নিষেধাজ্ঞা থাকায় মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন করায় মামলার কবলে পড়তে হচ্ছে চালকদের/ ছবি: ঢাকা পোস্ট

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মোটরসাইকেলে যাত্রী বহন তথা রাইড শেয়ারিং বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন মোটরসাইকেলে যাত্রী বহন করে জীবিকা নির্বাহ করা হাজার হাজার চালক। ফলে এখন অনেক মোটরসাইকেল চালক প্রকাশ্যে যাত্রী পরিবহন না করে একপ্রকার গোপনে চুক্তিভিত্তিকভাবে করছেন। এতে প্রায়শই এসব মোটরসাইকেল চালকদের মোটা অঙ্কের জরিমানা ও মামলার মুখে পড়তে হচ্ছে।

চালকরা বলছেন, যেখানে রিকশা, সিএনজি, বাসসহ সবধরনের যানবাহন চলাচল অনেকটাই স্বাভাবিক এবং ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলেও দুজন আরোহী চলাচল করতে পারছেন, সেখানে রাইড শেয়ারিং বন্ধ রাখা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। পেটের দায়ে অনেকেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চুক্তিভিত্তিক যাত্রী পরিবহন করছেন। এতে করে একদিকে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। অন্যদিকে, চুক্তিতে চলার প্রবণতাও তৈরি হচ্ছে চালকদের। এছাড়া মামলার ভয়তো রয়েছেই।

সরেজমিনে রাজধানীর শুক্রাবাদ, কলাবাগান, সায়েন্স ল্যাব এবং নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের বিভিন্ন মোড়ে মোটরসাইকেল নিয়ে অপেক্ষা করছেন চালকরা। যাত্রীরা গন্তব্যস্থল বলার পর দর-কষাকষি করে ভাড়া নির্ধারণ করা হচ্ছে।

আনিসুল ইসলাম নামের এক মোটরসাইকেল চালক বলেন, ‘ডেইলি ইভেন্টে চুক্তিভিত্তিক কাজ করতাম। বেশ ভালোই ইনকাম হতো। কিন্তু বিপত্তি বাধে গত বছর। হঠাৎ করোনার সংক্রমণের কারণে দীর্ঘসময়ের লকডাউনে সব কাজ বন্ধ হয়ে যায়। জমানো টাকায় কয়েকদিন চললেও আয় না থাকায় টানাপোড়ন শুরু হয়। উপায়ন্তর না পেয়ে ঢাকা আসি কাজের খোঁজে।’

তিনি বলেন, ‘’কিন্তু অনেক খুঁজেও স্থায়ী চাকরির ব্যবস্থা হয়নি। শেষমেষ পরিচিত একজনের পরামর্শে টাকা ধার করে মোটরসাইকেল কিনে রাইড শেয়ারিং সার্ভিসে যুক্ত হই। কিন্তু আবারও বাধা সেই করোনা। সবকিছু স্বাভাবিক চললেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বাইক রাইড শেয়ারিং সার্ভিসে। এরপরও পেটের দায়ে রাস্তায় নেমেছি। কিন্তু সড়কে জরিমানা আর মামলার টাকা পরিশোধ করেই কুলাতে পারছি না।’

শুধু আনিসুলই নয়, বরং একমাত্র আয়ের উৎস রাইড শেয়ারিং বন্ধ হওয়ায় মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে অসংখ্য মোটরসাইকেল চালকদের।

গিয়াস উদ্দিন নামের আরেক চালক বলেন, ‘রাস্তায় সবকিছুই চলছে। আর আমরা যখনই মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় উঠছি পুলিশ আমাদের নামে মামলা দিচ্ছে। গত কয়েকদিনে পাঁচ হাজার টাকার মামলার মুখে পড়েছি। সারাদিনে যা ইনকাম করি, এতে পরিবার পরিজন নিয়ে চলব নাকি মামলার টাকা পরিশোধ করব?’

দ্রুত নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাইড শেয়ারিং সার্ভিস চালু করার এবং অহেতুক মামলা বন্ধ করার দাবিও জানান তিনি।

গত কয়েকদিনে মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং সার্ভিস চালু করার দাবিতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন মোটরসাইকেল চালকরা।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-পরিদর্শক সার্জেন্ট মীর সবুজ বলেন, ‘প্রাথমিক অবস্থায় আমরা তাদের সচেতন করতে চেষ্টা করেছি। এরপরও এখন অনেকেই নিষেধ অমান্য করে লুকিয়েই যাত্রী পরিবহন করার চেষ্টা করছেন। তাদেরকে আমরা মামলার আওতায় আনছি।’

উল্লেখ্য, দেশে করোনার প্রকোপ ঠেকাতে সাত দিনের কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে কার্যকর হওয়া এ নিষেধাজ্ঞার আজ চতুর্থ দিন চলছে। এটি চলবে আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত। এ সময়ে গণপরিবহন বন্ধ থাকা ঘোষণা দেওয়া হলেও সরকারি সিদ্ধান্তে তা আজ থেকে চালু হয়েছে। যদিও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এদিকে, আগামীকাল থেকে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খুলে দেওয়া হচ্ছে শপিংমলও।

আরএইচটি/এফআর