বাণিজ্য, সংস্কৃতি ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে কার্যকর সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের বিষয়ে সম্মত হয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশ চিলি। স্থানীয় সময় বুধবার (৪ অক্টোবর) চিলির রাজধানী সান্টিয়াগোতে দুই দেশের প্রথম যৌথ পরামর্শক সভায় উভয় পক্ষ এসব বিষয়ে এমওইউ করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, প্রথম ফরেন অফিস কনসাল্টেশানের দিনব্যাপী বৈঠকে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ফরেন অফিস কনসাল্টেশন সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুননেসার উপস্থিতিতে বাংলাদেশের পক্ষে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন পররাষ্ট্র-সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং চিলির সরকারের পক্ষে স্বাক্ষর করেন সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাম্বাসেডর অ্যালেক্স ওয়েজিগ আবদালে।

দুই দেশের দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের সামগ্রিক বিষয় বিশেষ করে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শক্তির রূপান্তর হিসেবে বিকল্প নবায়নযোগ্য শক্তি, নারীর ক্ষমতায়ন, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা প্রভৃতি ক্ষেত্রে স্ব-স্ব রাষ্ট্রের অবস্থান ও পারস্পরিক সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা ও মানবাধিকার প্রভৃতি ক্ষেত্রে সহযোগিতা সংক্রান্ত বিষয় আলোচনায় প্রাধান্য পায়।

পররাষ্ট্র-সচিব মাসুদ বিন মোমেনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের পক্ষে অংশগ্রহণ করেন ব্রাজিলে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুননেসাসহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ। চিলির পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাম্বাসেডর অ্যালেক্স ওয়েজিগ আবদালে এবং সংশ্লিষ্ট সিনিয়র কূটনীতিকবৃন্দ।

পররাষ্ট্র-সচিব বিগত এক দশকে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত করেন। ২০৪১ সালের মধ্যে জ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে পররাষ্ট্র-সচিব উল্লেখ করেন।

দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষম্য দূরীকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন কিংবা জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের সাফল্যের প্রশংসা করে চিলির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যালেক্স বাংলাদেশ ও চিলির মাঝে চলমান বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক আরও কার্যকর করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ২০২১-২২ সালে চিলিতে ১৯২ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করে। বিগত ১০ বছরে চিলিতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি প্রতি বছর প্রায় ২০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পররাষ্ট্র-সচিব দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির পাশাপাশি রপ্তানিযোগ্য পণ্যের বৈচিত্র্য বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করেন।

চিলির আন্ডার সেক্রেটারির সঙ্গে পররাষ্ট্র-সচিবের বৈঠক

সান্টিয়াগোর স্থানীয় সময় বুধবার বিকেলে চিলির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি ও ভাইস-মিনিস্টার গ্লোরিয়া গঞ্জালেস এবং পররাষ্ট্র-সচিব মাসুদ বিন মোমেনের মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে ভাইস-মিনিস্টার গ্লোরিয়া গঞ্জালেস বিগত এক দশকে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বিশেষ করে দারিদ্র্য বিমোচন ও নারীর ক্ষমতায়নে সরকারের সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং বাণিজ্য-বিনিয়োগ সহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশের সঙ্গে একত্রে কাজ করার আগ্রহ ব্যক্ত করেন।

চিলির সমবর্তী দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুননেসা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে চিলি ও বাংলাদেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমির মধ্যে তরুণ কূটনৈতিকদের ডিপ্লোম্যাটিক ট্রেনিংয়ের বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এছাড়া চিলির ফরেন সার্ভিস একাডেমী ‘আন্দ্রেজ বেলো’-তে পররাষ্ট্র সচিব-মাসুদ বিন মোমেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে বক্তব্য করেন।

এনআই/এসকেডি