দীর্ঘ সময় ধরে একজন পাঠককে পাঠের মধ্যে নিমগ্ন রাখার ক্ষমতা ও কৌশল একজন লেখকের মধ্যে থাকতে হয়। বিশেষ করে উপন্যাসিকদের এই গুণাবলী থাকা আবশ্যক। টানটান উত্তেজনা, কৌতূহল ও প্রবল আকর্ষণে একজন পাঠক পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা পাঠ করে যান নিরবিচ্ছিন্নভাবে।

মাহফুজা হাসান মাজহারের উপন্যাস ‘অতঃপর ভালোবাসা’ পাঠ করতে গিয়ে তার লেখার দক্ষতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। একই সঙ্গে প্রবলভাবে আকড়ে ধরেছে প্রতিটি বাক্য আর উপন্যাসের চরিত্রগুলো। একশ আটাশ পৃষ্ঠার এ উপন্যাসটি পঁচিশটি পর্বে বিভক্ত করেছেন উপন্যাসিক মাহফুজা। তিনি একটি পর্বের সঙ্গে আরেকটি পর্বের এমনই যোগসূত্র তৈরি করেছেন যে একটি পর্ব বাদ দিয়ে অন্য পর্বটি পাঠ করলে পাঠের আনন্দ বা পাঠটি অসম্পূর্ণ হয়ে যাবে।

আহিল এবং আয়েশা এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র। চরিত্র দুটিকে নায়ক-নায়িকাও বলা যায়। বাংলা উপন্যাসের গঠন বা বিষয়বস্তু নির্বাচনের ক্ষেত্রে উপন্যাসিকরা যে গতানুগতিক পথে হাঁটতে চান সেই পথে না গিয়ে মাহফুজার মধ্যে যে একটি নতুন পথ তৈরির চেষ্টা রয়েছে তাকে স্বাগত জানাতেই হয়।

আহিল মদ্যপ, রাগী, স্বৈরাচারী কিন্তু ভালোবাসার কাঙ্গাল। ভালোবাসার জন্য সে সব করতে পারে। এমনকি তার ভালোবাসার মানুষ আয়েশাকেও সে শারীরিক, মানসিক আঘাত দিতে দ্বিধাবোধ করে না। আয়েশাকে পাওয়ার জন্য সে আমেরিকা থেকে ছুটে আশে। জোর করে আয়েশাকে বিয়ে করে। আয়েশার সুখের জন্য রাতকে দিন, দিনকে রাত বানাতে পারে।

আহিল ও আয়েশার ভালোবাসার মধ্যে নানা রকম ষড়যন্ত্র লক্ষণীয়। আর এই ষড়যন্ত্রের সূত্রপাত আয়েশার পরিবার থেকে। আয়েশার দাদা যখন জানতে পারে আয়েশার চাচা একজন মাদক ব্যবসায়ী, তখন আয়শার চাচাকে ত্যাজ্যপুত্র করে আয়াশার বাবাকে সব সম্পত্তির মালিক করে দেন আয়শার দাদা। এরপর শুরু হয় আয়শার চাচার নানা রকম ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয় আয়েশা ও আহিলের পরিবার ও তার প্রায় প্রতিটি বন্ধু, স্বজন।

পরিবারের প্রতিটি সদস্যের আতঙ্ক, উদ্বেগ আর ভুল বোঝাবুঝি উপন্যাসকে এগিয়ে নেয়। একবার মনে হবে এই বুঝি সবাই মিলে একটি সুখী পরিবার হয়ে উঠল আবার পরক্ষণেই সেই সুখ কাঁচের মতো ভেঙে খান খান হয়ে যায় কারও বিশ্বাসঘাতকতায়।

ছোট ছোট বাক্য, যথোপযুক্ত সংলাপ বা কথোপকথন চিত্রনাট্যের মতো উপভোগ্য করে তুলেছে উপন্যাসকে। উপন্যাসিক মূল গল্পকে এগিয়ে নিতে সবসময়ই তৎপর ছিলেন। অতিকথন, মেদবহুল বা চরিত্রগুলোকে দুর্বল না করে এবং পাঠকের দিকে সর্বদা সচেতন থাকার প্রয়াস উপন্যাসে লক্ষণীয়।

উপন্যাসটি প্রকাশ করেছে সাহিত্যদেশ। সোহানুর রহমান অনন্তের করা নান্দনিক প্রচ্ছদের দুইশত বিশ টাকা মূল্যের উপন্যাসটি পাঠক প্রিয়তা পাবে বলে প্রত্যাশা এই জন্য যে, উপন্যাসিকা মাহফুজা হাসান মাজহার উপন্যাসের প্রতিটি বর্ণে বর্ণে ভালোবাসার শক্তি আবিষ্কার করেছেন শৈল্পিকভাবে।

এসএসএইচ