বিএনপি-জামায়াতের ডাকা তৃতীয় দফার অবরোধের প্রথম দিনে সদরঘাটে বেড়েছে যাত্রীর চাপ। এছাড়া বেড়েছে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী লঞ্চের সংখ্যাও। এদিন সদরঘাটে দেখা গেছে হাঁক-ডাক দিয়ে যাত্রী ডাকার সেই পুরোনো চিত্র। যাত্রীরা বলছেন, অবরোধে সড়ক পথের চেয়ে নৌপথে ঝুঁকি কম। আর সে কারণে এ পরিস্থিতিতে যাতায়াতে লঞ্চ ভ্রমণকেই বেছে নিচ্ছেন তারা। 

বুধবার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর সদরঘাটে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, সদরঘাটে অবরোধের তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। সবাই নিজ নিজ কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত সময় পার করছেন। লঞ্চগুলো সঠিক সময়ে ছেড়ে যাওয়ায় স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করছেন যাত্রীরা। 

তাছাড়া, অবরোধে আগের তুলনায় লঞ্চের নিরাপত্তার বিষয়টি জোরদার করেছে কর্তৃপক্ষ। বাড়তি নিরাপত্তা হিসেবে লঞ্চের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় কেবিনের যাত্রী ব্যতীত কোনো সাধারণ যাত্রীকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অবরোধে সড়কে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করার ভয় রয়েছে। তবে নৌপথে এ ধরনের ঘটনা তেমন একটা না ঘটায় অবরোধে লঞ্চে ভ্রমণকে বেশি নিরাপদ মনে করেন তারা।

জেসমিন নামের ভোলাগামী এক যাত্রী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি উত্তরা থেকে সদরঘাটে এসেছি। রাস্তায় গাড়ি ও যাত্রী তেমন না থাকলেও সদরঘাট এসে দেখি সেই পুরোনো চিত্র। কিছুদিন যাবৎ গাড়িতে যে পরিমাণে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, তাতে একটা আতঙ্কের মধ্যে ছিলাম। লঞ্চে তো তেমন কোনো সংবাদ এখনো পাইনি। তাই লঞ্চে যাত্রাটাই আমাদের কাছে নিরাপদ হচ্ছে।

বরিশালগামী যাত্রী রবিউল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, অবরোধ চলছে অবরোধের মতো। এ  অবরোধ পালন করলে তো আমাদের জীবন বাঁচবে না। আমাদের জীবনের প্রয়োজনে বের হতেই হবে। তাই আতঙ্ক নিয়েই আমরা বের হয়েছি। গাড়িতে হুট করে যেভাবে আগুনের ঘটনা ঘটছে... সেজন্য আমরা লঞ্চকেই নিরাপদ মনে করছি।

এদিকে, পারাবত ১২ লঞ্চের সুপারভাইজার নজরুল ইসলাম বলেন, অবরোধের প্রভাব কিছুটা হলেও আমাদের লঞ্চে পড়েছে। এমনিতেই পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় পর লঞ্চ ব্যবসায় খুব খারাপ সময় যাচ্ছে। এর মধ্যে আবার অবরোধ, তাতে আরও বেহাল দশা হচ্ছে। তবে আজকে অবরোধ হওয়া সত্ত্বেও যাত্রী কিছুটা বেড়েছে। লঞ্চের কেবিন বুকিংয়ের পরিমাণ ৭০ শতাংশের মতো হচ্ছে। 

ঘাট সূত্রে জানা যায়, বিএনপির প্রথম দফার অবরোধে গত ১ নভেম্বর মাত্র ২৮টি লঞ্চ সদরঘাট থেকে দেশের বিভিন্ন রুটে ছেড়ে যায়। একই দিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সদরঘাটে আসে ২৬টি লঞ্চ। তবে আজ অবরোধ থাকলেও ঘাট ছেড়ে যাওয়া ও ঘাটে আসা লঞ্চের সংখ্যা বেড়েছে।

আজ সারা দিনে বিভিন্ন রুট থেকে ৩৩টি লঞ্চ সদরঘাটে এসেছে। আর সদরঘাট থেকে দেশের বিভিন্ন রুটে ছেড়ে গেছে ৩৫টি লঞ্চ। কিন্তু অবরোধ ব্যতীত প্রতিদিন সদরঘাট থেকে বিভিন্ন রুটে নিয়মিত ৬৫-৭০টি লঞ্চ চলাচল করত। 

অবশ্য, যাত্রী সংকটে ঢাকা থেকে পাতারহাট, বোরহানউদ্দিন, খেপুপাড়া ও বরগুনা রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ।

এমএল/কেএ