‘শিশুবক্তা’ রফিকুল ইসলাম। বায়তুল মোকাররম মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে এর আগে একবার তাকে আটক করা হয়

রাষ্ট্রবিরোধী ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে আটক ‘শিশুবক্তা’ রফিকুল ইসলামের মুক্তির দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানান সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী।

উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে রফিকুল ইসলামকে নেত্রকোণা থেকে আটক করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সদস্যরা। তাকে আটকের পর বুধবার (৭ এপ্রিল) হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে মুক্তির এ দাবি জানানো হয়।

বিবৃতিতে মাওলানা আজিজুল হক বলেন, ‘অবিলম্বে মাওলানা রফিকুল ইসলামকে মুক্তি দিন। অন্যথায় এ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও আলেম-ওলামার ইজ্জত রক্ষা এবং মসজিদ-মাদরাসা হেফাজতে দল-মত নির্বিশেষে লড়াই করতে আপামর জনগণ সর্বদা প্রস্তুত আছে। কোনো অপশক্তির গুম-খুন বা হুমকি-ধমকিকে নায়েবে রাসূল ওলামায়ে কেরাম ও তৌহিদী জনতা পরোয়া করে না।’

আজিজুল হক বিবৃতিতের আরও বলেন, বাংলাদেশের একজন সুপরিচিত তরুণবক্তা মাওলানা রফিকুল ইসলামকে গতরাতে নেত্রকোণা জেলার নিজ বাড়ি থেকে র‌্যাব পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, ‘রফিকুল ইসলাম একজন জনপ্রিয় ওয়ায়েজ। কুরআন ও হাদিসের আলোকে সমকালীন প্রেক্ষাপট নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা করেন। তার বয়ানে দেশের কল্যাণে মানুষের অন্তরে ঈমানী চেতনা জাগ্রত হয়। দেশের প্রতি ভালোবাসার তাগিদে জনগণকে অন্যায়-জুলুম ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে জাগ্রত হওয়ার আহ্বান করেন। এটা তার অপরাধ হলে দেশের প্রচলিত আইনের মাধ্যমে তাকে আইনের আওতায় আনতে পরতেন। কিন্তু কোনো ধরনের পূর্ব মামলা ছাড়া বিনা কারণে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া নাগরিকদের প্রতি রাষ্ট্রের অন্যায় কী পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে এটা তার জ্বলন্ত প্রমাণ।’

র‌্যাব যা বলছে

রফিকুল ইসলামকে আটকের বিষয়ে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (এএসপি) ইমরান খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ (বুধবার) ভোরে মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানীকে নেত্রকোণার পূর্বধলা থেকে আটক করা হয়। আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তাকে হস্তান্তর করা হবে।

পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মামলা হলে অবশ্যই থানা পুলিশের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হবে।

গত ২৫ মার্চ রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বরে ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের মোদিবিরোধী মিছিল থেকে ‘শিশুবক্তা’ রফিকুল ইসলামকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে তাকে আবার ছেড়ে দেওয়া হয়।

রফিকুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোণায়। থাকেন গাজীপুরে। তিনি নেত্রকোণার পশ্চিম বিলাশপুর সাওতুল হেরা মাদরাসার পরিচালক।

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক

গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ এলাকায় রয়েল রিসোর্টে মাওলানা মামুনুল হকসহ এক নারীকে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনায় ফেসবুক লাইভে এসে রফিকুল ইসলাম মামুনুল হকের সমর্থনে কথা বলেন।

রফিকুল ইসলামকে আটকের পর বুধবার দুপুরে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানী র‌্যাবের নিরাপত্তায় রয়েছে মর্মে নিশ্চিত হয়েছি।‌ অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করছি।’

এদিন (বুধবার) সকাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রফিকুল ইসলামের পরিচিত ও ভক্তরা অভিযোগ করে আসছিলেন যে বুধবার (০৭ এপ্রিল) রাত ৩টার দিকে নেত্রকোণার নিজ বাসা থেকে র‍্যাব পরিচয়ে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

রফিকুল ইসলাম সর্বশেষ তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘আমাকে গুম করার চেষ্টা চলছে।’

‘শিশুবক্তা’ শিশু নন

রফিকুল ইসলামের বয়স ২৬ বছর। নিজের নামের সঙ্গে ‘শিশুবক্তা’ শব্দটি ব্যবহারে আপত্তি জানান তিনি নিজেই। বিভিন্ন সময়ে ওয়াজে তার নামের সঙ্গে ‘শিশুবক্তা‘ ব্যবহার না করারও অনুরোধ জানান তিনি।

‘শিশুবক্তা’ বলা হলেও তা মানতে রাজি নন রফিকুল ইসলাম 

ওয়াজে নিজের বয়স সম্পর্কে রফিকুল ইসলাম বলেন, ১৯৯৫ সালের শেষের দিকে আমার জন্ম। এখনও আমাকে শিশুবক্তা বানিয়ে রাখবেন কেন? আমি ছয় বছর বয়স পর্যন্ত বাড়িতে পড়াশোনা করেছি। তারপর ক্লাস সিক্স পর্যন্ত স্কুলে পড়েছি। এরপর মাদরাসায় ভর্তি হই। নূরানিতে পড়েছি এক বছর। আল্লাহ রহমতে দুই বছরে হেফজ শেষ করেছি। এখানে তিন বছর, আগের ১২ বছর মোট হলো ১৫ বছর।  এরপর আট বছর কিতাবখানায় পড়েছি।

এএইচআর/এমএআর