ফরিদা বেগমকে নিয়ে প্রায় ৬০-৭০ কিলোমিটার বেগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নতুন ভবনের নিচে আসলো একটি অ্যাম্বুলেন্স। চালক ব্রেক চাপার সঙ্গে সঙ্গেই হাতে ফাইল নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের সামনের দরজা খুলে বের হলেন ফরিদার ছেলে। পেছন থেকে বের হলেন ফরিদার বোন। দুজনেরই ছোটাছুটি করোনা ইউনিটে। অ্যাম্বুলেন্সে আছেন শুধুমাত্র ফরিদা। তার সঙ্গে দাঁড়ানো অ্যাম্বুলেন্স চালক।

ফরিদা বেগমের পাশেই অক্সিজেন সিলিন্ডার, মুখে অক্সিজেন মাস্ক। পেট দেখে বোঝা যাচ্ছিল জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছিলেন। ১৫ মিনিট পার হয়ে গেল, ফরিদা তখনো বাইরে অ্যাম্বুলেন্সে। করোনা ইউনিট থেকে বেরিয়ে এলেন তার ছেলে ও বোন। সঙ্গে ছিলেন একজন স্বাস্থ্যকর্মী। তিনি বললেন, ‘ভেতরে বেড ফাঁকা নেই। আপাতত এখানেই রাখুন। বেড ফাঁকা হলে আমরা ভেতরে ডাকব।’

রোববার দুপুরে ঢামেকের নতুন ভবনের করোনা ইউনিটের সামনে এমন ৪টি অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। ভেতরের ৪ জনই করোনা আক্রান্ত হয়ে অথবা উপসর্গ নিয়ে এখানে এসেছেন। তবে তারা ভর্তি হতে পারছিলেন না।

ফরিদার ছেলে (নাম প্রকাশ করতে চাননি) ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার মা স্যার সলিমুল্ল্যাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তিনি কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন। সেখানে তার ডায়ালাইসিস চলছিল। তবে হঠাৎ করেই তার মধ্যে করোনার উপসর্গ দেখা দেয়। তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তিনি কাউকে চিনতে পারছিলেন না। এরপর আমরা অক্সিজেন দিয়ে তাঁকে এখানে নিয়ে আসি। তবে ভেতরে বেড নেই বলে অ্যাম্বুলেন্সেই তাঁকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে।

গরমের মধ্যে প্রায় ১ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্সেই ছিলেন ফরিদা। ১ ঘণ্টা পর তাঁকে ভেতরে নেয়া হয়।

কেরানীগঞ্জের বসুন্ধরা আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢামেকে এসেছেন মিসির আলী নামে ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধ। অক্সিজেন দিয়ে তাকেও ৩০ মিনিট ঢামেকের বাইরে আদ-দ্বীন হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। তার করোনার লক্ষণ ও উপসর্গ ছিল। ৩০ মিনিট অপেক্ষার পর তাকে স্ট্রেচারে করে হাসপাতালের ভেতরে নেওয়া হয়।

ঢাকার মুন্সিগঞ্জের লোহজং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আসা আনোয়ার হোসেনকে ১ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে অক্সিজেন নিতে দেখা যায়। দুপুর ১টা পর্যন্ত তিনি অ্যাম্বুলেন্সেই ছিলেন।

ঢামেকের নতুন ভবনের ভেতরে গিয়ে অসংখ্য রোগী ও তাদের স্বজনদের ভিড় দেখা যায়। ভবনের বাইরে একটি আলাদা রুমে ‘জ্বর-কাশি ও শ্বাসকষ্ট’ রোগীদের বসার জায়গা ছিল। সেখানেও রোগীদের ভিড় দেখা যায়।

ঢামেকে খালি নেই বেড

করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলের নতুন ও পুরাতন বার্ন ইউনিট ভবনে মোট ৮০০টি বেড রয়েছে। এছাড়া ২০টি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) এবং ৪০টি হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট (এইচডিইউ) আছে। ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রি. জে. নাজমুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আইসিইউ এবং এইচডিইউতে কোন সিট খালি নেই। করোনা ইউনিটে গাইনি এবং সার্জারি বিভাগের কিছু সিট খালি আছে, তবে সেগুলোতে অন্য করোনা রোগী ভর্তি করা হয় না। কারণ হঠাৎ করেই গর্ভবতী করোনা রোগী বা সার্জারির রোগী আসলে তাদেরকে সেখানে ভর্তি রাখা হয়।’

ঢামেকে কর্মরত এক নার্স ঢাকা পোস্টকে বলেন, বর্তমানে সাধারণ করোনা ইউনিটে কোনো বেডই খালি নেই। কোনো রোগী মারা গেলে অথবা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেই কেবল নতুন রোগীদের বেড দেওয়া সম্ভব।

দেশের করোনা পরিস্থিতি

সর্বশেষ শনিবার ১০ এপ্রিল দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে দেশে নতুন করে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৩৪৩ জন। সবমিলিয়ে দেশে এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৯৩৭ জনে। মোট মৃত্যু হয়েছে ৯ হাজার ৬৬১ জনের। 

এআর/জেএস