। তারা হচ্ছেন মিরকাদিম ২ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার ও প্যানেল মেয়র আওলাদ হোসেন (৭ শতাংশ পুড়েছে), ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার দ্বীন ইসলাম (৩ শতাংশ), পৌরসভার সচিব সিদ্দিকুর রহমান (১২ শতাংশ), মেয়রের পিএস যুবলীগ কর্মী মো. তাজুল ইসলাম (৮ শতাংশ), মো. হোসেন কালু (২ শতাংশ), মাঈন উদ্দিন (৫ শতাংশ), নৈশপ্রহরী শ্যামল চন্দ্র দাস (৮ শতাংশ), মেয়রের কর্মী মোশারফ হোসেন (৮ শতাংশ) ও পান্নু হালদার (১২ শতাংশ)। এছাড়া রবিন নামে একজন মঙ্গলবার রাতেই প্রাথমিক চিকিৎসার পর বাড়ি ফিরেছেন।

এআর/এইচকে